Morocco: মুসলিম বিশ্বের গর্বের দেশ মরক্কো ! কিন্তু কেন ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Morocco: স্রষ্টার দেশ মরক্কো। রয়েছে ইউরোপের একদম কাছে, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উত্তর আফ্রিকার এই দেশ যে কোনও মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে অত্যন্ত গর্বের। মরক্কো নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুন্দর দৃশ্যপট। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য থেকে শুরু করে চোখ জুড়ানো প্রকৃতি, অতিথি পরায়ণ মানসিকতায় দেশটার সুনাম দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, যাপন, বিনোদন সব ক্ষেত্রেই মরক্কো যেন সুন্দর দেশ। কি আছে এই দেশের মাটিতে? কেনই বা মরক্কো কে নিয়ে মুসলিম বিশ্বের এত গর্ব? যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে একদিন ইউরোপও হার মানবে মরক্কোর কাছে। কোন সিক্রেটে মুসলিম বিশ্বের নাম উজ্জ্বল করছে দেশটা? মরক্কোকে দেখে শিখছে গোটা বিশ্ব।

 

ভূমধ্য সাগরের উত্তরে আর ভারত মহাসাগরের পূর্বে অবস্থিত বিচিত্র এক মহাদেশ আফ্রিকা। যার আয়তনই বলুন আর জনসংখ্যা, উভয়ের বিচারে এখানে বসবাস করে বিশ্বের মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ। আর আফ্রিকার নাম চলে এলেই উন্নত প্রগতিশীল দেশ হিসেবে চলে আসে মরক্কোর নাম। আরবি শব্দ মরক্কোর অর্থ পশ্চিমের রাজ্য। এটি আফ্রিকার একদম পশ্চিমের দেশ। মরক্কো নামটি এসেছে দেশটির আগের রাজধানী মারাক্কেশ থেকে। যার অর্থ স্রষ্টার দেশ। আবার কেউবা বলেন দুই সাগরের দেশ। যার পূর্বে রয়েছে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন, পশ্চিমে আটলান্টিসাগর আর দক্ষিণ সীমানা তো নিয়ে চলছে তুমুল বিরোধ। এই মরক্কো একমাত্র আফ্রিকান দেশ, যে দেশ আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য নয়। কি আশ্চর্য না? অথচ দেশটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ। আরব লীগ, ওআইসি, গ্রুপ অফ ৭৭ প্রভৃতি জোটের সদস্য। দেশটা গোটা বিশ্বের কাছে একটু আলাদা, তাই তো প্রায় সময় আলোচনায় থাকে।

 

বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের কাছে মরক্কোর মর্যাদা যেন একটু বেশি। এটি উত্তর আফ্রিকার একমাত্র দেশ, যেখানে কখনো অটোমান শাসকদের রাজত্ব ছিল না। ৮ হাজার বছর আগেও এখানে মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথমদিকে এখানে রোমানরা শাসন চালালেও, খ্রিস্টের জন্মের সপ্তম শতকে আরব মুসলিমরা এখানে আসতে শুরু করে। তারাই মরক্কোতে ছড়িয়ে দেন ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা। তারপর প্রায় এক হাজার বছর মরক্কোর শাসন ভার ছিল আরব মুসলিমদের হাতে। একাধিক মুসলিম শাসক সে সময় মরক্কো শাসন করেছেন। তারপর ১৮৩০ সালের দিকে ফ্রান্স প্রবেশ করে মরক্কোতে। পিছু পিছু আসে ব্রিটিশ, জার্মান। সবারই লক্ষ্য ছিল মরক্কোতে উপনিবেশ স্থাপন করা। বিদেশি পরাশক্তিগুলোর লোভ থেকে সেই সময় মরক্কো রেহাই পায়নি। মরক্কোর মাটি দখল করতে একের পর এক বাঁধে যুদ্ধ। একটা সময় ছিল, যখন স্পেন আর ফ্রান্স মিলে প্রায় ৪০ বছর মরক্কোকে ভাগাভাগি করে শাসন করেছে। ১৯১২ থেকে ১৯৫৬ সাল, দেশটা তার ইতিহাসের সবচেয়ে চড়াই উতরাই দেখেছে এই পর্বে। ১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীন হয়।

 

এই মরক্কো বিজয়ের পর মুসলিমরা নাকি কোনও স্থানীয় বার্বারকে ধর্মান্তরণে বাধ্য করেননি। মরক্কো নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে কম ঝড় ঝাপটা সহ্য করেনি। দীর্ঘ ১০০ বছরে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী আর কলোনিকে একত্র করে জন্ম হয়েছিল এই রাষ্ট্রের। মরক্কো কিন্তু ইউরোপের খুবই কাছে, অথচ ইউরোপ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই হয়তো মরক্কোর ঐতিহ্যের পাশাপাশি প্রগতির মেলবন্ধনও অত্যন্ত সুন্দর। একদিকে যেমন রয়েছে আধ্যাত্মিকতা, অপরদিকে রয়েছে আধুনিকতা।

 

