Israel-Maldives: এক হলো চীন-মালদ্বীপ ! ঘোর সংকটে ইসরায়েল

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

Israel- Maldives: মালদ্বীপে নিষিদ্ধ ইসরায়েলিরা। গাজায় ইসরায়েলি হামলা কিছুতেই মেনে নেবে না মালদ্বীপ। আবারো নতুন করে চাপে নেতানিয়াহু। একের পর এক দেশ গর্জে উঠছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ভারত বিদ্বেষের পর, এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মালদ্বীপের নতুন স্ট্যান্ড। মালদ্বীপের চীনপন্থী মইজ্জু সরকার হামাসের পক্ষে, তাই কি এত বড় সিদ্ধান্ত? কিন্তু এর বিপরীতে কী হতে পারে? ইসরায়েল কি এত সহজে ছেড়ে কথা বলবে? ইতিমধ্যেই কড়া নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। ওদিকে নিজের দেশের অর্থনীতির কথা ভেবেই দেখছে না মুইজ্জু প্রশাসন। অর্থনীতিতে আসতে পারে বড় ধাক্কা। ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধের এফেক্ট, একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে। মুইজ্জুর একটা সিদ্ধান্তে কে বেশি কোণঠাসা হবে? ইসরায়েল নাকি মালদ্বীপ?

 

মালদ্বীপকে পাত্তাই দিচ্ছে না ইসরায়েল, নিজের পায়ে কুড়ুল মারছেন মুইজ্জু!

আচ্ছা, এই যে মালদ্বীপ ইসরায়েলিদের নিষিদ্ধ করল, এতে বড় ধাক্কা খাবে না তো দেশটা? যদি বিগত কয়েক মাসের ভূরাজনীতির দিকে তাকান, দেখবেন যে যে দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, সেই সেই দেশকে একদমই পাত্তা দিচ্ছে না ইসরায়েল। বরং তাদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ নিচ্ছে। তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। সোজা কথায়, ইসরায়েলের তাতে কিচ্ছু যায় আসছে না। মালদ্বীপের নেওয়া এই সিদ্ধান্তকেও ইসরায়েল জাস্ট ডোন্ট কেয়ার ভাব করে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। একটা সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মালদ্বীপ থেকে সরে যেতে বলেছিল মুইজ্জু সরকার। মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্কে। তারপর থেকে হুরমুড়িয়ে মালদ্বীপ বয়কটের ডাক দেন ভারতীয়রা। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল এই দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতি। মালদ্বীপে বেড়াতে যাওয়া ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা কার্যত অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল। এই দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভই তো দেশটার পর্যটন। এমত পরিস্থিতিতে মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী ইব্রাহিম ফয়জল আর্জি জানিয়েছিলেন, যাতে ভারতীয়রা দয়া করে তাদের দেশে থেকে ঘুরে আসে। তাদের পর্যটনের সঙ্গী হয়। ইসরায়েলকে ব্যান করার ক্ষেত্রেও, মালদ্বীপের ঠিক সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে না তো?

 

হয়ত ভাবছেন, হঠাৎ কেন এই প্রসঙ্গ উঠছে? আসলে মালদ্বীপ আর ইসরায়েলের সম্পর্ক আগাগোড়াই একটু বিতর্কিত। মালদ্বীপ ১৯৭৪ সালে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। তারপর থেকে দুই দেশের মধ্যে সেভাবে আর কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু ১৯৯০ এর দশকে এসে এই দ্বীপরাষ্ট্র পর্যটকদের উপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। ২০১৪ সালে বাতিল হয়ে যায় সেই চেষ্টা। ২০২৩ এ মালদ্বীপের বিলাসবহুল পর্যটন হটস্পটগুলোতে সফর করেছেন প্রায় ১১ হাজার ইসরায়েলি। যা মালদ্বীপের মোট পর্যটকদের মধ্যে প্রায় ০.৬ শতাংশ। প্রতি বছর গড়ে মালদ্বীপে ঘুরতে যান প্রায় ১৫ হাজার ইসরায়েলি নাগরিক। তবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সেই সংখ্যাটা নেমে এসেছে ৫২৮ জনে। হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮৮ শতাংশ কম। মালদ্বীপের অভ্যন্তরে যে ইসরায়েল বিরোধী একটা মনোভাব তৈরি হচ্ছে, তা বহু আগেই টের পেয়েছেন নেতানিয়াহু। তাই গত ডিসেম্বরে মালদ্বীপ ভ্রমণ করার আগে তিনি তার দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছিলেন।

 

কিন্তু কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ করে মালদ্বীপের এমন স্টেপ নিজের পায়ে কুড়ুল মারার সমান হলো না তো? প্রথমে ইন্ডিয়া আউট, পরে ইসরায়েল ব্যান। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে মালদ্বীপ আইন সংশোধন করার ঘোষণাও করে দিয়েছে। মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক বৈঠকে, প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ইসরায়েলের পাসপোর্ট নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য শুরু করে দিয়েছে সরকারি প্রক্রিয়াও। অপরদিকে ফিলিস্তিনিদের জন্য শুরু করেছেন তহবিল সংগ্রহ অভিযান। সেই অর্থ রাষ্ট্রপুঞ্জের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কাস এজেন্সির সাহায্যে পৌঁছে দেওয়া হবে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের কাছে।

 

মুইজ্জুর হম্বিতম্বি তবে কি বেকার? বড় বোকামি করে ফেললেন না তো?

