Mice Farming : বিনা পুঁজির লাভজনক ব্যবসা, রাজশাহীতে বাণিজ্যিক ইঁদুর খামার মামুনের

।। প্রথম কলকাতা।।

Mice Farming in Bangladesh: নিতান্তই শখের বশে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন চারটি ছোট ছোট বিদেশি সুইস অ্যালবিনো জাতের ইঁদুর । তখন অবশ্য উদ্দেশ্য ছিল সেই ছোট্ট প্রাণ গুলিকে বাঁচিয়ে রাখার । কিন্তু ধীরে ধীরে সেই শখ ব্যবসায় পরিণত হল। শুধু ব্যবসা বললে ভুল হবে, রীতিমতো বিনা পুঁজির লাভজনক ব্যবসা। সেই ব্যবসা থেকে বর্তমানে তিনি মাসে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করছেন। দেশ থেকে তো বটেই বিদেশ থেকেও তাঁর কাছে অর্ডার আসছে ইঁদুরের ( Mice) ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণার পরিচারক হলেন সালাউদ্দিন মামুন । তিনি dbcnews. Tv এর একটি সাক্ষাৎকারে জানান , ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ( Rajshahi University) প্রাণীবিদ্যা বিভাগের এক পিএইচডি গবেষক এর গবেষণার পর অতিরিক্ত চারটি বিদেশি জাতের ইঁদুর বেঁচে গিয়েছিল। সেই ইঁদুর গুলি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ছোট ইঁদুর গুলি বাইরের পরিবেশে বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবে না এই মনে করে তিনি ইঁদুরগুলি বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। রাজশাহীর কাটাখালির পৌর এলাকার যুবক মামুন কিছুদিন বাদে দেখেন ওই চারটি ইঁদুর থেকে কুড়িটি ইঁদুরের বাচ্চা পাওয়া গিয়েছে।

বাচ্চাগুলি ১৫-২০ দিনের মধ্যেই বেশ খানিকটা বড় হয়ে ওঠে। প্রথম তিনি সেখান থেকে ইঁদুর বিক্রি করে উপার্জন করেছিলেন প্রায় এক হাজার টাকা। পূর্বে যদিও তিনি প্রতি পিস ইঁদুর ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতেন কিন্তু বর্তমানে সেই ইঁদুরের দাম দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা। মামুন জানান, এই সাদা ইঁদুরগুলি বিদেশি জাতের । বিদেশে এই ইঁদুর বছরে খুব বেশি হলে দুবার বাচ্চা দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়া ইঁদুর উৎপাদনে অনুকূল হওয়ার কারণে বছরে কমপক্ষে ৮ বার ছোট ছোট ইঁদুর পাওয়া যায়। এদের লালন পালনের খরচ খুব বেশি হয় না । উপরন্তু বিক্রি করে লাভও ( Profit) আসে অনেকটা।

বর্তমানে তিনি নিজের বাড়িতেই এই বিদেশি ইঁদুরের খামার ( Mice Farm) তৈরি করে ফেলেছেন । বাক্স কেটে তাদের জন্য ছোট ছোট ঘর তৈরি করেছিলেন প্রথমে । আর এখন রীতিমতো তাদের খাবার জায়গা থেকে শুরু করে থাকার জায়গা সবই রয়েছে ওই খামারের মধ্যে। এখন তিনি এই ইঁদুর বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০০ টাকা আয় করেন। তবে তাঁর কাছে সবসময়ই ইঁদুরের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। প্রথম তিনি ইঁদুর দিয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মিউজিয়ামে এবং তার একমাস পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ইঁদুরের ডাক পরে।

এরপর ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ফার্মেসি এবং প্রাণীবিদ্যা বিভাগ তাঁর কাছ থেকেই ইঁদুর নিতে শুরু করে । একটি ইঁদুর এক মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে যাওয়ার কারণে এই ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। এখন এই ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক হলেও একসময় তাকে পাগল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। পরিবার থেকে শুরু করে গ্রামবাসী কেউই তাঁর এই ব্যবসাকে মেনে নিতে পারেননি। হাসি ঠাট্টার পাত্র হয়েছিলেন তিনি । কিন্তু এখন তাঁর সাফল্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করেছে। দেশ এবং বিদেশ থেকে যখন তাঁর কাছে ইঁদুরের অর্ডার আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই হাসি মশকরা করার জায়গা থাকে না।

সালাউদ্দিন জানেন, ইউরোপে এই জাতির ইঁদুর রপ্তানি করার কথা চিন্তা ভাবনা করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেও ইঁদুর কিনে নেওয়ার কথা তাকে বলা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ইঁদুর রপ্তানি করার মত কোন রকম ব্যবস্থা নেই। যার কারণে এই রপ্তানির ব্যবসা শুরু করতে পারেননি মামুন। সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার জন্য ভীষণভাবে ইঁদুরের চাহিদা রয়েছে । এই ধরনের উদ্যোগকে তাই স্বাগত জানিয়েছেন রাশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম । তিনি বলেন, তরুণ গবেষকরা যেহেতু গবেষণার দিকে এগিয়ে আসছেন, তার জন্য দেশে-বিদেশে ইঁদুরের চাহিদা বাড়ছে। যদি কেউ পরিবেশের হানি না ঘটিয়ে ইঁদুর উৎপাদন করতে পারে প্রাকৃতিকভাবে, তাহলে সেই ব্যবসায় তাঁর সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version