Iran-Israel conflict: ইসরায়েলে রকেট হামলা, শুরু হতে পারে যুদ্ধ বিরতি আলোচনা

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Iran-Israel conflict War: রাইসির মৃত্যুর পর নতুন করে ইসরায়েলে অ্যাটাক। হামাস আর ইরান মিলে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কষছে বড় ছক। গত সাত মাসের যুদ্ধে শেষ হয়ে যায়নি হামাস, প্রমাণ করে দিল। পাল্টা হামলা চালাল ইসরায়েলে। মাথায় হাত নেতানিয়াহুর। ইসরায়েলকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছে শত্রুরা। আবার নতুন করে শুরু হতে পারে যুদ্ধ বিরতি আলোচনা। এত সহজে মাথা নত করবে না হামাস, গাজার শেষ পরিণতি কী হবে তাহলে? ইসরায়েল জিতে গিয়েও কি শেষে হেরে যাবে হামাসের কাছে? ফিলিস্তিনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী এত শক্তি কোথায় পাচ্ছে? ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মস্ত বড় প্ল্যান ইরানের। রাইসির মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেই কি এত বড় হামলা?

 

ইরান-হামাসের মহাজোট, রাইসির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে ইসরায়েলের থেকে?

ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হাত মিলিয়েছে ইরান আর হামাস। গুঞ্জন উঠেছিল, রাইসির মৃত্যুর জন্য ইরান নাকি সন্দেহ করছে ইসরায়েলকে। যদিও ইসরায়েল প্রথম থেকেই বলে এসেছে, তেল আবিব এই দুর্ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। ওদিকে ক্ষোভে ফুঁসছে ইরানের সমর্থিত প্রক্সি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। রাইসির মৃত্যুর পর, তাহলে কি সরাসরি ইরান প্রতিশোধ নিতে চড়াও হল ইসরায়েলের উপর? আচমকা হামাসের রকেট হামলা ইসরায়েলে। সাইরেন বেজে উঠে তেল আবির জুড়ে, আতঙ্কে যত্রতত্র পালাতে থাকে ইসরায়েলি নাগরিকরা। তেল আবিবে রকেট হামলা করে হামাস বুঝিয়ে দিল, তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গাজা যুদ্ধ এখনই থামার নয়। গাজার ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে তারা ইসরায়েলের সামনে মাথা নত করবে না। রাইসির মৃত্যুর পর আয়াতুল্লাহু আলি খামেনির সঙ্গে বৈঠক করেন হামাসের নেতা। যেখানে দুজনে মিলে ঠিক করেছিলেন, ইসরায়েলকে হারাবে। আর নেতানিয়াহুর সেই হার তারা দেখবে একসাথে। তাহলে কি সেটাই হতে চলেছে?

 

তলে তলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কষে ফেলেছে কোন মস্ত বড় প্ল্যান! এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। হামাসের সশস্ত্র সংগঠন, আল কাশেম ব্রিগেড ইসরায়েলের তেল আবিবের উপর হামলা চালায়। ইসরায়েলের সামরিক সেনাবাহিনীর দাবি, গাজা থেকে উড়ে আসা হামাসের বেশ কিছু রকেট তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটকে দিয়েছে। তবে কয়েকটা রকেট কিন্তু ইসরায়েলের আকাশ সীমা পেরিয়ে টার্গেট করেছে লক্ষ্যবস্তুতে। ক্ষয়ক্ষতির খুব একটা বড় খবর নেই।। আর এই ঘটনার পরেই সতর্ক হয়ে যায়, তেল আবিবের মেডিখাল টিম। সাইরেন বাজিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয় ইসরায়েলি নাগরিকদের। ইসরায়েলও কিন্তু এখন বুঝে গিয়েছে, তারা আর নিরাপদ নয়। হামাস যে কোনো সময় ইসরায়েলের সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ শানাতে একদম প্রস্তুত। স্পষ্ট কথায়, গাজায় অসামরিক জনগণের উপর ইসরায়েলের বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করছে, তারই জবাব হলো সাম্প্রতিক এই ঘটনা। ইসরায়েল কিন্তু আন্তর্জাতিক নানান চাপের মুখে থাকা সত্ত্বেও গাজায় হামলা বন্ধ করেনি। যতদিন না পর্যন্ত হামাসকে নির্মূল করতে পারছে ততদিন পর্যন্ত যেন নেতানিয়াহুর শান্তি নেই। ওদিকে হামাস রুখে দাঁড়াতে পুরোদমে প্রস্তুত।

 

আর এই হামলা প্রমাণ করে দিল, দীর্ঘ সাত মাসের যুদ্ধের পরেও হামাসের কিন্তু ইসরায়েলে আক্রমণ করার ক্ষমতা রয়েছে। যখন প্রথমে সবাই ভেবেছিল, হয়তো হিজবুল্লাহ লেবানন থেকে এই আক্রমণ করেছে। কারণ হামাসের সক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলেই ভেবেছিল কিছু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাইতো এই ঘটনা বড় উদ্বেগের কারণ হতে চলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আর নেতানিয়াহুর জন্য। অনেকে আবার হামাসর পাল্টা হামলাকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা হিসেবে মনে করছে। তার উপর রাইসির মৃত্যুর কয়েক দিন পর, হামাসের এই হামলা আরো বেশি করে ভাবাচ্ছে নেতানিয়াহুকে। আসলে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং কৌশলগত দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ ইরান আর ইসরায়েলের সম্পর্ক। মতাদর্শগত, ভূ রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক কারণে এই দুই দেশের বৈরিতা বহু পুরনো।

