Product Boycott Calculation: পণ্য বয়কটের হিসেব ভুল না সঠিক, কী করছে ইসলামী বিশ্ব ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Product Boycott Calculation: বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত, বড় কোন যুদ্ধ বাঁধলে একটা ট্রেন্ড ওঠে, সেটা হল পণ্য বয়কট। এই যে ইসরায়েল আর হামাসের যুদ্ধ হচ্ছে, যে দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেই দেশগুলোই ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের ঝড় তুলেছে। আর পণ্য বয়কটও করছে। কিন্তু বয়কটের এই ট্রেন্ডে আদৌ কি কোন লাভ হয়? এই বিরোধিতায় শত্রুপক্ষের দেশের ক্ষতি নাকি লাভ? এই প্রশ্নের উত্তরটা শুনলে চমকাবেন। যদি বলা হয়, পণ্য বয়কট করে আদৌ কোন লাভ হয়না, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে? আরব কিংবা ইসলামী বিশ্বে এই বয়কটের ব্যাপারটা একেবারেই পুরনো নয়। প্রায় কয়েক যুগ ধরে এটা চলছে। অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক, সব দিক থেকেই মাঝে মাঝে আলোচনায় চলে আসে এই বয়কটের ব্যাপারটা। প্রায় কুড়ি বছর আগে ইরাকেও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বয়কট করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কি কোন ক্ষতি হয়েছে? প্রশ্নটা তো এখানেই। যারা পণ্য বয়কট করছেন, তারা কি আদৌ জানেন বয়কটের আসল অর্থ কী? সত্যি সত্যি কি পণ্য বয়কট করে জেতা যায়? বরং উল্টোটাও হতে পারে। যে দেশ পণ্য বয়কট করছে তাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু কীভাবে? সম্প্রতি বিবিসির একটা প্রতিবেদন বলছে, পণ্য বয়কটের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমন খারাপের দিকও রয়েছে। অথচ পণ্য বয়কটকারীরা খারাপের দিকটা ভেবেও দেখেন না।

 

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যে সমস্ত আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইসরায়েল সেনাবাহিনী কিংবা ইসরায়েল সরকারকে সমর্থন করে, বহু দেশ তাদের পণ্য বয়কটের আহ্বান করেছে। দেখুন, বয়কট করার বিষয়টা বেশ পুরোনো। কখনো বয়কটের ডাক দেয়া হয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আবার কখনো বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়ার মূলে রয়েছে বিডিএস অর্থাৎ বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট এবং স্যাংশন। সোজা কথায় বর্জন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার আর নিষেধাজ্ঞা। যার শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০৫ সালে। ইসরায়েল বয়কটের ঝামেলা বহুদিন ধরেই সহ্য করছে। কিন্তু এতে আদৌ কি ইসরায়েলের কোনো ক্ষতি হচ্ছে? কারণ ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে যদি ইসরায়েলের অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে দেখেন, তাহলে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন, ইসরায়েল পণ্য বয়কটের ব্যাপারটাকে তোয়াক্কা করেনা। ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে প্রায় ১৭০ টি ফিলিস্তিনি নাগরিক সমাজ সংস্থা এটা চালু করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় কিন্তু কোন সহিংসতা জড়িয়ে নেই। শান্তিপূর্ণভাবে অহিংস উপায়ে ইসরায়েলের উপর একটা পরোক্ষ চাপ দিতে চেয়েছিল। যাতে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে। কারণ জাতিসংঘের ১৯৪ নম্বর প্রস্তাবনা অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকারকে সম্মান এবং সুরক্ষা দেয়া উচিত। যাতে তারা তাদের নিজস্ব বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।

 

মূলত যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাদের নাম তুলে দেয়া হয়েছে বিডিএসের ওয়েবসাইটে। পাশাপাশি যে সমস্ত মার্কিন কোম্পানিগুলো ইসরায়েলের প্রতি রাজনৈতিক আর সামরিক সমর্থন জানায়, তাদেরও পণ্যও বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একটা কথা। বয়কটে কী আসলেই কোন প্রভাব পড়ে? নাকি এই বয়কট প্রচারণা শুধু থেকে যায় একটা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে? গাজা যুদ্ধের আগে সর্বশেষ যে বয়কট প্রচার অভিযান গোটা বিশ্বের কাছে আলোচনায় এসেছিল, সেটা হল সুইডেন আর ডেনমার্কের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন যদি সুইডেন আর ডেনমার্কের অর্থনীতি আর উন্নয়নের পরিকাঠামোর দিকে তাকান, সেখানে কিন্তু বয়কটের প্রভাবের কোন ছাপ দেখতে পাবেন না। তবে হ্যাঁ, প্লাস পয়েন্ট যে একদমই নেই তা নয়। কারণ বৈশ্বিক কোম্পানির পণ্য বয়কট মানে, স্থানীয় কোম্পানির পণ্য বিক্রির পাশাপাশি কেনার ক্ষেত্রেও একটা বড় উৎসাহ তৈরি হবে। স্থানীয় মানুষ তাদের এলাকার, তাদের নিজস্ব দেশের জিনিস কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। কিন্তু কি বলুন তো, যদি কোনও মূল কোম্পানির কোনও শাখাকে বয়কট করা হয় তাহলে হয়তো মূল কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু যে সমস্ত স্থানীয় কোম্পানি ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অধিকার পান, সেক্ষেত্রে বয়কটে কেবল তাদেরই ক্ষতি হয়। মূল কোম্পানিতে কিন্তু বড় কোন এফেক্ট পড়ে না।

