।। প্রথম কলকাতা ।।
Kali Temple in Bangladesh: ভক্তের পরম আশ্রয়ের জায়গা। বাংলাদেশের এই সতীপীঠ। মা এখানে ভীষণ জাগ্রত। কাউকে খালি হাতে ফেরান না। মানত করলে পূরণ হয় মনের ইচ্ছা। মন্দিরের কোনায় কোনায় অলৌকিক রহস্য। এখানেই পড়েছিল দেবী সতীর হাতের তালু। বাংলাদেশের বুকে শত শত বছরের পুরনো এই মন্দির সম্পর্কে রয়েছে আশ্চর্য কাহিনী।
সতী পীঠ কেন গড়ে উঠেছে, এই নিয়ে পৌরাণিক কাহিনী তো আপনি জানেনই। বাপের বাড়িতে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞের আগুনে প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন সতী। সেই রাগে ক্ষোভে অপমানে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন মহাদেব। রসাতলে যেতে বসেছিল গোটা সৃষ্টি। ভয়ঙ্কর প্রলয় আর ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিষ্ণু ছাড়েন সুদর্শন চক্র। ছিন্নভিন্ন করে দেয় সতীর দেহ। সেই দেহাবশেষের ৫১ টি অংশ পড়েছিল ৫১ টি জায়গায়। প্রত্যেকটি জায়গায় গড়ে উঠেছে সতী পীঠ। যার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের সাতক্ষীরার এই স্থান। বলছি যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরের কথা। যার নাম শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও বেশ বিখ্যাত। বাংলাদেশে গেলে এই মন্দির থেকে ঘুরে আসেন অনেকেই।
জনশ্রুতি বলছে, এখানে নাকি পড়েছিল মায়ের হাতের তালু। মন্দিরটি রয়েছে শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। এখানে অলৌকিক কাহিনীর যেন শেষ নেই। সেই সময়কার হিন্দু রাজা প্রতাপাদিত্য নাকি অলৌকিক ভাবে পেয়েছিলেন মানুষের হাতের তালুর মত দেখতে একখণ্ড পাথর। সেই প্রস্তর খণ্ডের পাশে পড়েছিল টাটকা জবা ফুল। ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল জ্যোতির্ময়ী ছটা। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন এই মন্দির। তখন ছিল একশটি দরজা। শোনা যায়, সৌহার্দ্যের বার্তা দিতে রাজা প্রতাপাদিত্য মন্দিরের পাশাপাশি নির্মাণ করেন একটি মসজিদ এবং একটি গির্জা। পরবর্তীকালে মন্দির সংস্কার করেছিলেন লক্ষণ সেন এবং রাজা প্রতাপাদিত্য। মায়ের নামে দান করা হয় প্রায় ২০০ বিঘা জমি। তৈরি হয়েছিল দুর্দান্ত নাট মন্দির। মন্দিরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে সময়ের রক্তচক্ষু। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যত দিন গিয়েছে কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে সবই। মূল মন্দির ছাড়া অবশিষ্ট রয়েছে কয়েকটি স্তম্ভ। তবে জাগ্রত মন্দিরের মর্যাদা বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হয়নি। গেলেই দেখতে পাবেন, মন্দিরের বেদীতে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে বিগ্রহ।
আশ্চর্যের বিষয়, বিগ্রহের শুধুমাত্র মুখই দেখা যায়। গলার নিচে শ্রীহস্ত বা শ্রীচরণ আপনি দেখতে পাবেন না। মূর্তির বাকি অংশ আবৃত রয়েছে মখমলে। মায়ের মাথায় সোনার মুকুট গা ভরা নানান অলংকার। গলায় রক্ত জবার মালা। মন্দিরে যশোরেশ্বরীর পুজো হয় তন্ত্রমতে। মূর্তির সামনে কাঁসার থালা এবং মাটির পাত্রে থরে থরে সাজিয়ে দেওয়া হয় নৈবেদ্য। প্রতিবছর ধুমধাম করে হয় শ্যামা পুজো। পুজোর দিন দূর দূরান্ত থেকে উপস্থিত হন হাজার হাজার ভক্ত। এই মন্দির ভীষণ জাগ্রত। মানত করলে পূরণ হয় মনোবাঞ্ছা। মনের ইচ্ছা পূরণ হলে মন্দিরের বারান্দা থেকে উড়িয়ে দেয় জোড়া পায়রা। এটাই রীতি। বহু ধর্মের মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন উত্তরোত্তর বাড়ছে মা যশোরেশ্বরীর মহিমা। ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই মন্দিরে পুজো দিয়েছেন।
ইতিহাস আর কিংবদন্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী মন্দিরে। মন্দিরের বয়স প্রায় ৫০০ বছর । শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে নয়, এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম পুরাতাত্ত্বিক সম্পদও।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম