Dragon fruit cultivetion: লাভের মুখ দেখতে ধান ও আলু ছেড়ে করুন এই ফলের চাষ, হবে লক্ষ্মীলাভ

।। প্রথম কলকাতা ।।

Dragon fruit cultivetion: প্রথাগত চাষ ছেড়ে বিকল্প চাষ হিসেবে ড্রাগন ফল চাষ করলে মোটা টাকা আয় করা যেতে পারে। ধান আলু সবজি চাষে খরচ দিন দিন বাড়ছে। অথচ তেমন লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। ভরা মরশুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোর তেমন দাম মিলছে না। আবার সেসব ফসল ভোর ভোর তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝক্কি অনেক। সেই জায়গায় ড্রাগন ফলের চাষ খুবই লাভজনক। পুষ্টি এবং ওষুধি গুণের জন্য ড্রাগন ফলের চাহিদা দেশের বাজারে ক্রমশ বাড়ছে। এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৫০০ টাকার কাছাকাছি। একবার বিনিয়োগ করলে মোটা টাকা লাভ ঘরে তোলা যায়। শুধু তাই নয়,একই গাছ থেকে বছরের পর বছর ফল মিলবে।

ড্রাগনের চারা এখন সহজেই পাওয়া যায় বিভিন্ন নার্সারিতে। এছাড়াও গুজরাত,কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র থেকে এই চারা আনানো যায়। আমাদের রাজ্যে মরোক্কান, ইয়োলো ভিয়েতনাম, আমেরিকান পার্পেল,ভিয়েতনাম হাইব্রিড, রেড ভেলভেট,জাম্বো রেড প্রভৃতি প্রজাতির চারায় ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার জনপ্রিয় একটি ফল। দিনে দিনে আমাদের দেশেও তার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হচ্ছে। ড্রাগন ফলের গাছ ক্যাকটাস জাতীয়। এই গাছের কোনও পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারনত দেড় থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ ফলের আকার বড়।পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায়। শাঁস গাঢ় গোলাপী, লাল ও সাদা রঙের হয়ে থাকে।ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম। একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকমের ড্রাগন ফল হয়। যেমন লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া। এর খোসার রঙ লাল ও শাঁস সাদা হয়। এই প্রজাতির ফলই বেশি দেখতে পাওয়া যায়।কোস্টারিকা ড্রাগন ফলে খোসা ও শাঁস সবই লাল।হলুদ রঙের ড্রাগন ফল। এই জাতের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রঙের। শাঁসের রঙ সাদা। এই ফল ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত। তাতে ফাইবার, ফ্যাট, ক্যারোটিন, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।

এই ফলে থাকা ক্যারোটিন চোখ ভালো রাখে। আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়। এই ফলে থাকা প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে। এর ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও দাঁত মজবুত রাখে। ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক , দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।

জল জমে না এমন তুলনামূলক উঁচু জমি ড্রাগন ফল চাষের ক্ষেত্রে আদর্শ। বীজ থেকে গাছ হয়। তবে ফলন ভালো পেতে কাটিং এর চারা লাগানোই ভালো। তাতে গাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না। গাছ বাড়েও তাড়াতাড়ি। কাটিং থেকে তৈরি গাছে ফল ধরতে ১২-১৮ মাস সময় লাগে। সাধারণত বয়স্ক এবং শক্ত শাখা ১ থেকে ১.৫ ফুট কেটে হালকা ছায়াতে বেলে দোআঁশ মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুতে সহজেই চারা তৈরি করা যায়।  ২০ থেকে ৩০দিন পরে কাটিং এর গোড়া থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। তখন এটা মাঠে রোপন করতে হবে।

ড্রাগন ফলের গাছ খুব দ্রুত বাড়ে এবং মোটা শাখা তৈরি করে। এক বছরের একটি গাছ ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। ৪ বছর বয়সী একটি ড্রাগন ফলের গাছ ১৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। ১২ থেকে ১৮ মাস পর একটি গাছে ফল ধরে।

প্রথমে দেড় মিটার চওড়া ও এক মিটার গভীর গর্ত করে তা খোলা রোদে ফেলে রাখতে হবে। গর্ত তৈরির ২০-২৫ দিন পর প্রতি গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর , ২৫০ গ্রাম ডিএপি, ২৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম জিপসাম এবং ৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। গর্ত ভরাটের ১০-১৫ দিন পর প্রতি গর্তে ৫০ সেমি দূরত্বে ৪ টি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে। চারা রোপণের এক মাস পর থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে তিন মাস পর পর ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।

আগাছা সরিয়ে নিয়মিত জল দিতে হবে। লতানো গাছকে ওপরের দিকে তুলতে খুঁটি পুঁততে হবে। চারা বড় হলে খড়ের বা নারকেলের দড়ি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। তাতে কাণ্ড খুঁটিকে আঁকড়ে ধরে সহজেই বাড়তে পারবে। প্রতিটি খুঁটির মাথাই একটি করে মোটর সাইকেলের পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকে দিতে হবে। তারপর গাছের মাথা ও অন্যন্য ডগা টায়ারের ভিতর দিতে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এভাবে ঝুলন্ত ডগায় ফল বেশি ধরে। এক থেকে দেড় বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙের হয় তখন তা সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোটার মাত্র ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। বছরে ৫-৬ বার ফল সংগ্রহ করা যায়।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version