 

বর্তমানে গাজাকে কেন্দ্র করে যে বয়কট প্রচার অভিযান চলছে, সেখানে কিন্তু ভালোই চাপে পড়েছে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো। তাদের যে রেস্তোঁরা বা ক্যাফে চেইনের শাখা গুলো রয়েছে, সেখানে নাটকীয় হারে চাহিদা কমতে শুরু করেছে। ইসরায়েলি সৈন্যদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করার ঘোষণা দিয়েছিল কয়েকটি মার্কিন রেস্তোরাঁ, আর তারপরেই কিন্তু তারা মধ্যপ্রাচ্যে বড় বিপদে পড়ে। আবার যদি বয়কট বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কমে আসবে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্থানীয় অর্থনীতি। সোজা কথায়, ব্যাপারটা পুরো উভয় সংকটের মতো। এইতো কয়েক মাস আগেই, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসরায়েলি পন্য বয়কটের ঝড় উঠেছিল। বিশেষ করে এই অঞ্চলে বৃহৎ দুটি মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ায় পশ্চিমা বহু কোম্পানি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় তো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন সমস্ত কোম্পানির ব্যবসায়িক লেনদেন দিনের পর দিন কমতে থাকে।

 

মূল সমস্যাটা কি বলুন তো, বহু আরব নাগরিকই কিন্তু ইসরায়েলকে সমর্থন করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থার পণ্য ব্যবহার করে। আর সেটা অনেকটা জেনে হোক কিংবা না জেনে। কারণ প্রতিদিনের ব্যবহারের হাজারো পণ্য ঠিক কোন কোম্পানির এবং সেই কোম্পানি কোন দেশের তা জানা সম্ভব নয়। আর যদি সমস্ত পণ্য ব্যাপক হারে বয়কট না করা হয়, তাহলে তার প্রভাব বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে খুব একটা গিয়ে পড়ে না। কারণ বড় বড় কোম্পানিগুলোর মুনাফা প্রায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। ধরুন,।একটা সময় গিয়ে গাজা যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেল, তারপর নিশ্চয়ই বয়কটের প্রচারণাও বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার স্থানীয় কোম্পানির পণ্যের চাহিদা কমতে শুরু করবে। সে ক্ষেত্রে প্লাস মাইনাস করলে বয়কটের মুখে থাকা কোম্পানিগুলোর ক্ষতির অঙ্কটা অতি নগণ্য। অথচ যে স্থানীয় কোম্পানিগুলো বাজারে পণ্যের চাহিদা দেখে পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছিল , বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেছিল, তারা কিন্তু সেই জায়গায় গিয়ে বড় ধাক্কা খাবে।

 

শুধু তাই নয়, পণ্য বয়কটকারী দেশগুলোতে যদি যথেষ্ট পরিমাণে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না থাকে, তাহলে অর্থনীতি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিদেশী পণ্যের থেকে দেশীয় পণ্যের দাম বেশি। তখন চরম ভোগান্তিতে পড়ে আমজনতা। তাই স্থানীয়ভাবে উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাব না ফেললেও, বয়কট করা দেশগুলোর জন্য তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই তো বহু অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বয়কট প্রচারণা শুধু মাত্র আটকে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকা জনপ্রিয়তার পর্যায়ে। শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বড় পোস্ট করাটাই পণ্য বয়কট প্রচার অভিযানের সফলতা নয়। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বহুবিদেশি পণ্য রয়েছে যার কোন বিকল্প নেই। শুধু তাই নয়, এই বয়কট ভবিষ্যতে বিদেশী বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর বিদেশী বিনিয়োগ কমা মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বয়কট করা দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর। সারমর্মে এটাই বলা যায়, পণ্য বয়কটের ভালো খারাপ দুই দিকই রয়েছে। পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে এর কার্যকারিতার উপর। যদিও স্থানীয় বাজার স্ট্রং হয়, স্থানীয় বাজারে ওই পণ্যের বিকল্প থাকে, তাহলে সেই বয়কট কোথাও গিয়ে সফলতা পেলেও পেতে পারে, নচেৎ নয়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version