Chaitra Sankranti 2023: নববর্ষের তুলনায় বেশি উপভোগ্য চৈত্র সংক্রান্তি, আনন্দের জোয়ারে ভাসে গ্রাম

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Chaitra Sankranti 2023: ২০২৩ এর ১৫ এপ্রিল শুরু হবে নতুন বছর। বিদায় জানানো হবে পুরনোকে। এই দিন বাঙালি বাংলায় ১৪৩০ সালে পদার্পণ করবে। পিছনে পড়ে থাকবে ১৪২৯ সালের সমস্ত হাসি দুঃখ মাখা স্মৃতি। পহেলা বৈশাখ পড়েছে শনিবার। ঠিক তার আগের দিন পালন করা হবে চৈত্র সংক্রান্তি(Chaitra Sankranti)। চৈত্র সংক্রান্তি আর নববর্ষ যদি এই দুটি পাশাপাশি রেখে তুলনা করা হয় তাহলে উৎসবের আমেজের দিক থেকে চৈত্র সংক্রান্তির পাল্লা কিছুটা হলেও ভারী। আজও গ্রাম বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে হাজারো নিয়ম এবং নানান অনুষ্ঠান প্রচলিত রয়েছে। নববর্ষের আনন্দের এক দাগ বেশি উপভোগ করা যায় চৈত্র সংক্রান্তিতে। বাংলা মাসের শেষ দিন গুলিকে বলা হয় সংক্রান্তি । বহুকাল আগে গ্রাম বাংলার দিকে প্রত্যেক সংক্রান্তি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , কিন্তু সভ্যতার আধুনিকতার দৌড়ে সেইসব সংক্রান্তি চাপা পড়ে গিয়েছে। এখন জনপ্রিয় রয়েছে দুটি সংক্রান্তি, একটি পৌষ সংক্রান্তি, অপরটি হল চৈত্র সংক্রান্তি। এই দুই সংক্রান্তিকে ঘিরে বাঙালি চরম আনন্দ উপভোগ করে। একবারও কি ভেবে দেখেছেন বাংলা শেষ মাসের নাম চৈত্র কেন হল ? জানতে প্রতিবেদনটি পুরোটা পড়ে দেখুন।

 

শেষ মাসের নাম চৈত্র কেন ?

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী চৈত্র মাসের নাম হয়েছে তিক্রা নক্ষত্র থেকে। পুরাণ অনুযায়ী, দক্ষরাজের সুন্দরী মেয়েদের নামকরণ করা হয়েছিল ২৭ টি নক্ষত্রের নাম অনুযায়ী। দক্ষরাজের দুই মেয়ে এক মাসের ব্যবধানে জন্মান, তাঁদের নাম ছিল চিত্রা এবং বিশাখা। চিত্রা থেকে নাম হয় চৈত্র মাসের এবং বিশাখা থেকে নাম হয় বৈশাখ মাসের। চৈত্র মাস দিয়ে বছর শেষ, আর নতুন বছরের শুরু হয় বৈশাখ মাস দিয়ে। এই দুই মাসের শেষ এবং শুরুতে আনন্দ উপভোগ করেন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক বাঙালি মানুষ।

 

শিরনি
চৈত্র সংক্রান্তির দিন বড় তাল গাছের নিচে ডাবের জল, খেঁজুরের গুড়, পাকা কলা , দই, আটা বা ময়দা মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ শিরনি। সেই শিরনি খাওয়ার মজাই আলাদা। এই বিশেষ শিরনি দেওয়ার জন্য খুঁজে বার করা হয় গ্রামের মধ্যে সবথেকে বড় তালগাছটিকে।

 

নীল পুজো
বিশেষ করে চৈত্র সংক্রান্তিতে ঘিরে এখনো পর্যন্ত গ্রামবাংলায় প্রচুর নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। চৈত্র সংক্রান্তির ঠিক আগের দিন আয়োজন করা হয় নীল পুজো কিংবা নীল উৎসবের। কুমির তৈরি করে সেই কুমিরের গালে জ্বালানো হয় মোমবাতি , পুজো করা হয় বুড়ো শিবের। গ্রামে গ্রামে গাজনের দল নানান সুরে গান গাইতে থাকেন।

 

নিমপাতা বাটা
আজও বহু জায়গায় নববর্ষের দিন মাখা হয় নিম পাতা এবং হলুদ বাটা । সেই অনুযায়ী চৈত্র সংক্রান্তির দিন বিকালে হলুদ জোগাড় করে রাখা হয়। যদিও এখন বেশিরভাগ মানুষ দোকান থেকেই কিনে নেন। মনে করা হয়, সারা বছরের নানান রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয় নববর্ষের এই নিম হলুদ।

 

বিশেষ শরবত
চৈত্র সংক্রান্তিতে প্রচলিত আছে বিশেষ শরবত। দই, পাকা বেল আর গমের ছাতু দিয়ে এই শরবত বানানো হয়। গ্রামে গঞ্জের হাটে-বাজারে বিক্রেতারা ক্রেতাদের শরবত দিয়ে বিশেষভাবে আপ্যায়ন করেন। আয়োজন করা হয় চড়কের মেলার। চৈত্র সংক্রান্তি নিয়ে যতই বলা হোক না কেন, শেষ করা যাবে না। কারণ পশ্চিমবাংলার বহু জায়গায় এই দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নিয়ম প্রচলিত রয়েছে । একই ভাবে বাংলাদেশও চৈত্রসংক্রান্তি সমান ভাবে জনপ্রিয়।

 

শাকান্ন
চৈত্র সংক্রান্তির দিন আজও প্রচলিত আছে শাকান্ন খাবার অর্থাৎ এই দিন গ্রাম বাংলার মহিলারা সকাল হলেই চলে যান শাক তুলতে। অনেকে বাজার থেকে ১৪রকম শাক কিনে নিয়ে আসেন, তারপর দুপুরে সেই ১৪ রকম শাক দিয়ে চলে আহার। এই দিন একেবারেই নিষিদ্ধ মাছ আর মাংস।

 

চৈত্রে চড়ক
চড়ক পুজোর আগের দিন চড়ক গাছকে ভাল করে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর জলভরা একটি পাত্রে শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত। এই পুজো করেন পতিত ব্রাহ্মণরা। চড়কগাছে সন্ন্যাসীদের চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গে জ্বলন্ত বাণ শলাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার রীতিও রয়েছে। এছাড়াও চড়কে জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, গায়ে ধারালো জিনিস ফোটানো, ধারালো কিছুর ওপর লাফানো প্রভৃতি করা হয়। স্থানভেদে নিয়মের পার্থক্য রয়েছে।

 

পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, নদীয়া, তারকেশ্বর, বাঁকুড়া, হুগলির বেশ কয়েকটি গ্রামে এই উৎসব পালিত হয়। এছাড়াও আরও অনেক জায়গায় চড়ক পুজোর প্রচলন রয়েছে। মূলত গ্রামাঞ্চলে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। চড়কের জন্য বিশেষ মেলাও বসে। উত্তরবঙ্গেও চড়ক খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে মালদা, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের চড়ক দেখতে আজও ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। এভাবেই বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে চড়ক বা গাজন।

Exit mobile version