China-Turkey: চীনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন ! বিশ্ব দখল করতে তুরস্কের মারাত্মক প্ল্যান

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

China-Turkey: পশ্চিমাদের দিন শেষ। পিছিয়ে পড়বে চীন রাশিয়াও! বিশ্ব বাজার দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তুরস্ক। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটা তাক লাগিয়ে দিচ্ছে তার স্ট্র্যাটেজিতে। চীনের উইঘুর মুসলিমদের হয়ে এত কেন কথা বলছেন এরদোয়ান? স্বার্থটা ঠিক কী? ছেড়ে কথা বলবে না চীনও। উইঘুর ইস্যুকে কেন্দ্র করে চীন তুরস্কের মধ্যে সংঘাত বেঁধে যাবে না তো? মধ্যপ্রাচ্যের পর এবার কি তাহলে এরদোয়ানের টার্গেটে পশ্চিমারা? নিজের জায়গা শক্ত করতে পুরো বিশ্বে জাল পাতছে তুরস্ক, সুকৌশলে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিচ্ছে একের পর এক দেশের অস্ত্র বাজার। উইঘুরদের হয়ে কথা বলে মহান এরদোয়ান। এটাই কি তাহলে তুর্কি প্রেসিডেন্টের আসল পলিসি?

 

উইঘুর মুসলিমদের বাঁচাবে তুরষ্ক, খারাপ হচ্ছে চীনের ইমেজ

যখন গোটা বিশ্বে ভূ রাজনীতিতে চীন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার মতো দেশগুলো নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই তুরস্ক। সাম্প্রতিক সময় মধ্যপ্রাচ্যে দেশটা নিজের জায়গা শক্ত করে ফেলেছে। ইসরায়েল আর হামাস দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে, মধ্যপ্রাচ্য যখন দ্বিধা বিভক্ত, তখন ইরান আর হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। রীতিমত যেচে ইসরায়েলের সঙ্গে শত্রুতা বাড়িয়েছেন এরদোয়ান। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান শক্ত হতেই এবার তুরস্কের টার্গেট পশ্চিমারা। চীনের সাথেও শুরু করে দিয়েছে কূটনীতির খেলা। যদি তুরস্ক আর চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা বলা হয়, সেখানে কিন্তু উত্থান পতন কম নেই। যার মূল কারণ, উইঘুর ইস্যু। সাধারণত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুররা থাকে। কয়েক শতাব্দী ধরে এই অঞ্চল চীনের শাসকদের দেওয়া রাজনৈতিক শৃঙ্খলে তারা নিজেদের আটকে রাখতে চায়নি, স্বাধীনতা বজায় রাখতে বারংবার যুদ্ধে জড়িয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। ধর্মীয় পরিচয়ের দিক থেকে উইঘুররা মুসলিম। কথা বলে তুর্কি ভাষায়। যাদের গভীর সংস্কৃতিক যোগ রয়েছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে। উইঘুরদের সাথে তুর্কিদের সাংস্কৃতিক অভিন্নতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক যোগাযোগ আর সমন্বয়ের একটা ইতিহাস রয়েছে। উইঘুরদের উপর যখনই চীনাদের অত্যাচার নেমে এসেছে, তখনই কথা বলেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

 

তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তুরস্ক অনুসরণ করে চলেছে পাশ্চাত্যপন্থী পররাষ্ট্রনীতি। যেখানে সামঞ্জস্য রেখে নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থন দিয়ে গেছে উইঘুরদের। দেখুন, যদি বিশ্বব্যাপী পদ্ধতিগত নির্যাতন কিংবা দমন পীড়নের কথা বলা যায় সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কিন্তু চীন বেশ কুখ্যাত। বিশেষ করে উইঘুর মুসলিমদের উপর চীনা দমন পীড়নের বিরুদ্ধে বারংবার সোচ্চার হয়েছে সারা বিশ্ব। অথচ সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বেইজিংয়ের। এমত পরিস্থিতিতে যখন অর্থনৈতিক সুবিধার স্বার্থে বহু মুসলিম দেশ নিজেদের মুখ খুলতে নারাজ, তখন কিন্তু বারংবার কথা বলেছে তুরস্ক। কয়েকদিন আগে চীন সফরে গিয়েছিলেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শোনা যাচ্ছে সেখানে তিনি নাকি তুর্কি ভাষাভাষী উইঘুরদের অধিকার এবং সংস্কৃতি রক্ষার বিষয়ে একটা গোপনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন। তুরস্ক নাকি বেইজিংয়ের কাছে উইঘুর ইস্যুটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য জোরও দিয়েছে। তুর্কি কর্মকর্তারা বেজিংকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, উইঘুর তুর্কিদের সাংস্কৃতিক অধিকার এবং মূল্যবোধ রক্ষার বিষয়ে তুর্কি বিশ্বসহ গোটা ইসলামিক বিশ্বের সংবেদনশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

 

চীনের সাথে যে তুরস্ক সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে তা কিন্তু একেবারেই নয়। কৌশলে একদিকে যেমন চীনের সাথে পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখতে চাইছে, তেমনই রক্ষা করতে চাইছে উইঘুরদের অধিকার। বেজিংকে তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন , উইঘুরদের নিয়ে তুর্কি বিশ্ব তথা ইসলামী বিশ্বের একটা উদ্বেগ রয়েছে। আর সেটা দূর করা সকলের জন্যই মঙ্গলজনক। এ ব্যাপারে চীনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে তুর্কি কূটনীতিকরা। এই উইঘুর ইস্যুকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্বে তুরস্ক কিন্তু নিজের পক্ষে একটা বড় সাপোর্ট আদায় করে নিয়েছে। আর অপরদিকে, দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে চীনের ইমেজ।