 

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে হামাস, এত সহজে হার মানবে না

ইসরায়েলি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মতে, অন্তত আটটা রকেট দক্ষিণ রাজার রাফা থেকে ইসরায়েলকে টার্গেট করে ছোঁড়া হয়েছিল। বিগত চার মাসে ইসরায়েলে হামাস সেভাবে কোন রকেট হামলা চালায়নি । চার মাস পর এই হামলা চিন্তা বাড়িয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর। হামাস এই হামলা এমন একটা সময় চালালো যখন রাফাতে ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তাহলে কি হামাস বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে, রাফায় অভিযান চালালে ইসরায়েলের উপর আসতে পারে আরো বড়সড় আঘাত? হামাস কিন্তু দাবি করেছে, তারা তেল আবিবের উপর বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের কিছু গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে কয়েকটি ভবনের বাগানে ক্ষেপণাস্ত্রের খন্ডিত অংশের ফুটেজ। বহু ইসরায়েলি তীব্র আর উদ্যোগে ভয় পাওয়ার কারণে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে। এই তেল আবিব কিন্তু ইসরায়েলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

 

শুধু তাই নয়, এটি দেশটির বৃহত্তম শহর। গত জানুয়ারিতে এখানে সর্বশেষ হামলার পর ধীরে ধীরে শহরটা একটু ছন্দে ফিরলেও, সেখানে আবার তাল কাটলো হামাস। অর্থাৎ হামাস পুনরায় তার শক্তি দেখানোর চেষ্টা করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই হামাস দাবি করেছিল, তারা নাকি গাজায় জিম্মি করেছে ইসরায়েলি সেনাদের। ঘটনাটি ঘটেছে গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায়। তবে কত জন ইসরায়েলি সেনাকে হামাস জিম্মি করেছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। আল কাশেম ব্রিগেডের মুখপাত্র এই দাবির পক্ষে কোন প্রমাণও দেখাননি। অপরদিকে হামাসের দাবি অস্বীকার করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী । একটি বিবৃতিতে বলে, হামাসরা যা বলছে এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। ইসরায়েলের কোন সেনা হামাসের হাতে জিম্মি হয়নি। আর এই ধরনের ঘটনা গুলো তখনই ঘটছে, যখন গাজায় যুদ্ধ বিরতি নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা শুরুর বিষয়ে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বুঝতে পারছেন, কেনই বা বারংবার বলা হচ্ছে গাজা পরিস্থিতি এতটাই জটিল। এখানে যুদ্ধ থামাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো।

 

প্রশ্নের মুখে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি, হামাসের বড় ঢাল রাফা

রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য বলছে, ইসরায়েল আর হামাসের দ্বন্দ্বে বিপদজনক অবস্থান মুখে পড়েছে গাজার প্রায় এগারো লক্ষ মানুষ। কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করছেন শয়ে শয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক। বন্ধ মিশর রাফা সীমান্ত। অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন গাজার মানুষ, নেই খাবার, নেই পানীয় জল। যার জেরে ক্রমশে আন্তর্জাতিক চাপে ছিল ইসরায়েল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র আর মিশরের মধ্যস্থতায় দক্ষিণ ইসরায়েল দিয়ে গাজা ভূখণ্ডে ত্রাণ ঢুকতে অনুমতি দেয়। আর তারপরেই রকেট হামলায় মুখে পড়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের যুক্তি, রাফায় সাধারণ মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে রয়েছে হামাস। তাই রাফায় গা দিয়ে ঢাকা দিয়ে থাকা হামাস নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত ইসরায়েল এই যুদ্ধ থামাবে না। নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আপাতত গাজার বেসামরিক মানুষকে নিয়ে অতটাও চিন্তিত নয়। মূল টার্গেট শুধুমাত্র হামাস।

 

তাই গাজায় যুদ্ধ বিরতি হবে কি, হবে না, এটা একটা বড় সংশয়ের জায়গা। যখন যুদ্ধ বিরতি আলোচনা শুরুর আবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তখনই কিন্তু গাজায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অপরদিকে ইসরায়েলেও পাল্টা হামলা চালালো হামাস। তবে যতদূর শোনা যাচ্ছে, পুনরায় যুদ্ধ বিরতি আলোচনা শুরু হতে পারে। আর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আর কাতারের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করার পর। আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে মিশর আর কাতার। যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করবে সক্রিয়ভাবে। যদিও হামাস এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে হ্যাঁ, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো গাজায় যুদ্ধ বিরতি নিশ্চিত করতে বহুদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছে। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত রাফায় ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করতে নির্দেশও দিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল সেই আদেশ উপেক্ষা করে রাফায় আরো জোরদার করেছে হামলার পরিমাণ। কার্যত এখনো প্রশ্নের মুখে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version