বরফের ভেতর রহস্যময় সি রুট! নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজের তলায় হীরের খনি ? অন্য জগতে বাণিজ্য

।। প্রথম কলকাতা ।।

বরফের ভেতর তৈরি হচ্ছে সমুদ্র পথ! অন্য জগতে খুলছে বিশ্ব বাণিজ্যের দুয়ার। কিভাবে গোটা বিশ্বের অলক্ষ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে এতো দামী সি রুট? এই সি-রুটের নীচে কী হীরের খনির সন্ধান? নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজে কি দেখেছে গোটা বিশ্ব? সুয়েজ, পানামা হারিয়ে যাবে? গোটা দুনিয়ার বুকে কিভাবে ভেসে থাকবে এই সি-রুট? বরফের ভেতর দিয়ে কী নিয়ে ছুটবে রহস্যময় বাণিজ্যিক জাহাজ?পৃথিবীর বুকে এক রহস্যময় সি-রুট। এমন একটা পথ যা গোটা বিশ্বকে বদলে দেবে নিমেষে, এক পলকে। বরফ কেটে নয়, গোলে গোলে আপনার অজান্তে তৈরি হয়ে চলেছে এই সি রুট। সমুদ্রপথ তাহলে কি এবার বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের সবচেয়ে বড় রুট হবে এই পথ? নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজ বা উত্তর-পশ্চিম সমুদ্র পথ। ৯০০ মাইল দীর্ঘ আটলান্টিকের সাথে প্রশান্ত মহাসাগরকে যুক্ত করে এই পথ। এই সমুদ্রপথ কে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নাও মনে হতে পারে কিন্তু এর ভূমিকা কি বা কতটা সেটা বুঝতে পারবেন পরের ১ মিনিটে।

গোটা দুনিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বদলে দিতে পারে এই পথ। শত শত বছর ধরে এই সমুদ্র পথ মানুষের জানা, কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময়েই বরফে ঢাকা থাকে এই রুট। তাই এই রুট দিয়ে নিয়মিত জাহাজ চলাচল সম্ভব হয় না। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে আর্কটিক সাগরের বরফ ৪০ শতাংশ কমে গেছে। নাসা বলছে, প্রতি দশকে বরফের পরিমাণ কমছে ১৩ শতাংশ করে। আর তাই ২০৫০ অথবা ২১০০ সালে নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজও বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের জন্য একেবারে আদর্শ সমুদ্রপথে পরিণত হবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। জানলে অবাক হবেন, একটা সময় গ্রীষ্মেও এই রুট বরফে আটকে থাকতো। কিন্তু এখন? বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রত্যেক গ্রীষ্মে অন্তত কয়েক মাসের জন্য এই পথটা জাহাজ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। যা জাহাজ চলাচলের জন্য আর্থিকভাবে বেশ সাশ্রয়ী হবে। তবে এই রুটে কিন্তু যথেষ্ট চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না বরফে আচ্ছাদিত অনেক ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। তাছাড়া গভীর সমুদ্র বন্দরের অভাব রয়েছে। আর উদ্ধারকাজ এর সীমাবদ্ধতা। অতএব বাণিজ্য করতে গেলে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু বেনিফিট অনেক।

পানামা খাল ব্যবহার করে সাংহাই থেকে যদি নিউইয়র্কে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠানো হয় তবে ১০৫০০ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে কিন্তু যদি নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজ ব্যবহার করা হয় তবে পাড়ি দিতে হবে ৮৬০০ মাইল পথ।অর্থাৎ অনেকটাই কম। তাছাড়া চীন বা জাপান থেকে ইউরোপ অথবা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এই পথটি হাজার কিলোমিটার যাত্রাপথ কমিয়ে দেবে। বর্তমানে যা যাতায়াত করতে হচ্ছে সুয়েজ খাল বা পানামা খাল দিয়ে। তাহলে কি সুয়েজ খাল বা পানামা খালের বিকল্প হয়ে উঠতে যাচ্ছে এই নর্থ ওয়েস্ট প্যাসেজ বা উত্তর-পশ্চিম সি রুট? পুতিন, শি জিং পিং, বাইডেন। এই সী রুটে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন? জানিয়ে রাখি আর্কটিকের উন্নয়নের সঙ্গে আরও গভীরভাবে জড়িত হতে চাইছে চীন। কারণ এটা তাদের ইউরোপ ও অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা দেবে। এই পথের প্রবেশাধিকার নিয়েও অনেক মতভেদ রয়েছে।

কানাডা এখানে সার্বভৌমত্ব দাবি করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য দেশগুলো এই পথটিকে আন্তর্জাতিক পথ বলে মনে করে। অতএব এখানেও দখলের রাজনীতি শুরু হতে খুব বেশি দেরি হবে না এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।অলরেডি নট ওয়েস্ট শিরুট ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে এই পথে মোট ৩২ টি জাহাজ চলাচল করেছে। তারমধ্যে কার্গো শিপ যেমন ছিল তেমনি ছিল ইয়ট এবং একটা ক্রুজ শিপ ও। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন এই রুট বাণিজ্যিকভাবে খুব একটা জনপ্রিয় বা সহজ হবে না। এটাও ঠিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমেই উত্তর-পশ্চিম গোলার্ধের বরফের মাঝে খোলা জলের জায়গার পরিমাণ যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে উত্তর-পশ্চিম সি রুট ভবিষ্যতে বিশ্ব বাণিজ্যে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যে বড় ভূমিকা পালন করবে সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বিশেষজ্ঞদের আর একাংশের মতে, ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রুটই হয়ে উঠবে জাহাজ চলাচলের সবচেয়ে বড় পথ। এই শী রুটেই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য চলবে গোটা বিশ্বজুড়ে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version