।। প্রথম কলকাতা ।।
Gangasagar Mela 2023: গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) মানেই চারিদিকে রয়েছেন বহু নাগা সন্ন্যাসী(Naga Sanyasi)। তাদের কাছে পুণ্যার্থীরা আশীর্বাদ নিতে ছুটে যান। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বঙ্গোপসাগর এবং গঙ্গার মিলন স্থলে এই জায়গার মেলা গোটা ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কুম্ভ মেলার পরেই এই মেলার স্থান। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গবাসী নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এই মেলায় গঙ্গাস্নান এবং কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দিতে আসেন। গঙ্গাসাগর মেলার অন্যতম আকর্ষণ হল নাগা সন্ন্যাসী(Naga Sanyasi)। এদেরকে কেন্দ্র করে রয়েছেন নানান রহস্য। এদের সাধনার পদ্ধতি জানলে একটু অবাক হতে হয়। জানেন কি, কারা এই নাগা সন্ন্যাসী? কেনই বা এরা নগ্ন রূপে থাকে?
• কাদের নাগা বলা হয়?
সারা দেহে ছাই ভস্ম মাখা, নগ্ন রূপ, জটাধারী চুল। এদেরকে সচরাচর লোকালয়ে খুব একটা দেখতে পাবেন না। এদের দেখা মিলবে বিশেষ করে সাগর মেলা কিংবা কুম্ভ মেলায়। নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনযাপন নিয়ে সাধারণ মানুষদের মনে বহু কৌতুহল রয়েছে। নাগা শব্দটির অর্থ ব্যাপক। মূলত নাগা বলতে বোঝায়, যারা বিশ্বের প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করেন। বহু মানুষ এনাদের হিন্দু সনাতন ধর্মের রক্ষক হিসেবে মনে করেন। নাগা সন্ন্যাসী চাইলেই কারো কাছে ভিক্ষা করতে পারেন। তবে অবাক করার বিষয় হল, তারা একদিনে কেবল সাতটি বাড়িতে কিংবা সাতজনের কাছে ভিক্ষা চান। যদি তারা ভিক্ষা না পান সেক্ষেত্রে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটান। কপালে থাকে বিশেষ তিলক। এরা তেল সাবান এসব কিছুই ব্যবহার করতে পারেন না। তার পরিবর্তে সারা শরীরে মেখে থাকেন ভস্ম। এতে মেশানো থাকে কলা, বেলপাতা, গোবর, কাঁচা দুধ সহ অনেক কিছু। এই ভস্ম নাগা সন্ন্যাসীদের ক্ষতিকারক পোকামাকড় কিংবা সাপের বিষ থেকে রক্ষা করে। শুধু নাগা সন্ন্যাসী নয়, নাগা সন্ন্যাসিনীও হয়। এরা সেলাইহীন হলুদ কাপড় পরিধান করেন।
• কীভাবে নাগা সন্ন্যাসী হওয়া যায়?
নাগা সন্ন্যাসী হওয়া একেবারে সহজ কথা নয়। একের পর এক কঠিন পরীক্ষার ধাপে পাস করতে হয়। তবে নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য পাওয়া যায় বিশেষ মন্ত্র। অনেকেই নাগা সন্ন্যাসীদের থেকে একটু দূরে থাকেন। আবার কেউ ভয় পান। এই ধারণা একেবারেই ভুল। এনাদের থেকে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অস্ত্র বিদ্যায় বেশ পারদর্শী। এনারা সারাদিন ঈশ্বরের সাধনা নিয়েই থাকেন। কেউ নাগা সন্ন্যাসী হতে গেলে প্রথমে নাগা সন্ন্যাসীদের কাছে এর কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়। অন্তত ৬ থেকে ১২ বছর কঠোর ব্রহ্মচর্য জীবন পালন করা প্রয়োজন। শিক্ষা শুরু হয় পাঁচ জন গুরুর অধীনে। এমনকি নিজের পিণ্ড দান এবং তর্পণ করতে হয়। প্রথমে কয়েকটি পরীক্ষায় পাশ করলে হওয়া যায় আখড়ার সন্ন্যাসী। পরে বিশেষ মন্ত্রের মাধ্যমে নাগা সন্ন্যাসী করা হয়। এনারা দিনে একবার মাত্র খাবার খান। ভুলেও কারোর নিন্দা করেন না।
শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সমস্ত ঋতুতেই নাগা সন্ন্যাসীরা একইভাবে রয়েছেন। গা ভর্তি ছাই ভস্ম মাখা। মিথ অনুযায়ী, এনারা হিন্দু ধর্মকে অন্য ধর্মের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করেন। সেই উদ্দেশ্যেই আদিগুরু শঙ্করাচার্য সাধুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। এই প্রশিক্ষণে মৃত্যুর আগে নিজের এবং নিজের পরিবারের ব্যক্তিদের পিন্ড দান করতে হয়। ত্যাগ করতে হয় সমস্ত রকম পার্থিব ইচ্ছা। মনের মধ্যে লোভ, লালসা, কাম, গর্ব এসবের বিন্দুমাত্র রাখা যাবে না। নাগা সন্ন্যাসী হওয়া মানে প্রায় কুড়ি বছরের সফর পার করা। হিসাব অনুযায়ী ১২ বছর প্রশিক্ষণ আর অন্যান্য নিয়মের কারণে নাগা সন্ন্যাসী হতে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম