Burundi Poorest Country: মানুষ টাকা চেনে না, খাবারের অভাবে মারা যায় শিশু! এদেশের ভয়ঙ্কর দুর্দশায় ভয় পাবেন

।। প্রথম কলকাতা ।।

Burundi Poorest Country: বিদ্যুৎ কিংবা ইন্টারনেট ছাড়া (Without Internet) আপনি কতক্ষণ থাকতে পারবেন? এ প্রশ্ন অনেকের কাছে একটু বোকামির মনে হতে পারে। কিন্তু বিশ্বের এমন এক দেশ রয়েছে যেখানকার মানুষ বিদ্যুৎ কিংবা ইন্টারনেট কি তা জানেই না। তারা জীবনে কোনদিনও টাকা দেখেনি। পাঁচ বছরের আগেই শিশুরা না খেতে পেয়ে মারা যায়। এখানে এক একজন মহিলার ২০ থেকে ২৫ জন সন্তান থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা কুকুর মরলে তারা সেই মাংস নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। পেটে একটু খাবারের জন্য চলে অসহ্য লড়াই। সম্পূর্ণটা জানলে জীবনের প্রতি অভিযোগ করা ছেড়ে দেবেন। পৃথিবীর এই চিত্র পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডিতে (Burundi)। দেশটি গত ৬২ বছর ধরে দরিদ্রতম দেশ হিসেবে পরিচিত।

বুরুন্ডির মানুষের কাছে কোন টাকা থাকে না, এরা জনেই না টাকা কেমন হয়। জন্মের পর ৫ বছরের আগেই বহু শিশু না খেতে পেয়ে মারা যায়। এদের জীবনযাপন জানলে ভাববেন আপনি রাজার হালে আছেন। কাছে টাকা না থাকায় এখানকার মানুষরা আজও বিনিময় প্রথা মেনে চলে। ১০০ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে যাওয়া এদের কাছে কোন ব্যাপার নয়। শুধুমাত্র কৃষিজাত পণ্য বিক্রি করার জন্য ছেঁড়া জামা পরে প্রায় ২০০ কেজি ভার নিয়ে তারা দৌড়ায়। কারোর বা পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে জিনিস বিক্রি করে আয় হয় মাত্র ৯০ টাকা। এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য অনেকে ট্রাকের সাথে সাইকেল আটকে রাখেন। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত। আবার অনেকে শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে এক শহর থেকে অন্য শহরে পাড়ি দেন। এখানে মানুষ পড়াশোনার পিছনে ছোটে না, তাহলে তো খাওয়াই জুটবে না। প্রতিটি পরিবারে প্রায় ৮ থেকে ৯ জনের পেট চলে মাসিক বেতন মাত্র পনেরো ডলারে। সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে যা টাকা পায় তা একজন মানুষেরও সারা মাস চলার জন্য যথেষ্ট নয়। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী গত ৬২ বছর ধরে বুরুন্ডি বিশ্বের সবথেকে দরিদ্র দেশের তালিকায় রয়েছে। এখানে প্রতিদিন অনাহারে প্রচুর মানুষ মারা যায়। এরা শুধু দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখে একদিন সুদিন আসবে, কিন্তু শত শত বছর পেরোলেও সেই সুদিন আর আসেনি। যার কাছে সামান্য একটা সাইকেল আছে সে ভাবে এটা সম্মানের পেশা। প্লাস্টিক বোতল, লাঠি, পলিথিন দিয়ে তৈরি করে বাড়ি। যেখানে বৃষ্টি এলে মানুষ ঘুমের মধ্যেই স্নান করে যায়। বাচ্চাদের খেলনা বলতে ফাটা টায়ার কিংবা প্লাস্টিকের বোতল। যেখানে খাবার জোটে না সেখানে শিশুদের খেলনা বিলাসিতা মাত্র। বুরুন্ডিতে এক একজন মহিলার ২০ থেকে ২৫ জন সন্তান থাকা এক্কেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। ইন্টারনেট কি এরা তা জানে না। বুরুন্ডির ৭.৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ বিদ্যুৎ কিংবা ইন্টারনেট ছাড়া থাকতেই পারে না। বুরুন্ডিতে যারা সরকারি কর্মচারী রয়েছেন তাদেরও আয় প্রচুর কম। যারা পুলিশে চাকরি করেন তাদের আয় মাত্র ১৪ ডলার, আর একজন ড্রাইভার আয় করেন মাত্র ১০ ডলার।

