Saudi Arabia Economy: ফুলেফেঁপে উঠছে সৌদি আরব, পবিত্র হজ-ই ঘুড়িয়ে দিলো অর্থনীতি !

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

Saudi Arabia Economy: সৌদি আরব তেল বিক্রির থেকেও নাকি বেশি আয় করে হজ যাত্রা থেকে? কি , শুনেই অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটা একেবারেই আকাশ কুসুম ব্যাপার নয়। দিনের পর দিন তরতরিয়ে বেড়ে চলা সৌদির অর্থনীতি বলে দিচ্ছে, এই হজ যাত্রা থেকে ঠিক তাদের কতটা আয় হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিরা মজবুত করছে সৌদির ভিত। তাহলে কি এবার দেশটা তেল বিক্রি ছেড়ে দেবে? বছরের মাত্র এই একটা সময় অর্থাৎ হজ যাত্রায় মধ্যেই রয়েছে সৌদির উন্নতির চাবিকাঠি। ঠিক কত আয় হয়? জানলে চমকে যাবেন। হজযাত্রীদের জন্য সৌদি চালু করে ফেলল উড়ন্ত ট্যাক্সি। ঘোড়ার রেসের মতো দৌড়াচ্ছে সৌদির অর্থনীতি। হজ যাত্রা কীভাবে পাল্টে দিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশকে?

 

প্রতিবছর গোটা বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা হজ যাত্রার জন্য সৌদি আরবে যান। আর সৌদি আরবের অর্থ উপার্জনের অন্যতম বড় উৎস কিন্তু এই হজ। সৌদির মোট রাজস্বের প্রায় ৩০% আসে শুধুমাত্র এই হজযাত্রা থেকে। হজ আর বছর ভোর ওমরাহ থেকে সৌদির আয় বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। সৌদির অর্থনীতিতে তাই মুসল্লিদের অবদান অনেকটা বেশি। তাই গোটা বিশ্বের কাছে প্রতি বছর হজের পর কৌতুহল মিশ্রিত একটা প্রশ্ন ওঠে। এই হজ আর ওমরাহ থেকে ঠিক কতটা পরিমাণে অর্থ পেল সৌদি আরব? বলা হয়, অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের যা রাজস্ব আসে তার থেকেও নাকি বেশি অর্থ পায় হজ থেকে। যদিও সেই প্রকৃত আয় কত, তার সঠিক হিসাব কোনদিনও জানা যায়নি। একটা অনুমান আর পরিসংখ্যানে উপর নির্ভর করে হজের মোট আয় ধারণা করা হয়। শুধুমাত্র হজ যাত্রাকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবে ফুলেফেঁপে ওঠে ছোট বড় বহু শিল্প। আসলে এই অর্থের বড় অংশটাই আসে ট্যারিফ ফি, পারমিট ফি, ট্যাক্স প্রভৃতি খাত থেকে।

 

শুধু তাই নয়, হজ যাত্রীরা আসেন মানে তারা যে হোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন কিংবা খাবারের মতো পরিষেবার পিছনে ব্যয় করেন সেখান থেকেও কিন্তু সৌদির মোটা টাকা লাভ হয়। একটা সময় সৌদিতে বাইরের দেশের মানুষ খুব একটা যেতেই পারতেন না। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে এক দশক ধরে বন্ধ ছিল বিদেশি পর্যটকদের যাওয়া আসা। পরবর্তীকালে সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান আল সেই নীতিতে পরিবর্তন আনতে সৌদির দরজা খুলে যায় গোটা বিশ্বের কাছে। বিশ্লেষকদের মতে, একদিন সৌদি আরবের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হবে নাকি ধর্মীয় পর্যটন। তবে বর্তমান পরিস্থিতির উপর বিশ্লেষণ করলে ভবিষ্যতে সেই দিন হয়তো আর বেশি দেরি নেই। বিশেষ করে পর্যটকদের উপর গুরুত্ব দিয়ে সৌদি নিজেকে ঢেলে সাজাচ্ছে। দেশটায় ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইন্স, পর্যটন খাতে সম্প্রসারিত হয়েছে প্রচুর বাণিজ্যিক সুবিধা। ঠিক গত বছর হজের সময় মক্কার হোটেল গুলো প্রায় শতভাগই বরাদ্দ হয়ে গিয়েছিল। গতবছরের রমজানে হোটেলগুলো বুক হয়েছিল প্রায় ৮০ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু দর্শনার্থীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বেরিয়ে চলেছে, তাই নির্মাণ আর আবাসন শিল্পের উপর একটু বেশি জোর দিচ্ছে দেশটা।

 

