সুদান নিয়ে মাথাব্যথা সৌদির, যুদ্ধ না থামলে কোন পরিণতি অপেক্ষা করছে?

।। প্রথম কলকাতা ।।

সৌদির আসল স্বার্থ লুকিয়ে রয়েছে সুদানের মাটিতে। কিন্তু, ভেবে দেখেছেন সুদানের লড়াই নিয়ে সৌদি আরবের এত মাথাব্যথা কেন? স্বার্থ ছাড়া ব্রত হয় না। সৌদির কোন স্বার্থ লুকিয়ে এতে? কীসের ভয় পাচ্ছে সৌদি? আদৌ সৌদি মধ্যস্থতা কি কাজ করবে? সুদানের সংঘাত কি সৌদির জন্য দুঃস্বপ্ন? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সুদানের এই সংঘাত সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক প্রজেক্ট গুলোর জন্য বিরাট বড় রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর এরপরই অলরেডি যে বিষয়গুলো নিয়ে কৌতুহল দানা বাঁধতে শুরু করেছে, সেটা হলো নিওম সিটি কি তাহলে এবার ভেস্তে যেতে চলেছে? এমন কোন জায়গায় তৈরি হয়েছে এই নিওম সিটি? সুদানের সাথে নিওম সিটির কি সম্পর্ক? এই রিপোর্টে উত্তরগুলো পেয়ে যাবেন, তার আগে বুঝতে হবে একটাও যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি কার্যকর হতে দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি, মিশর সকলেই চেয়েছে যুদ্ধ বন্ধ হোক। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য সব পক্ষের তুলনায় সৌদিদের মধ্যস্থতার উদ্যোগ অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। লড়াইরত দুই পক্ষকে রিয়াদে এনে মীমাংসার টেবিলে কিন্তু বসাতে পেরেছে এই সৌদি সরকারই। সৌদির মধ্যস্থতায় মুখোমুখি বসে কথা বলতে শুরুও করেছে দুইপক্ষের প্রতিনিধিরা।

আশার কথা হলো, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সুদানের বিবাদমান দুই পক্ষই সৌদি আরবের মধ্যস্থতা নিয়ে আগ্রহী কিন্তু কেন? মানে সৌদির এতো আগ্রহ কীসের? আগে অবস্থানটা বুঝুন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণটা বুঝুন। সুদান আর সৌদি আরবের সম্পর্কের একটা ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদান অনেকটাই ব্যতিক্রমী একটা দেশ এটা আফ্রিকার দেশ ঠিকই, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো সুদানের রাজনীতি এবং অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি, বিশেষ করে সৌদি আরব অন্যদিকে, সুদান সাহেল, হর্ন অব আফ্রিকা এবং লোহিত সাগর অঞ্চলেরও অংশ কিন্তু তারপরও সুদানের সমাজ ও রাষ্ট্রের একটি বড় অংশ, বিশেষ করে আরবি ভাষাভাষী সুদানি শাসক এবং অভিজাত শ্রেণীর সাথে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি, যে চারটে দেশের মধ্যস্থতায় গত বছর সুদানে সামরিক শাসন থেকে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের চুক্তি হয় তাতে আফ্রিকার কোনো দেশ না থাকলেও রয়েছে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেক্ষেত্রে সুদানের সঙ্গে সৌদি আরবের যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিক সব দিক থেকে স্বার্থ জড়িয়ে থাকবে সেটাই তো স্বাভাবিক।

ভালো করে বুঝুন বিষয়টা, একমাত্র তেল ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের যেসব প্রজেক্ট সৌদি সরকার নিয়েছে তার অধিকাংশই লোহিত সাগর উপকূল ঘেঁষে। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক শহর নিওম সিটিও সেখানেই। যা সুদানের লোহিত সাগর উপকূলের কাছাকাছি। ফলে, সৌদিরা ভয় পাচ্ছে সুদানের সংঘাত আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে লোহিত সাগর উপকূলে তাদের প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ আকর্ষণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

কোন কোন ক্ষেত্রে বিপদ আসতে পারে? ২০১৯ সালে বশিরের উৎখাতের পর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৃষিতে সমৃদ্ধ সুদানে পা রাখার সুযোগ হয় সৌদি আরবের
গত বছর সৌদি, সুদানের কৃষি এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়নে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইয়েমেনের সোকোটরা বন্দর থেকে হর্ন অব আফ্রিকার সোমালি-ল্যান্ড পর্যন্ত সাগরপথে বাণিজ্যিক নৌ পরিবহনের ওপরেও প্রাধান্য বিস্তার করতে আগ্রহী তারা। ডিসেম্বরে আবুধাবি বন্দর কর্তৃপক্ষ পোর্ট অব সুদানের ২০০ মাইল উত্তরে একটা নতুন বন্দর নির্মাণে ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। ফলে, সৌদির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুদানের সংঘাত বিরাট বড় এফেক্ট ফেলতে পারে। এটা পরিষ্কার। কিন্তু না, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর স্বার্থ নয়। রয়েছে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তাজনিত, স্বার্থও।বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি আরব কোনোভাবেই চায়না সুদানে যাতে ইসলামপন্থী কোনো সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই, আরব বসন্ত অর্থাৎ গণবিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের পতনের পর সুদানে কোনও নির্বাচন হয়নি। এতে কি লাভ?

আমেরিকার সহযোগিতা নিয়ে যাতে সৌদি আরব নির্বাচনের বদলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন অনির্বাচিত সরকার বসাতে পারে। সেক্ষেত্রে, এখন সৌদি ভয় পাচ্ছে দাগালো হারলে, আর বুরহান নির্বাচনের পথে হাঁটলে বিপদ। যদি, সেই নির্বচনে ইসলামপন্থীরা জিতে যায়। আর দেখতে হচ্ছে না। প্রধানত এই কারণেই সৌদিরা মধ্যস্থতা করতে উঠেপড়ে লেগেছে যাতে হেমেটি দাগালোর আরএসএফ টিকে থাকতে পারে। কিন্তু, কোটি টাকার প্রশ্ন হল সৌদির মধ্যস্থতা কি আদৌ কাজে আসবে? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আপোষের বদলে দুই পক্ষ মীমাংসা বৈঠকে নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে, সুদানের দুই জেনারেলকে মীমাংসায় রাজী করানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এমনিতেই, সুদান ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য‌ হয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ, প্রায় ছয়শো মানুষ মারা গেছে। মানবিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে। আর, মীমাংসা টেবিলে ফলাফল শূণ্য হলে সংঘাত বন্ধ হবে না, চলবে এবং যুদ্ধ আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। বিষয়টা ঠেকানো না গেলে সাড় চার কোটি জনসংখ্যার খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ সুদান একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর ঘটনাপ্রবাহ সেভাবে গড়ালে সৌদি আরবের জন্য যে তা হবে চরম এক দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠবে, তা বেশ স্পষ্ট।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version