 

বিশ্বজুড়ে চলবে তুরস্কের রাজ, যেভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন এরদোয়ান

আন্তর্জাতিক ময়দানে নিজের প্রভাব বাড়াতে একের পর এক সুচারু প্ল্যানিং করে চলেছে তুরস্ক। সম্প্রতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ঢেলে সাজাচ্ছেন তাঁর কূটনৈতিক ঘুঁটি। ইউরোপীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্পতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের প্রভাব একটু কমেছে। আর তা পুনরুদ্ধার করতে আর সেই ক্ষমতা আরো বাড়াতে এরদোয়ানের টার্গেট এখন ইউরোপ থেকে শুরু করে এশিয়া এবং আমিরিকা পর্যন্ত। যেখানে তাঁর সফর শুরু স্পেনের মাধ্যমে। আর এই দেশটা কিন্তু তুরস্কের যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, তেমনি ন্যাটোর একটা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ। ভূমধ্যসাগরীয় স্বার্থের পাশাপাশি গাজা যুদ্ধে দুই দেশের সম্পর্কে আরো ঘনিষ্ঠ করেছে। তারপর উত্তর আফ্রিকাতে দুই দেশের যৌথ স্বার্থ নিয়ে কথা বলবেন ইতালির প্রধানমন্ত্রীর জর্জিয়া মেলোনির সাথে। ইউরোপ সফর হয়ে গেলে জুলাইয়ের প্রথম দিকে এরদোয়ান অংশ নেবেন কাজাখস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সামিটে। প্রশ্নটা তো এখানেই। তাহলে কি তুরষ্ক তার স্বার্থান্বেষী চোখ দিয়ে এখন গোটা বিশ্বকে দেখছে? আর এভাবেই নিজেদের কূটনীতিকে ছড়িয়ে দিতে চাইছে গোটা বিশ্বে?

 

কারণ এরদোয়ান এশিয়ার উদীয়মান কোন শক্তির সঙ্গে যেন তার অংশীদারিত্বের বিন্দুমাত্র সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না। কারণ সাংহাই সামিটের পরেই তিনি যোগ দেবেন আজারবাইজানে অর্গানাইজেশন অফ টার্কিক স্টেটসের সম্মেলনে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এরদোয়ান কিন্তু এই কাজাখস্তান কিংবা আজারবাইজানের মাধ্যমে চীন আর ইউরোপে পণ্য পরিবহনের জন্য বাণিজ্য করিডোর তৈরি করতে চাইছে। এই সামিট সেরে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যাবেন ন্যাটোর একটা সম্মেলনে যোগ দিতে। ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি একটা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে পারেন। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ন্যাটো কাছে তুরস্কের খুব একটা গুরুত্ব ছিল না। কিন্তু এই যুদ্ধ ন্যাটোতে দেশটার গুরুত্ব আগে থেকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর জুলাইয়ের মাঝামাঝি এরদোয়ান যাবেন লন্ডন সফরে। সেটাও কিন্তু একটা কূটনৈতিক সফর। এই যে টানা কয়েক মাস ধরে বিশ্বজুড়ে শক্তিধর রাষ্ট্রের নেতাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন, সম্মেলনে যোগ দেবেন, এর ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে পোক্ত হবে তুরস্কের জায়গা। তুরস্ক যে তার প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চলেছে, তা বলাই যায়।

 

পশ্চিমাদের বাজার তুরস্কের হাতে! সমরাস্ত্রেই আসল মাস্টারপ্ল্যান

পশ্চিমাদের বাজার যে একটু একটু করে তুরস্ক দখল করে নিচ্ছে, তার বড় প্রমাণ দিচ্ছে সাম্প্রতিক সময়। একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই কিন্তু বিশ্বে ধীরে ধীরে তুর্কি ড্রোনের চাহিদা বাড়ছে। বিশ্ববাজার ধরে রাখতে তুরস্ক চলছে অত্যন্ত মেপে মেপে। ব্যাপক বিধ্বংসী ও স্বল্প মূল্যে তৈরি করছে যুদ্ধযান। স্বাভাবিকভাবেই তুর্কি ধরনের একটা বড় বাজার তৈরি হয়েছে ইউরোপ আফ্রিকা এবং এশিয়ার অঞ্চলে। শুধু ড্রোন নয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধ জাহাজের চাহিদা। আর সেই সমস্ত যুদ্ধ জাহাজ ব্যবহার করছে পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটা দেশ। ইতিমধ্যেই রয়াল মালেশিয়ান নৌবাহিনী তুরস্ক থেকে যুদ্ধ জাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে যুদ্ধ জাহাজ গুলোতে অন্ততপক্ষে ৫০ টি তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থার যুদ্ধপ্রযুক্তি থাকবে। যুদ্ধ জাহাজ গুলি প্রায় ১০০ মিটার লম্বা, ওজনে প্রায় ২৫০০ টন। রয়েছে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে প্রায় ১০০ সেনা বহনের সক্ষমতা। পশ্চিমাদের তুলনায় স্বল্পমূল্যে এমন উন্নতমানের যুদ্ধজাহাজ দিলে এমনি থেকেই তুরস্কের প্রতি আগ্রহ দেখাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো। সামরিক খাতে বড় বড় চুক্তি স্বাক্ষর করতে চাইবে। আর এভাবেই তুরস্ক গোটা বিশ্বের নিজের প্রভাব বাড়াতে জাল বিছানো শুরু করে দিয়েছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version