হজ যাত্রার জন্য সৌদিও বিপুল বিনিয়োগ করে। হাজিদের জন্য থাকে এলাহি ব্যবস্থা। এই তো, এই বছরই উড়ন্ত ট্যাক্সের ব্যবস্থা করেছে। হজ যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে এই যাতায়াতের জন্য সৌদিতে চালু রয়েছে ১০০টি উড়ন্ত ট্যাক্সি। এটি মূলত একটি ইলেকট্রিক ফ্লাইং ট্যাক্সি। সৌদি আরব চলতি বছরের শুরুতেই এই ট্যাক্সি চালুর কথা জানিয়েছিল। চলতি বছরে হজ যাত্রীদের সেবার উপলক্ষে যে এক গুচ্ছ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার মধ্যে এই ট্যাক্সিটি অন্যতম। সৌদিতে ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্ব থেকে পৌঁছে গিয়েছেন প্রায় ১৫ লক্ষ হাজ যাত্রী। এছাড়াও সঙ্গে রয়েছে ওই দেশটির জনগণ। মূলত সৌদি আধুনিক পরিবহণ সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্মুখসারির দেশ হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও হজ যাত্রীদের জন্য থাকে বিপুল আয়োজন। মক্কার মাঝে একটি ছোট্ট এলাকা হলো মিনা। সেখানেই হজ যাত্রীদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয় অস্থায়ী শৌচালয় থেকে থাকে স্নানঘর পর্যন্ত। হজ যাত্রীদের যাতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা না হয় সেদিকে পুরো খেয়াল রাখে সৌদি সরকার। এই এলাকার তাঁবুতে বিদ্যুৎ ইন্টারনেট পরিষেবারও ব্যবস্থা করা হয়। তীব্র গরমে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য নিযুক্ত থাকে প্রায় হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী।

 

প্রতিবছর হজ যাত্রা মানেই সৌদির ছোট ছোট যে ব্যবসা গুলো রয়েছে, তাদের আয়ের অন্যতম উৎস এটি। যার মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে থাকার ব্যবস্থা, পরিবহন আর উপহার সামগ্রী বিক্রি। মদিনায় কমপক্ষে প্রায় ১৮ হাজার হোটেল রুম রয়েছে। সৌদির লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজারে উন্নীত করা। সোজা কথায়, সৌদি এখন যে টার্গেট নিয়েছে, সেই অনুযায়ী হয়তো ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি হোটেল রুম থাকবে মক্কায়। সৌদির মূল লক্ষ্য, ২০৩০ সালটাকে টার্গেট করে একটু একটু করে নিজেদেরকে সাজিয়ে তোলা। তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় তিন কোটি মানুষের জন্যও হজ আর ওমরাহ পালনের সুযোগ তৈরি করতে পারে। যেভাবে প্রতিবছর হজ আর ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে সেদিকে তাকিয়ে পর্যটকদের জন্য একটা উন্নত পরিকাঠামো অত্যন্ত দরকার। আর করবে নাইবা কেন, এখান থেকে তো আয় কম হয় না। ২০১৮ সাল নাগাদ শুধুমাত্র হজযাত্রা থেকে সৌদি আরব আয় করেছিল প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। এখন সৌদির রাজস্ব আয় আরো বেশি হবে। মক্কার চেম্বার অফ কমার্সের তথ্য অনুযায়ী, হজ যাত্রায় বিদেশী মুসল্লিদের মাথাপিছু ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে চার হাজার ডলার।

 

সেক্ষেত্রে সৌদিবাসীদের ক্ষেত্রে খরচ হয় দেড় হাজার ডলার। এখানেই তো রয়েছে বড় ফারাকটা। হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৩০০০ ডলারের ফারাক। আর তাই হয়তো ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পর্যটনকে কেন্দ্র করে তেল সম্পদের উপর নির্ভরতাটা একটু কমিয়ে দিয়েছেন। সৌদিকে অন্যরকম ভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। যেখানে কিন্তু অবশ্যই বড় ভূমিকা রয়েছে হজ আর ওমরাহ কেন্দ্রিক আয়ের। প্রতিবছর সৌদি আরবে গড়ে কুড়ি লক্ষ মুসল্লি হজ করতে যান। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক হজের জন্য ব্যয় হয় প্রায় তিন হাজার থেকে সাত হাজার ডলার পর্যন্ত। হজের প্যাকেজ অনুসারে খরচের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০৩২ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ওমরাহ ও হজ যাত্রার পাশাপাশি পর্যটন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটার আয় হবে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তাইতো শুধুমাত্র দর্শনার্থীদের সেবা দেওয়ার পরিকল্পনায় নানান কৌশলগত পরিকল্পনা নিচ্ছে দেশটা।

 

সৌদির সামনে এখন ভিশন-২০৩০। আর সেই টার্গেটকে সামনে রেখে দেশটা এখন তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে চাইছে। কারণ আয়ের পথ শুধুমাত্র তেলের গণ্ডিতে আটকে রাখলে হবে না, তা বুঝে গিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সত্যি কথা বলতে, বিগত কয়েক বছর ধরে যেভাবে দেশটা পর্যটন শিল্পের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে আর সফলতা পাচ্ছে, তাতে সৌদি একদিন পর্যটনের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে উঠবে। দেশটার জিডিপির প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশই আসে শুধু পর্যটন থেকে। শুধু তাই নয়, আরব দেশগুলোর মধ্যে পর্যটনের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে দেশটা। ২০২২ সাল নাগাদ দেশি এবং বিদেশী মিলে সৌদির মোট পর্যটন সংখ্যা ছিল প্রায় ৯ কোটির বেশি।। যতদিন যাবে সেই সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে। কিন্তু মূল সমস্যাটা হলো, এই বিশাল সংখ্যক দর্শনার্থী কিংবা পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সেবা দেওয়া। বিষয়টা সৌদি আরবের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ একের পর এক অত্যাধুনিক পরিকল্পনা নিয়েই চলেছে। এবার শুধু লক্ষ্য পূরণ হওয়ার অপেক্ষা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version