বুরুন্ডির সংস্কৃতি বেশ বৈচিত্র্যময়। এদের কাছে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এটি এমন একটি গরীব রাষ্ট্র যা অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দারিদ্র যে প্রতিভাকে হার মানায় না বুরুন্ডি তার প্রমাণ। এরা নানা ঝুড়ি, মুখোশ, মূর্তি তৈরিতে বেশ পারদর্শী। ঢোল বাজিয়ে নাচ গান করতে ভালোবাসে। যে কোন অনুষ্ঠানে থাকে বিয়ার, এটি কলা দিয়ে তৈরি হয়। এখানে ছেলে মেয়েরা স্কুলে একেবারেই যায় না। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা আরো কম। ১৮ বছরের আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। এখানে বাল্যবিবাহ আর কিশোরী গর্ভধারণ এক্কেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। মেয়েদের অবস্থা তো খুবই খারাপ। এখানে নারীদের কোনো সম্মান নেই। উল্টে তাদের উপর চলে অকথ্য অত্যাচার অথচ অর্থনীতিতে এই দেশের মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বুরুন্ডির বেশিরভাগ মহিলা নিজেরা পরিশ্রম করে সন্তান মানুষ করেন। এদের সমাজ মনে করে, যে নারী বেশি সন্তান জন্ম দেবে সেই নারী শুভ। পেটের জ্বালা এতটাই এদের কাছে জীবনের কোন মায়া নেই। যা ত্যাগ করে তারা জীবিকার সন্ধানে এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে পাড়ি দেয়। এরা জানে না টাকা কি। ক্ষেতের ফসলের বিনিময় করে অন্য জিনিস নেয়। সারা বছর পাথরের রুক্ষ ভূমিতে চাষ করে। কারণ জানে ফসল না ফললে খাওয়া জুটবে না। সাধারণত তুলো, মিষ্টি আলু, কলা, ভুট্টা এইসব চাষ হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তথ্য অনুযায়ী, এখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশের বেশি অপুষ্টিতে ভোগে। বুরুন্ডির ৯০ শতাংশ মানুষ চাষ করেন।

বুরুন্ডিতে কেউ চাইলে যোগ ব্যায়াম কিংবা জগিং করতে পারবেন না। এই দেশে এটি নিষিদ্ধ। মনে করা হয়, মানুষ এক জায়গায় হয়ে এসব করলে দেশে বিদ্রোহ হতে পারে। একসময় জার্মানদের উপনিবেশ ছিল বুরুন্ডি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়াম দখল করে নেয়। বুরুন্ডি স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৬২ তে। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখানে যোগব্যায়াম কিংবা জগিং নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের সবথেকে অসুখী দেশ হল বুরুন্ডি। এখানে মানুষ না খেতে পাওয়ার কারণে এদের আইকিউ কম, শরীর নানা রোগে ভর্তি। প্রতিদিন এরা এক পোশাক পরে থাকে। বুরুন্ডির বহু মানুষ আছেন যারা জীবনে কোনদিনও হাসপাতালে কি সেটাই জানেন না। ২৭,৮৩৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বুরুন্ডিতে মানুষ থাকে ১ কোটি ২৫ লক্ষ, যাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ১০০ মার্কিন ডলার। প্রতি তিন জনে একজন বেকার। তাই নিজের জীবন নিয়ে অভিযোগ করা ছেড়ে দিন। শুধুমাত্র পেট ভরা ভাতের জন্য হয়ত বুরুন্ডির মানুষের মত আপনাকে লড়াই করতে হয় না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version