।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: গাজায় হামলা চালিয়ে মহা বিপাকে ইসরায়েল। এই মুহূর্তে থমথমে গোটা দেশ। কি হয় কি হয় ভাব। যে কোন মুহূর্তেই গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এই আশঙ্কায় কাঁপছে গোটা ইসরায়েল। দেশের প্রধানমন্ত্রী বলে কথা। আর ঠিক সেই সময় ইসরায়েলের পাশে আবারও থাকার আশ্বাস দিল যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। আচ্ছা, এই যে নেতানিয়াহু গ্রেফতারের প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত এটা কি সত্যি হতে পারে? আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কীভাবে কাজ করে? যদি গ্রেপ্তার করে, তাহলে কি শাস্তি হবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর? বিচারই বা চলবে কিভাবে? এক্ষেত্রে শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিটাই বা কেমন?
গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে। কিন্তু তারপরের অধ্যায়টা কেমন হবে? আদৌ কি এই আশঙ্কার জাল কেটে বেরোতে পারবেন নেতানিয়াহু? নাকি গোটা বিশ্বের কাছে পুড়তে চলেছে ইসরায়েলের মুখ? আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হাতে রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা। আর তাতেই কি এখন থমথমে ইসরায়েল? চিন্তায় পড়ে গিয়েছে ইসরায়েলের বড় বড় সামরিক কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলছে জোরদার আলোচনা। আর ওদিকে ইরান চুপ করে বসে সবটা দেখছে। সপ্তাহ কয়েক আগে যেভাবে ইরান আর ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টা হামলা চলছিল, সেখানে আপাতত কিছুটা স্থিতিশীল পরিবেশ। এবার আর সরাসরি নয়, ইসরায়েলকে কৌশলে ঘিরে ধরছে বিশ্বের বহু রাষ্ট্র।
গত সাত মাস কেটে গেল, কিন্তু এখনো জারি রয়েছে ইজরায়েল আর হামাসের যুদ্ধ। গত বছরের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলা, তার পাল্টা জবাবে ইসলায়েল এখন গাজায় যে বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। গাজায় হামাস খুঁজতে ক্রমাগত আক্রমণের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে ইসরায়েল। সেখানে আবার ঢুকে পড়েছে ইরানও। এই মুহূর্তে যে কোন সময় নতুন যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। তৈরি হয়েছে চরম একটা টানাপোড়েন। ওদিকে ইসরায়েলের জনগণের মনে এখন ভয়, যে কোন মুহূর্তে গ্রেপ্তার হয়ে যেতে পারেন তাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। এটা কিন্তু একটা দেশের জন্য কম চাপের ব্যাপার নয়।
মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যে কারোর বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণ হত্যার মামলা দায়ের করতে পারে। শুধু ইসরায়েলই বা কেন , চাইলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে হামাস নেতাদের বিরুদ্ধেও। ইতিমধ্যেই আশঙ্কায় ইসরায়েলের বিদেশ মন্ত্রী কাটজ। দুতাবাসগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত ভিতরে ভিতরে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কতটা ভয়ে আছেন তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। উপরন্তু বলে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের পদক্ষেপে কোনোরকম প্রভাব পড়বে না। ওদিকে আবার ইসরায়েলকে রক্ষা করতে, আন্তর্জাতিক আদালতকে হুঁশিয়ারি দিল যুক্তরাষ্ট্র এর এক কর্মকর্তা। আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে অনেক বড় ভুল বলে সতর্ক করল। তবে কি বলুন তো, বর্তমানে যেভাবে গাজায় ইসরাইলি হামলা চলছে, তার কারণে দ্বিধা বিভক্ত গোটা বিশ্ব। ইসরায়েলের পাশে হয়ত শক্তিধর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আছে, কিন্তু কিছুটা হলেও হালকা হয়ে গিয়েছে ইসরায়েলের পাল্লা। কারণ গাজা বাসীর উপর হামলা বন্ধে বিভিন্ন দেশে বাড়ছে বিক্ষোভের জোয়ার। যার জেরে কোনঠাসা যুক্তরাষ্ট্র। তাই তো গাজায় যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি নিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। নেতানিয়াহুর এই গ্রেফতারি আশঙ্কার মাঝে কিন্তু গাজায় হামলা থেমে নেই। বরং রাফা উপত্যকার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে ইসরায়েলের বাহিনী। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি চাইছে বিশ্বের বহু পরাশক্তি।
