Myanmar: ১৮০° অ্যাঙ্গেলে ঘুরে গেছে মিয়ানমার! সামরিক বাহিনীর পজিশন নড়বড়ে, ঘুরে দাঁড়াতে মদত জোগাচ্ছে রাশিয়া

।। প্রথম কলকাতা ।।

Myanmar: মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অবস্থান কি ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে? সামরিক বাহিনী ছেড়ে সেনারা পালাচ্ছে। নতুন করে সৈন্য নিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সামরিক জান্তা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র আন্দোলন দমনে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। বেসামরিক বাহিনীতে লোকজনের যোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কোন পথে এগোচ্ছে মিয়ানমার? কিভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হলো দেশটার অভ্যন্তরে? রাশিয়ার প্ল্যানিংয়ে ভর করেই কি ঘুরে দাঁড়াবে মিয়ানমার?

কেউ ভেবেছিল এই ২ বছরে এভাবে বদলাবে মিয়ানমার? ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরের ছবিটার সঙ্গে এখনের ছবির বিস্তর ফারাক। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, অলরেডি ২ বছরে ১৩ হাজার সৈন্য ও পুলিশ বাহিনী ছেড় পালিয়ে গেছে। কেউ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে চাইছে না। সেনাদের নিষ্ঠুরতা, অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মিয়ানমারের মানুষ ঘৃণা করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ছেড়ে পালানো সৈন্য ও তাদের পরিবার-পরিজন আত্মগোপন করে রয়েছে। তাঁরা নিজেদের দেশের লোকজনের সঙ্গে আর যুদ্ধ করতে চাইছে না। পুরো বিষয়টা ১৮০° অ্যাঙ্গেলে ঘুরে গেছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে তারাই এখন পালিয়ে আসা সৈন্যদের আশ্রয় দিচ্ছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে।

কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো?

সামরিক বাহিনী ছেড়ে যাওয়া সৈন্যদের মধ্যে কেউ কেউ থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। বিবিসিকে জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর ভক্ত ছিলেন তাঁরা, গর্ব করে যোগ দিয়েছিলেন তাতে। তারপর, সোশ্যাল সাইটে তাদেরকে নিয়ে অনেক অপমানজনক কথাবার্তা চলতে শুরু করে। এতে তাদের খারাপ লাগতে শুরু করে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া, লোকজনকে হত্যা করা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এগুলো তাঁদের করতে হয়েছে।

তাহলে মানবিকতা, বিবেকবোধ আর নীতিবোধই কি পাল্টে দিচ্ছে মিয়ানমারকে? সামরিক বাহিনী ছেড়ে আসা মানুষজনই তো বলছে। সামরিক বাহিনীর অবস্থান এখন অনেকটাই দুর্বল। পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে যে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বেসামরিক মিলিশিয়া গ্রুপের নেটওয়ার্ক, পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস বা পিডিএফের পাশাপাশি আরো যেসব জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপ, সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সেগুলো বরং এখন অনেক বেশি শক্তিশালী বাহিনী হয়ে উঠেছে। আগে, প্রচুর লোকজন সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করা হতো, এখন সামরিক বাহিনীর পরিবর্তে বেসামরিক মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে। শুনলে অবাক হবেন, পিডিএফের প্রতি লোকজনের এতোটাই সমর্থন যে গ্রামবাসীরা সামরিক বাহিনীর ব্যাপারে তাঁদেরকে গোপনে তথ্য সরবরাহ করছে।

যেখানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশের অনেক জায়গায় তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি তাঁদের হাতে এখন খুব বেশি সৈন্যও নেই। উপায় না পেয়ে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখন বিমান বাহিনীকে খুব বেশি ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামরিক বাহিনী সারা দেশে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে। একাধিক নারী, শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমান বাহিনী নায়থাকলে সামরিক বাহিনীর পতনের সম্ভাবনা বেশি। এরইমধ্যে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের কোনো সৈন্য অথবা নাবিক সামরিক বিমান অথবা নৌযান নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ালে, নির্বাসিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের তরফে তাকে পাঁচ লাখ ডলার পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ সেরকম কিছু করেনি।

আসলে, সামরিক বাহিনী ছেড়ে যাওয়া লোকজনই বলছে বছরের পর বছর ধরে মগজ-ধোলাই করার পরে কারো পক্ষে সামরিক বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। এটা মানতে হবে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর নিন্দার কারণে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। যদিও একটা কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে, রাশিয়া এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে, ফলে তারাই এখন হয়ে উঠেছে দেশটির সামরিক জান্তার সবচেয়ে বড় বিদেশি সমর্থক। কিন্তু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে বিপ্লবের আগুন জ্বলছে মিয়ানমারে তা শেষ হবে কোন পথে? সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version