Oil: বিশ্ব জুড়ে একের পর এক সংঘাতের নাটের গুরু তেল! কোন দেশে কতবড় খনি? যা জানেন সেটা বড় ভুল, মিলিয়ে নিন

।। প্রথম কলকাতা ।।

Oil: বিশ্বের কোন দেশ সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেলের মালিক? অর্থনৈতিক উন্নয়নের “কী ফ্যাক্টর” অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত বিশ্বের কোন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি? জানেন, কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে? যেসব দেশে জ্বালানি তেলের মজুত বেশি, তারা হয় কোনো দেশের শত্রু কিংবা মিত্র।তেল কূপের দখল নিয়ে কম সংঘাত বাধেনি। কিন্তু, কেন তেলের জন্যই গোটা বিশ্ব একের পর এক সংঘাতের মুখোমুখি? বিশ্ব রাজনীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে এই জ্বালানি তেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কী বলছেন গবেষকরা? বিশ্ব রাজনীতির একটা বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালানি তেল। আর, তেল উৎপাদনকারী দেশ মানেই মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোকে বোঝায়। বর্তমানে বিশ্বের শক্তির উৎসের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জ্বালানি তেলের দখলে। বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের শতকরা ৭২ ভাগ তেল উৎপাদন করে তালিকার শীর্ষে থাকা ১০ টি দেশ।

তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ভেনেজুয়েলা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রয়েছে এই দেশে। পরিমাণটা ৩৩০ বিলিয়ন মানে ৩৩ হাজার কোটি ব্যারেল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে দেশটা এই তেলভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারছে না।

এরপরেই সৌদি, সৌদি আরবে তেলের মজুত ২৬৭ বিলিয়ন মানে ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল। ২০২৭ সালের মধ্যে দৈনিক ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে চায় সৌদি। বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছেও গেছে দেশটা।

তালিকায় এরপর আছে ইরান। ইরানের অপরিশোধিত তেলের মজুত ২০৮.৬ বিলিয়ন মানে ২০ হাজার ৮৬০ কোটি ব্যারেল। দৈনিক উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল। যুক্তরাষ্ট্রের একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ইরানের উপর। তবে এরমধ্যেও সম্প্রতি ইরানের তেল রপ্তানি বেড়েছে। তেলের উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে দেশটার।

এরপর কানাডা, কানাডা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। যেখানে অপরিশোধিত তেলের মজুত ১৭১ বিলিয়ন মানে ১৭ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল, যার সিংহভাগই আসে বিটুমিন থেকে।

ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল‌ উৎপাদনকারী দেশ ইরাক। ইরাকে মজুত আছে ১৪৫ বিলিয়ন মানে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল তেল। দৈনিক উৎপাদন ৪৫ লাখ ব্যারেল, রপ্তানি ৩৪ লাখ ব্যারেল। উৎপাদনের দিক থেকে ইরাক সৌদিকে ধরে ফেলার প্ল্যানে রয়েছে।

এদিকে ওপেক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাদের কাছে মজুত তেলের পরিমাণ ১১১ বিলিয়ন মানে ১১ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল। দিনে উৎপাদন করে ২৭ লাখ ব্যারেল, রপ্তানি করে ২৩ লাখ ব্যারেল।

ওপেকের তথ্যানুসারে, কুয়েতে তেলের মজুত ১০১.৫ বিলিয়ন মানে ১০ হাজার ১৫০ কোটি ব্যারেল। দৈনিক গড়ে ২৪ লাখ থেকে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে কুয়েত। রপ্তানি করে ১৭ লাখ ব্যারেল।

তারপরই রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুসারে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের মজুত ৮০ বিলিয়ন মানে ৮ হাজার কোটি ব্যারেল। দিনে উৎপাদন করছে ৯৪ লাখ ব্যারেল। জানিয়ে রাখি, কয়েক বছর আগে রাশিয়া দিনে ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করত। তবে ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তার জন্য রাশিয়ার তেল উৎপাদন কমেছে। তা সত্ত্বেও রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও জ্বালানি রপ্তানি যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরেছে।

আর যুক্তরাষ্ট্র? এখানে একটা কনফিউশন আছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত ঠিক কত, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। একটা হিসাব বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট তেলের মজুত ৬৮.৮ বিলিয়ন ব্যারেল মানে ৬ হাজার ৮৮৯ কোটি ব্যারেল, আরেকটা হিসাবে, তাদের মজুত ৭৪ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেল। মজুত যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী দেশ।

অন্যদিকে, উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় মজুত আছে প্রায় ৪৮.৩ বিলিয়ন মানে ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল। তা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে লিবিয়ার সরবরাহ খুব কম, দিনে মাত্র ১২ লাখ ব্যারেল। জানলে অবাক হবেন যে যুগে যুগে এই জ্বালানি তেল নিয়েই বেঁধেছে সংঘাত। ভেনেজুয়েলা সংকট, ইরানের উপর মার্কিন অবরোধ, লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ, সিরিয়ার সংঘাত এগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সেই তেল। বিশ্বায়নের এই যুগেও মহাপরাক্রমশালী দেশগুলো তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রীতিমতো কম্পিটিশন চালাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন এই সম্পদরুপী অভিশাপ অর্থনীতিকে চাপে ফেলে। রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে। যুদ্ধকে উসকে দেয়। অর্থাৎ এটা একেবারে স্পষ্ট যে, তেলই অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে বারংবার। আবার, এই জ্বালানি তেলের জাদুকরী স্পর্শে অনেক দেশের দুর্বল অর্থনীতি রাতারাতি যে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে, সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version