দেখুন, এমন ঘটনা কিন্তু প্রথম নয়। এর আগেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এনেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তার বিরুদ্ধে ছিল যুদ্ধপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ। তিনি নাকি বেআইনিভাবে ইউক্রেনে শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন। তখনো এই গ্রেফতারি পরোয়ানাকে জঘন্য বলে অভিহিত করে মস্কো। সোজা কথায়, রাশিয়ার কাছে এই অভিযোগ ধোপে টেকেনি। ২০০২ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। যার গঠনতন্ত্রে বলাই রয়েছে, প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের নিজেদের দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধীদের বিচার কাজ পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত শুধু তখনই হস্তক্ষেপ করবে, যখন কোন রাষ্ট্র এমন অপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্তে অস্বীকার জানাবে বা অসমর্থ হবে। এই কথা মেনে চলে বিশ্বের প্রায় ১২৩ টা দেশ।
এবার আসা যাক সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে। এই আদালত যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠিক কীভাবে করে থাকে? এই আদালত সাধারণত সেইসব দেশেই যুদ্ধপরাধের বিচার করে, যেসব দেশে বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। রাজনৈতিক নেতাদেরকেও আক্রমণাত্মক যুদ্ধ পরিচালনার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। আইসিসি সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের কিংবা তাদের ভূখণ্ডে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের বিচার করতে পারে। এই মুহূর্তে এই আদালত ভীষণভাবে সক্রিয় রয়েছে ইউক্রেন ছাড়াও আফ্রিকার উগান্ডা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, কেনিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, এশিয়ার মিয়ানমার এবং ফিলিপাইনের মতো ১৭ টি দেশে। তবে সমস্যাটা হলো, এখনো পর্যন্ত বহু দেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। রাষ্ট্রসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহু দেশ এই আদালতকে হয়তো সমর্থন করে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চীন রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আইসিসির সদস্য নয়।
আইসিসির হাতে হয়তো বিচারের ক্ষমতা আছে কিন্তু কোন অভিযুক্তকে সহজে গ্রেফতার করতে পারে না। এই আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেফতার করতে পারে এবং গ্রেফতারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডস এর হেগ শহরে তার কার্যালয় বিচারের জন্য হাজির করতে পারে। আরেক একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, আইসিসি বিচারের ক্ষমতা শুধু সেই সব দেশে প্রয়োগ করতে পারে, যে দেশগুলো এই আদালত গঠন করতে চুক্তিতে সাহায্য করেছিল। রাশিয়া কিন্তু এই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। যার কারণে পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কিছু করতে পারেনি এই আদালত।
এই মুহূর্তে আইসিসির অধীনে প্রায় ১৭ টি চলমান তদন্ত রয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে প্রায় ৪২টি। ২১ জন সন্দেহভাজনকে হেফাজতেও নিয়েছে। এই আদালতের বিচারক প্রায় ১০ জন সন্দেহভাজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং মুক্তি দিয়েছে চারজনকে। কিন্তু কি বলুন তো, ইসরায়েলের ক্ষেত্রে এর ফলাফলটা হতে পারে অনেকটা রাশিয়ার মত। অর্থাৎ ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কিন্তু কিছু করতে পারেনি। কারণ রাশিয়া আইসিসির সদস্য নয়। ঠিক একইভাবে ইসরায়েলও কিন্তু আইসিসির সদস্য নয়। তবে কি বলুন তো, একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ, গ্রেফতারি পরোয়ানা আনাটাই তো একটা বড় কথা। নেতানিয়াহুর নামে যখন তদন্ত চলবে, তাকে যখন বিচারের আওতায় আনা হবে, এর ফলাফল ঠিক কি হবে, সে পরের কথা।
কিন্তু ঘটনাচক্রের জল এত দূর গড়ানো মানেই কিন্তু জড়িয়ে রয়েছে নেতানিয়াহুর সম্মানহানির ব্যাপার। গোটা বিশ্বের চোখে তিনি কিছুটা হলেও ছোট হয়ে যেতে পারেন। তাই বিষয়টাকে আর জটিল করতে চাইছে না ইসরায়েল। সহায়তা চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে অফিশিয়ালি কোন সাপোর্টের ইঙ্গিত এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে ভিতরে ভিতরে বাইডেন যোগাযোগ করছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক মহল। গাজায় হামলার কারণে, গোটা বিশ্বজুড়ে যেভাবে নিন্দিত হচ্ছে ইসরায়েল, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সর্বসমক্ষে ইসরায়েলকে সাপোর্ট করাটা ভালো চোখে নাও দেখতে পারে। আপাতত জো বাইডেন খেলছেন একটু সেফ সাইড গেম। এবার দেখার বিষয়, আইসিসি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে কতদূর যেতে পারে।