Bangladesh: শুধুমাত্র চুল বাংলাদেশের জীবন অর্থনীতি বদলে দিচ্ছে, জানুন কী ঘটছে ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাংলাদেশ, ঝাপিয়ে পড়ে গোটা পৃথিবী থেকে সব চুল কিনে নিচ্ছে। গোপনে বানিয়ে ফেলছে হীরে। কি অস্বাভাবিক হারে চুলের নেটওয়ার্ক মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। চুলে জড়িয়ে বাঁচছে গ্রামের পর গ্রাম। মনি মুক্তোর মতো আঁকড়ে ধরছে চুলকে! শুধুই রহস্য এই সম্পদে। উড়ছে কোটি কোটি টাকা! চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া এই চুল ছাড়া একেবারে অন্ধ। ফেলনা নয়, কিভাবে অর্থনীতি ঘুরিয়ে দিচ্ছে পদ্মাপাড়ের এই জিওনকাঠি কেজি কেজি চুলে লাখ লাখ স্বপ্ন। হিউম্যান হেয়ারই আমূল বদলে দিচ্ছে একটা দেশের জীবন।

রমরমিয়ে চলছে চুলের ব্যবসা বাংলাদেশে গ্রাম থেকে শহর, মানুষের মাথার চুল বিশেষ করে মেয়েদের ঝরে পড়া চুল সংগ্রহ নতুন কিছু নয়। তার ওপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিউটি পার্লার কিংবা সেলুনে প্রতিনিয়ত কাটা চুল এখন আর মোটেই ফেলনা নয়। এমনকি কাঁটাতার পেরিয়েও বাংলাদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে চুল। সেখান থেকে ছড়াচ্ছে বিদেশে। বাংলাদেশের বুকে ঢুকছে কোটি কোটি টাকা। চাষবাস ছেড়ে চুলের ভরসায় বাঁচতে শিখছে মানুষ। এতো এতো বৈদেশিক মুদ্রা আনছে গোছা গোছা চুল। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে গত এক দশকে গড়ে উঠেছে উইগ বা পরচুলার বিশাল শিল্প। মূলত মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠে আসা চুল অনেকেই জমিয়ে রেখে দেন। কেটে ফেলা লম্বা চুলও জমিয়ে রাখেন অনেকে। পাড়ায় ঘুরে ফেরিওয়ালারা সেইসব চুল কিনে নেন অল্প দামে।

এসব চুল সংগ্রহ করে উইগ বা পরচুলা তৈরি করে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের কাছে বিক্রি করে। প্রথমে এগুলো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ভালো করে শুকানো হয়। পরে আকার ও মান অনুসারে আলাদাভাবে প্যাকেজ করা হয়। এরপর বিক্রি করা হয় গ্রেড অনুসারে। চুল যত লম্বা হয়, দামও তত বেশি। তবে, হীরা তৈরিতে চুলের ব্যবহারের কথা খুব একটা জানাজানি হয়নি এখনো এভাবেই বাংলাদেশের রাজশাহী নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা সহ উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গাতে ফেলে দেওয়া চুল হয়ে উঠেছে অনেকের রোজগারের উৎস। কাটা চুল কেজি প্রতি তিন-চার কিংবা ৫০০০ টাকাতেও বেচা-কেনা চলছে। তবে চুলের আকার হতে হবে আট ইঞ্চি লম্বা।

জানলে অবাক হবেন এখন এই শিল্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে। কাটা বা ফেলে দেওয়া চুল সংগ্রহ করে উইগ বা পরচুলা তৈরি করা হচ্ছে। এসব পরচুলার দেশের ভেতরে যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি চীন, জাপান, মিয়ানমার, কোরিয়া, তাইওয়ান সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে উইগ ও চুল কিনছে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। শুধু তাই নয়, বর্তমানে কোনও কোনও কোম্পানি এই চুল আইল্যাশ বা চোখের পাপড়ি তৈরিতে ব্যবহার করছে। হ্যাঁ, ফেলে দেওয়া চুলই আজ অনেকের রোজগারের উৎস। তবে ব্যবসাটা নতুন নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এই ব্যবসাটি চলে আসছে। যা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ১৯৯৯-২০০০ সালের পর থেকে। আর চুল রফতানি করে সবচেয়ে বেশি মুদ্রা এসেছে ২০১৫ -১৬ অর্থবছরে। ১ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে এই চুল রফতানি করে আয় হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ১৫০ কোটি টাকারও বেশি।

চুল টাকা আনছে, বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করছে, অর্থনীতির বুকে নতুন স্বপ্ন জাগাচ্ছে, বাংলাদেশীদের জীবনে রোজগারের নতুন দিশা দেখাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে চুল থেকে হীরা? হ্যাঁ ইন্টারনেট বলছে, মানুষের চুল থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ল্যাবরেটরিতে বানানো হচ্ছে মহামূল্যবান হীরা। এতে প্রয়োজন হয় দশমিক ৫ থেকে ২ গ্রাম পর্যন্ত চুল তবে, এ উপায়ে উৎপাদিত হীরা একটিই হয়। আরেকটি হীরার সঙ্গে তা মেলে না। যে হীরা একজন মানুষের ডিএনএ বহন করে বলে দাবি উদ্ভাবকদের। এই পদ্ধতিতে হীরা তৈরির জন্য পশ্চিমা বিশ্বে অনেক কোম্পানি গড়ে উঠেছে। তারা এই ব্যবসা করে উপার্জন করছে কোটি কোটি ডলার। চুলের ডিমান্ড টা বুঝতে পারছেন তো? সাধেই কি বাংলাদেশের আনাছে কানাচে গড়ে উঠছে এতো এতো চুলের কারখানা। এই চুল শিল্পেই যে লুকিয়ে বিরাট সম্ভাবনা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version