Iran-Saudi Arabia conflict: এক হচ্ছে মুসলিম দেশগুলো ! প্রকট হচ্ছে সৌদি-ইরানের দ্বন্দ্ব

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

Iran-Saudi Arabia conflict: ইরান-সৌদির জোটই পারে সন্ত্রাস দমন করতে, তৈরি হচ্ছে মুসলিম ন্যাটো।  জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে এক হচ্ছে মুসলিম দেশগুলো। নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। কিন্তু সেখানে আশ্চর্যজনক ভাবে নেই ইরান, কিন্তু কেন? সৌদি-ইরানের দ্বন্দ্ব কি আবার প্রকট হচ্ছে? অথচ সন্ত্রাস রুখতে এই দুই দেশের এক হওয়াটা যে বড্ড দরকার। গোটা বিশ্বজুড়ে জঙ্গি বাহিনীর দাপট বড় হুমকি। অতিষ্ট মুসলিম দেশগুলো। আর তাই নতুন রুপে প্রস্তুত হচ্ছে মুসলিম ন্যাটো, কীভাবে কাজ করবে? আদৌ প্ল্যান সাকসেস ফুল হবে তো? জঙ্গি আক্রমণ কেন কমানো যাচ্ছে না? মুসলিম দেশগুলো জোট না বাঁধলে মুশকিল, সবটা বদলে দিতে পারে ইরান-সৌদির বন্ধুত্ব।

 

জঙ্গি আক্রমণের ফলে যে ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়, বিশেষ করে প্রাণহানি ঘটে, তা ভালোভাবে জানে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ এর চরম ভুক্তভোগী। আর তাই জঙ্গি দমন করতে কড়া হাতে বড় দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে সৌদি আরব। সেই ২০১৫ সালে ৩৪টা ইসলামিক দেশ নিয়ে তৈরি করে ফেলে ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেরিরিসম। যা পরিচিত মুসলিম ন্যাটো বলে। যার নেতৃত্বে ছিলেন সৌদি আরবের তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মহম্মদ বিন সালমান। এই জোটের লক্ষ্য, ইরাক সিরিয়া মিশর লিবিয়ার মত দেশে জঙ্গিদের কার্যকলাপ রুখে দেওয়া। কিন্তু বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে এই মুসলিম ন্যাটো নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজারো সংশয়। সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে তো? এই জোটের অন্দরে অন্দরে প্রচুর প্রশ্ন। ভাঙ্গনের ইঙ্গিত। কারণ একটাই, মুসলিম ন্যাটো বলা হলেও, বিশ্বের বহু মুসলিম দেশ এই জোটে নেই। যেহেতু সুন্নি আধিপত্য সরকার নিয়ে এই সংগঠন শুরু হয়েছিল, তাই শিয়া আধিপত্য কোন সরকারকে এই সংগঠনের সাথে সেই সময় যুক্ত করেনি। মুসলিম ন্যাটো পরিচালিত হয় জাতিসংঘ আর অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন দ্বারা। বর্তমানে এর সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪১ টি দেশ, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের অন্তর্ভুক্ত।

 

বিতর্কে জর্জরিত মুসলিম ন্যাটো, স্পষ্ট শিয়া-সুন্নি বিভেদ

এই মুসলিম ন্যাটো সংগঠনটি যখন তৈরি হয়, তখন দেখা দিয়েছিল প্রচুর আশার আলো। পাকিস্তান সৌদি আরবের দেশ ছাড়াও তুরস্ক আরব আমির শাহী ওমান বাংলাদেশ নাইজেরিয়ার মত বহু দেশ এই সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত রয়েছে। কিন্তু ওই যে, পদে পদে রয়েছে শুধুই বিতর্ক। এই সংগঠনে পাকিস্তানের যোগ দেওয়াটাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখেনি কূটনৈতিক মহল। অনেকেই মনে করেছিলেন, পাকিস্তানের জন্য এই বাহিনীর সঙ্গে ভারতের শত্রুতা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও পাকিস্তানের শিয়া সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করেছিল। মূলত আইএস বাহিনীকে রুখতে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ বাহিনী। এখনো কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, সব ইসলামিক দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক মজবুত নয়। এই সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তান যুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেশের বাইরে এখনো পর্যন্ত পাকিস্তান কোন অভিযানে সেনা পাঠায়নি। বহু সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু সৌদি আরবের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো, সেই খাতিরে ইসলামাবাদকে এই সংগঠনে যুক্ত করা হয়েছে। পাকিস্তানকে সৌদি নানান ভাবে অর্থ দিয়েও সাহায্য করে থাকে। অপরদিকে কূটনৈতিকভাবে সৌদি আর ইরান একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি। আর এখানেই তো আসল সমস্যা। কারণ এই দুই দেশ ইসলামিক বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চায়। কেউ কাউকে এক চুলও জায়গা ছেড়ে দিতে চায় না। যেহেতু সৌদির নেতৃত্বে এই মুসলিম ন্যাটো, তাই এখানে ইরান আজও পর্যন্ত যোগ দেয়নি। এছাড়াও এই জোটের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও কিন্তু মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন মুসলিম ব্রাদারহুড, লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলো আল কায়দা এবং আইএসকে নিয়ে নানান সময় তাদের ভিন্ন মত পোষণ করেছে।

