Michigan: শীতে পাখিদের স্বর্গরাজ্য মিশিগান, বরফের মাঝে বদলায় গায়ের রং!

।। চিনু মৃধা ।।

Michigan: মিশিগানে (Michigan) শীতকালের শুভ্র বরফ দেখার মত, আর তার মাঝে বরফের পাখিগুলো যেন প্রকৃতিকে রঙের ছোঁয়া দিয়ে যায়। ভালবাসার পাখি চোখ ধাঁধানো লাল কার্ডিনাল ও নীল পাখি ব্লুজে যখন ধবধবে বরফে ঢাকা সাদা গাছগুলোতে বসে থাকে, আপনার বাড়ির আঙিনার রূপটাই পরিবর্তন করে দেয়।

মিশিগানের (Michigan) ঋতু পরিবর্তন যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি পাখিদের আনাগোনাও দেখার মতো। এখানকার গাছ পালা, ঝোপ জঙ্গল, নদী, হ্রদ সব কিছু যেন পাখিদের বিচরণ করার অবাধ ভূমি। গ্রীষ্মে অনেক পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে উড়ে দূর দূর থেকে আসে, আবার শীত আসার আগেই তারা দল বেঁধে উড়ে দূর নিলীমায় হারিয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু পাখি মিশিগানেই থেকে যায়। মিশিগান ওদের ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’। মিশিগান শীতকালে পাখি প্রেমিক হওয়ার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা! “গ্রেট লেক” রাজ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে, যেগুলি শীতের মাসগুলিতে এখানে দেখা যায়। যে পাখিগুলো মিশিগানের প্রচন্ড শীতেও এখানে থাকে তাদের নামের লিস্টও কম বড় নয়। ব্লু জে, কার্ডিনাল, আমেরিকান রবিন, কাঠঠোকরা, কালো চিকাডি, হাউস স্প্যারো, হাউস ফিঞ্চ, আমেরিকান গোল্ডফিঞ্চ, ডার্ক-আইড জুনকো, টিটমাউস, হোয়াইট-ব্রেস্টেড নুথাচ, আমেরিকান কাক, আমেরিকান ট্রি স্প্যারো, ঘুঘু পাখি প্রভৃতি।

এদের অনেকেই শীতে রঙ বদলায়। যেমন মিশিগানের জাতীয় পাখি (National Bird) রবিন, বসন্ত কালে উপরের পাখা দেখতে ধুসর হলেও পেটের দিকটা উজ্জ্বল কমলা রঙে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শীতকালে রঙ পরিবর্তন করে ঘন ধুসর হয়ে যায়, হালকা একটু কমলা রঙের আভা দেখা যায়। গোল্ড ফিন্স আর হলুদ রঙের থাকে না, ধুসর রঙ ও গলার কাছে হালকা হলুদ দেখা যায়। শীতকালে অনেক পাখির খাওয়ার অভ্যাসও পরিবর্তন হয়। সাধারণত পাখিরা বিভিন্ন ধরনের বীজ, বেরি ও ফল খেয়ে থাকে, কিছু কিছু পাখি পোকা মাকড় খায়। শীতকালে ওরা বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন বেরি খায়। যেহেতু শীতে সব বরফে ঢেকে যায়, ওদের তখন খাদ্য সংকট হয়। ওরা তখন দল বেঁধে খাদ্যের সন্ধানে ছোটে। যেখানে খাবার সেখানেই পাখির ঝাঁক দেখা যায়। এজন্যই শীতের পাখিদের খাওয়ানো মিশিগানের পাখিপ্রেমীরা বেশ গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং তাদের বাড়ির আঙিনায় বার্ড ফিডার ঝুলিয়ে দেয়। নিশ্চিত করে যে তাদের ফিডারগুলিতে যেন সব সময় বার্ড সীডসে মজুত থাকে।

মিশিগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম তুষারময় রাজ্য হিসাবে পরিচিত, যেখানে প্রতি বছর গড়ে ১০০ ইঞ্চি তুষারপাত হয়। মিশিগানের দক্ষিণাঞ্চলে, তুষারপাত সাধারণত হালকা হয় এবং তাপমাত্রা উত্তরের তুলনায় হালকা হয়। উত্তরে গ্রেট লেকের কারণে ঠান্ডা ও তুষারপাত হয় প্রচুর। অনেকেই ভেবে অবাক হয় যে মিশিগানে বিভিন্ন ধরনের পাখির আবাসস্থল, এমনকি ঠান্ডা শীতের মাসগুলিতেও। তাহলে এই প্রচন্ড শীতে পাখিরা কীভাবে বেঁচে থাকে? পাখিরাও নিজেদের উষ্ণ রাখার পদ্ধতি জানে। ওরা পালক দিয়ে ঠান্ডা প্রতিরোধ করে। কিছু পাখির বিশেষ অভিযোজনও রয়েছে যা তাদের শরীরের তাপ সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে, যেমন ফ্লাফড-আপ পালক বা চর্বির অতিরিক্ত স্তর। অনেক পাখি শরীরের তাপ ভাগ করে নেওয়ার জন্য দলে দলে একত্রিত হয়। ঠিক মানুষের মতো, উষ্ণ থাকার জন্য ওরাও কাঁপুনি পদ্ধতি ব্যবহার করে। পাখিদের হজম শক্তি খুব বেশি এবং উষ্ণ থাকার জন্য আমাদের চেয়ে বেশি শক্তি পোড়ায়। অনেক পাখি কাঁপুনিতে ফোলে, গোলগাল ভাবে গুটি শুটি ভাবে গাছের ডালে বসে থাকে, অনেক পাখি পা গরম রাখার জন্য একপায়ে কাচুমাচু হয়ে ঘুমিয়ে থাকে, আবার পা পরিবর্তন করে অন্য পায়ে ঘুমায়। ব্ল্যাক-ক্যাপড চিকাডির ওজন মাত্র আধা আউন্সেরও কম এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বজায় রাখতে পারে – এমনকি বাতাস শুন্য ডিগ্রি হলেও। তারা দুর্দান্ত সক্রিয় হয় খাবারের সন্ধান ও সঞ্চয় করার জন্য, আর এই সক্রিয়তা ওদের উষ্ণ রাখে।

এই হাড়কাঁপানো শীতে কোথায় ঘুমায় ওরা?

প্রায়শই, তারা শীতের রাতগুলি উঁচু গাছের ডালে, গাছের কোটরে রাত কাটায়। কিছু কিছু পাখি চিরসবুজ পাইন গাছ ও ঝোপে রাত কাটায়। পাখি প্রেমিকরা শীতকালে পাখিদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তারা তাদের আঙিনায় সুয়েট, চিনাবাদাম এবং কালো সূর্যমুখী বীজের মতো উচ্চ প্রোটিন যুক্ত বীজ বার্ড ফিডারে দেয়। তারা বাড়িতে কিছু ছোট, বড়, চিরহরিৎ ও অনেক ঝোপ গাছ রোপণ করে। এই গাছগুলো থাকা অপরিহার্য, কারণ পাখিরা প্রচন্ড শীতের সময় এইসব গাছে আশ্রয় নিতে পারে৷ কিছু কিছু চিরহরিৎ গাছে শীতকালে বেরি (Berry) ফল হয়, যেগুলো পাখিরা খেতে পারে। আর গাছ তো পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। একটু পরিকল্পনা করে বাড়িতে গাছ পালা রোপন করলে, পাখিদের খাবারের জন্য বার্ড ফিডার, স্নান বা জলের জন্য বার্ড বাথ রাখলে খুব সহজেই আপনিও পাখিদের বন্ধু হতে পারবেন এবং বাড়ির আঙিনাকে শীতকালীন পাখিদের জন্য স্বর্গভূমিতে পরিণত করতে পারবেন।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version