এই যে মরক্কো নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তার আসল কারণটা হল এই জায়গাটাতে গিয়ে। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটা দেশে অর্থনৈতিক প্রগতি থেকে শুরু করে আধুনিকতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে মরক্কো আজ একটা মডেল। আফ্রিকার দেশ হয়েও কিভাবে যে নিজেদেরকে উন্নত করতে হয়, আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, তা মরক্কো খুব ভালোভাবেই জানে। এই তো গত ফুটবল বিশ্বকাপে মুসলিম বিশ্বের মন জয় করে নিয়েছিল দেশটা। কাতারে যেন লিখেছিল নতুন রূপকথার গল্প। মরক্কো কেবল প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসেবেই নয়, প্রথম আরব দেশ হিসেবেও সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। সেদিন মরক্কো যেন প্রতিনিধিত্ব করছিল মুসলিম বিশ্বের

প্রত্যেক দেশের হয়ে। সেই জয় ছিল আরব বিশ্বের জয়, আর একটা মোক্ষম কড়া জবাব।

দেশটার জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লক্ষেরও বেশি, আয়তনে প্রায় ৭ লক্ষ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার। প্রধান ভাষা আরবি হলেও, পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ এবং স্প্যানিশ ভাষাও বেশ ভালোভাবে প্রচলিত। যদিও গত বছরগুলোতে মরক্কো এবং আলজেরিয়া উভয় দেশই তাদের সাবেক উপনিবেশিক শাসকদের ভাষার উপর নির্ভরতা দূর করার চেষ্টা করছে। যার প্রেক্ষিতে ফরাসির পরিবর্তে এই দেশ দুটির সরকার ইংরেজি ভাষা চালু করার প্রচেষ্টায় রয়েছে। মরক্কোর প্রধান ধর্ম ইসলাম। খনিজদের দ্রব্যের ক্ষেত্রে বেশ সমৃদ্ধ মরক্কোর মাটি। এছাড়া প্রধান রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছ থেকে তৈরি খাদ্য এবং ফল। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ বছর আগে মরক্কোতে নাকি জনবসতি গড়ে উঠেছিল। তখন দেশটা ছিল একেবারেই অনুর্বর, বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক মরুভূমি। কিন্তু এখন সেই মরক্কো হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে এক অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। আর মরক্কো নিয়ে এত কথা হবে নাই বা কেন বলুন তো? এমন একটা দেশ, যেখানে ক্রমান্বয়ে বসতি করেছিল বারবার, ফোনেশীয়, ইহুদি ও সাব সাহারার লোকজন।

 

তবে বলা হয়ে থাকে, ইসলাম ধর্ম নাকি এখানে উন্নত সংস্কৃতি আর উন্নত জীবনোচরণ নিয়ে এসেছে। দেশটা প্রায় ১৬ টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত, যেগুলোকে ভাগ করা হয়েছে ৬২ প্রদেশে। মরক্কোর শিক্ষা ব্যবস্থা সত্যি অবাক করার মত। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক। হিসাব অনুযায়ী, এটা আফ্রিকার দেশ হিসেবে কিংবা মরক্কোর ক্ষেত্রে একটা বড় বিপ্লব। শিক্ষা ক্ষেত্রে এই অগ্রগতির জন্য ইউনেস্কো দেশটিকে ২০০৬ সালে পুরস্কৃত করে। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর প্রথম এবং পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নাকি এক মুসলিম নারী। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয় আল-কারাউইন অবস্থিত মরক্কোর ফেজে। ইউনেস্কো এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে, এটাই বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় সাড়ে ১১০০ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছিল, যা এখনো পর্যন্ত একটানা চালু রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মুসলিম ইতিহাসে এই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে আধ্যাত্মিক এবং শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই। অপরদিকে কিছু নেতিবাচক বিষয়ও রয়েছে। মরক্কো শিশুদের ৭ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হয়। কিন্তু বহু শিশু স্কুলে যেতে পারে না। দারিদ্রতার কারণে কাজ করতে হয় বাবা-মায়ের সঙ্গে। শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশটার নারীরাও অনেক পিছিয়ে।

 

যদি ভৌগলিক অবস্থানের কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রেও কিন্তু দেশটা রয়েছে বিচিত্র অবস্থানে। মরক্কো আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগর আর ভূমধ্যসাগর দ্বারা বেষ্টিত। স্থল সীমান্ত রয়েছে আলজেরিয়া আর পশ্চিম সাহারার সাথে। এই অঞ্চল দুটির অবস্থান যথাক্রমে মরক্কোর দক্ষিণ এবং পূর্বে। বলা হয়, মরক্কোর আয়তন নাকি ক্যালিফোর্নিয়ার সমান। দেশটাকে সাহারা থেকে আলাদা করেছে উঁচু অ্যাটলাস পর্বতমালা, তবে বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম। এতটাই কম যে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে হ্যাঁ, প্রকৃতি মরক্কোকে সাজাতে কোন কার্পণ্য করেনি। দেশটার মানুষ ভীষণই অতিথি পরায়ণ। বাড়িতে কোন অতিথি এলে তারা চা দিয়ে বরণ করে নেন। মরক্কোর খুব সাধারণ দৃশ্য বলতে মসজিদ আর বাজার। কিন্তু প্রত্যেক মসজিদেই থাকে দৃষ্টিনন্দন লম্বা মিনার। সব মিলিয়ে নান্দনিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত সুন্দর দেশ মরক্কো।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version