 

ওদিকে কাতার এই জোটের অংশ থাকলেও প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল না। ইরানের সাথে কাতারের সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। যার কারণে সৌদি মিত্ররা কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। আবার এই জোটের অন্যান্য সদস্য যেমন তুরস্ক, সেই সময় কাতারের সাহায্যে এগিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, একটা সময় পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান এই জোটের সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তেহেরানের সাথে ইসলামাবাদের ঘনিষ্ঠতা, তাই সেই সম্পর্কের কারণে তৈরি হয় তুমুল বিতর্ক।

 

মুসলিম ন্যাটোর টার্গেটে ইরান, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়ানোর লড়াই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই সৌদি আরবসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থী মতাদর্শের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছে। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, মুসলিম ন্যাটো আরব ইসলামিক বিশ্বের কাছে একটা স্পষ্ট সংকেত দিতে চায়। যে সৌদি আরব আঞ্চলিক নীতিতে মূল এজেন্ডার নির্ধারণ । আবার কেউবা বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সৌদির নাকি এটা একটা বড় হাতিয়ার। তাহলে কি এই জোটের মূল টার্গেটে রয়েছে ইরান? প্রশ্নটা উঠতেই পারে। আর উঠছেও। কারণ মুসলিম ন্যাটোর সদস্যরা সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা সুন্নির নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর অন্তর্গত। যা মধ্যপ্রাচ্যে আরো গভীর করতে পারে শিয়া সুন্নি বিভাজন। যে কারণে এই জোটে অন্তর্ভুক্ত নেই সিরিয়া আর ইরাক। সত্যি বলতে, এই জোট একটা সময় এমন ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল, যখন রিয়াদ এবং তেহেরান ইয়েমেন, সিরিয়া আর লেবানন সহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাবের জন্য লড়াই করছে।

 

জোটে মত পার্থক্য নয়, দরকার ইরান-সৌদির বন্ধুত্ব

মুসলিম ন্যাটো ইরাক সিরিয়া লিবিয়া মিশর এবং আফগানিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টাকে সমন্বয় করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল, সেখানেও রয়ে গিয়েছে বড় ফাঁকফোকর। তখনই এই সফলতা পাবে, যখন ইরান ইরাক সিরিয়ার মত শিয়া সরকার সহ অন্যান্য দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক বিশেষ বিশ্লেষকরা।। কারণ কিছু বিশ্লেষকের মতে, ইরানের সাথে মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে সৌদি আরব। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব স্থানীয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য সৌদির প্রচেষ্টার অংশ মাত্র এই ন্যাটো মুসলিম। তবে হ্যাঁ, ইবাদি প্রধান দেশ ওমানও কিন্তু এই জোটে যোগ দিয়েছে। লেবানন জোটকে সমর্থন করেছে। অন্যান্য দেশ যারা এই জোটের অংশ বা সমর্থন করে তাদের ইরানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ কুয়েত লিবিয়া পাকিস্তান।

 

যদি মুসলিম ন্যাটো নিয়ে এই দেশগুলোর ভাবনার কথা বলা হয়, সেখানে কিন্তু যথেষ্ট ঐতিবাচক ধারণাই রয়েছে। ২০১৫ সালে এই জোটে যোগদানকারী প্রাথমিক সদস্যদের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। সেই সময় দেশটি একটি যৌথ বিবৃতিতে তার সদস্যপদ নিশ্চিত করে। বলে, সমস্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং সংগঠনের মন্দ থেকে ইসলামিক জাতিকে রক্ষা করা তাদের কর্তব্য। যদিও এই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন সামরিক সহায়তা জড়িয়ে নেই। প্রসঙ্গত চীনও কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই জোটের সাথে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। মিশরের মতে, ন্যাটো মুসলিমের জোট ঐতিহাসিক একটা সিদ্ধান্ত। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন জোটকেও স্বাগত জানিয়েছিল। জার্মানি তো রীতিমত জোর দিয়েই বলেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ রাশিয়া তুরস্ক সৌদি আরবের মত আইএস এর বিরুদ্ধে লড়াই করা সমস্ত দেশকে এক ছাতার তলায় আসা উচিত। সোজা কথায়, শুধু মুসলিম বিশ্বই নয় বরং মুসলিম ন্যাটো পশ্চিমাদের কাছেও যথেষ্ট জনপ্রিয়।

 

তাই তো আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, মুসলিম ন্যাটোর উদেশ্য তখনই সফল হবে, যখন মুসলিম দেশগুলো এক জোট হয়ে একে অপরের পাশে থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তার আগে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটানো জরুরি। দেশগুলো একে অপরের ব্যক্তিগত সমস্যার সাথে সমঝোতা করে জোট বাঁধলেও পরে তা ব্যর্থ হচ্ছে। এমত পরিস্থিতিতেও ভীষণ ভাবে দরকার সৌদি আর ইরানের বন্ধুত্ব।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version