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মালদ্বীপের এমন কঠোর হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হল, রাফায় ইসরায়েলি আক্রমণ। যে আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে মালদ্বীপ সরকার। সত্যি কথা বলতে, গাজায় বেসামরিক মানুষদের উপরে ইসরায়েলের যে হামলা চলছে তা নিঃসন্দেহে নিন্দাযোগ্য। কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জ পর্যন্ত বলে দিয়েছে, অল আইজ অন রাফা। কিন্তু কি বলুন তো, বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এখন ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের হয়ে কথা বলছে। অপরদিকে নিন্দা করছে ইসরায়েলের। কিন্তু পরিস্থিতি যতই জটিল হোক, ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে গিয় নিজের পায়ে কুড়ুল মারা বুদ্ধিমানের কাজ কিনা তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কারণ মালদ্বীপের অর্থনীতি একদম পর্যটন নির্ভরশীল।

 

এর আগেও ভারত বিদ্বেষের জেরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি প্রচুর ভারতীয় পর্যটক হারিয়েছে। এবার ইসরায়েল ব্যান করার ফলে, বন্ধ হয়ে যাবে ইসরায়েলি পর্যটকদের আনাগোনা। কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মুইজ্জু সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ধীরে ধীরে বেহাল হতে চলেছে মলদ্বীপের অর্থনীতি। মুইজ্জু চাইলেই অন্যভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে, রীতিমত সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধাচারণ করলেন। পরবর্তীকালে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন যে ইসরায়েলের মানুষ নতুন করে মালদ্বীপ ভ্রমণে আসতে চাইবেন তার কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই। তাই বলা যেতেই পারে, মালদ্বীপ একটা বিপুল সংখ্যক পর্যটক হারাতে চলেছে। যার সরাসরি এফেক্ট করবে দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতিতে।

 

মালদ্বীপের এই সিদ্ধান্তে যে হাত গুটিয়ে বসে আছে ইসরায়েল এমনটা নয়। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমত পাল্টা বার্তা এসেছে পশ্চিম এশিয়ার তরফ থেকেও। মালদ্বীপের বিরোধিতা করতে উঠেপড়ে লেগেছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েল সরকার মালদ্বীপে থাকা তাদের সমস্ত নাগরিকদের অবিলম্বে ওই দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে। যদি ভবিষ্যতে কোন সমস্যা দেয়, তখন মালদ্বীপ থেকে ইসরায়েলি সরাতে সমস্যা হতে পারে , সেই কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্ত। তবে মধ্যপ্রাচ্যেরর যে যুদ্ধ পরিস্থিতি, সেখানে মালদ্বীপের এমন সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বিগত প্রায় ৮ মাস ধরে চলছে হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ। তারপর থেকেই দুই তরফে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গাজায় চলছে মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ।

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র একটা যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিলেও, এই প্রস্তাবে যে দুই পক্ষ সহমত জানাবে, তার আভাস এখনো পর্যন্ত মেলেনি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, হামাস মানলেই ইসরায়েলেও যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে পারে। কিন্তু সবটাই রয়েছে এখন ধোঁয়াশার মধ্যে। আপাতত এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কবে যুদ্ধ থামবে তা আগাম কিছুই বলা যাচ্ছে না। আর গাজায় ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিবাদ করছে, বহু দেশ। এমনকি সেই তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন থামতে চাইছেন না নেতানিয়াহু। মালদ্বীপে ইসরায়েলি নাগরিকদের নিষিদ্ধ সিদ্ধান্তকে নেতানিয়াহু খুব একটা পাত্তা দেননি।

 

চীনপন্থী বলেই কি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুইজ্জু?

এখানে কিন্তু জড়িয়ে রয়েছে একটা চীনপন্থী ব্যাপার। কারণ গত বছর মালদ্বীপের শাসক হতেই মহম্মদ মুইজ্জু প্রথম থেকে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত। মালদ্বীপে সরকার গড়ার পরেই তিনি চীন থেকে ঘুরে এসেছেন। আর ওদিকে যখন মধ্যপ্রাচ্য তুমুল সংকটে, তখন সেখানেও দেখা গিয়েছে একটা দল ভাগাভাগির রাজনীতি। একদিকে ইসরায়েল, তো অপরদিকে হামাস। ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ফ্রান্স সহ বহু পশ্চিমা দেশ। অপরদিকে ঘুর পথে হামাস হয়ে ইরানের সাপোর্টে রয়েছে চীন রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলো। যেহেতু মুইজ্জু চীনপন্থী তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে থাকবেন বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই কিন্তু কিছু কিছু দেশ ইসরায়েলকে সাপোর্ট করেছে। আবার কিছু কিছু দেশ সাপোর্ট করেছে হামাসকে।

 

তবে গাজায় বেসামরিকদের মানুষের উপর হামলার কারণে একটু বেশি বিতর্কের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। এবার সেই ইস্যুকেই কেন্দ্র করে, ইসরায়েলকে ব্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমনি থেকেই ক্ষমতায় আসার পর কম চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে না মুইজ্জুকে। গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে ধিকে ধিকে ক্ষোভ বেড়েই চলছিল। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে মুইজ্জুকে চাপ দিচ্ছিল বিরোধী দল থেকে শুরু করে জোট সরকারের মিত্ররা। নিজের দেশের অভ্যন্তরে কার্যত একপ্রকার চাপেই রয়েছে মুইজ্জু। যদি নতুন করে মালদ্বীপে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়, তার দায়ও কিন্তু চাপবে মুইজ্জু সরকারের উপর, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

 

Exit mobile version