First Shaheed Minar: ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ, ৩ দিনেরও কম আয়ু ছিল প্রথম শহীদ মিনারের

।। প্রথম কলকাতা ।।

First Shaheed Minar: বাংলা ভাষা নিয়ে বাঙালির মধ্যে যে আত্মচেতনা বা ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল তার সূত্র ধরেই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে এই নিয়ে একটা সীমিত পর্যায়ের আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই ভাষা আন্দোলন চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে, ১৪৪ ধারা অমান্য করে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বেরিয়ে আসে রাজপথে। সেই মিছিলকে রুখতে পুলিশ তাদের উপর নির্বিকারে গুলি চালায়। প্রাণ হারান আবুল বরকত, আবুল জব্বার, আবুল সালাম সহ আরও বেশ কয়েকজন ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের এই শহীদদের স্মরণে জাতীয় শহীদ মিনার বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার (Central Shaheed Minar) তৈরি করা হয়েছে। যেটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিঃপ্রাঙ্গণে অবস্থিত। কিন্তু জাতীয় শহীদ মিনার তৈরি হওয়ার আগেও এক রাতে প্রথম শহীদ মিনার (First Shaheed Minar) তৈরি করা হয়েছিল।

অত্যন্ত দ্রুততা এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবেই প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় বিকেলে এবং রাতের মধ্যেই তা সম্পন্ন করে দেওয়া হয়। প্রথম শহীদ মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরিফুদ্দিন। নকশা তৈরি করেছিলেন বদরুল আলম। তাকে সহযোগিতা করেছিলেন সাঈদ হায়দার। আর নির্মাণের জন্য উপস্থিত ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রি ও তাঁর সহকারী। বর্তমান যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রয়েছে তাঁর থেকে প্রথম শহীদ মিনারের অবস্থান ছিল কিছুটা পূর্ব  – দক্ষিণ কোণে। সাড়ে দশ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া ওই মিনার তৈরি করার কাজ শেষ হলে তার গায়ে একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেখানে লেখা ছিল ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’।

এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। কিন্তু শহীদদের আন্দোলনকে প্রতীকী মর্যাদা দিতে যে মিনার তৈরি করা হয়েছিল তা মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান সরকার। পুলিশ সেদিন বিকেলের মধ্যেই প্রথম শহীদ মিনারটিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু সময় পরে সরকারের নজর যায় সেটাতেও। ভেঙে ফেলা হয় সেই শহীদ মিনারকেও।

অবশেষে যখন ভাষা আন্দোলনের একেবারে শেষ লগ্নে এসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয় তখন পুনরায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। তার নকশা তৈরি করেছিলেন হামিদুর রহমান। জাতীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে। তারপর সেই বছরই ২১ ফেব্রুয়ারি নতুনভাবে উদ্বোধন করা হয় এই শহীদ মিনারের। এরপর সময় স্রোতের মতো বয়ে চলে । ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে কানাডাবাসী দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুল সালাম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে । ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। আর তাতে সমর্থন জানায় ১৮৮ টি দেশ। সেদিন থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করা হয়।

প্রতিবছরই জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে উদযাপিত হয় দিনটি। ২১ ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ভাষা আন্দোলনের শহীদ রফিক, বরকত, জব্বার, সালামের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন দেশবাসী। বর্তমানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের রক্তাক্ত কিছু ঘটনা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version