।। প্রথম কলকাতা ।।
International Mother Language Day: ‘২১ আমার গৌরব’ এই কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ প্রত্যেক বাঙালির বোধগম্য। একুশে ফেব্রুয়ারি আজীবন অমর কারণ ১৯৫২ এর একুশে ফেব্রুয়ারি তরুণ প্রজন্ম নিজের মায়ের ভাষাকে স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার দাবি তুলে সরব হয়েছিল। কিন্তু তাদের কন্ঠ রোধ করে দেওয়ার চেষ্টায় এক চরম বর্বরতার নিদর্শন দেখে বিশ্ববাসী। বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য লড়াই করা রফিক, বরকত, জব্বারদের আত্ম বলিদান ইতিহাসের রক্তাক্ত পাতায় লেখা রয়েছে। বাংলাকে বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে রীতিমতো সেই দিন গর্জে উঠেছিল গোটা বাংলাদেশ। খালি হয়েছিল বহু মায়ের কোল। সেই দিনটি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (International Mother Language Day) হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ভাষার জন্য সেদিন যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদেরকে ভাষা শহীদ বলেই সম্মানিত করা হয়। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বের বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী মানুষেরা। তাই স্বাভাবিকভাবেই একুশে ফেব্রুয়ারি ষকে কেন্দ্র করে তিলোত্তমাও সেজে উঠেছে ভিন্ন রঙে। এদিন সকাল ৭:৩২ মিনিট নাগাদ কলকাতার (Kolkata) পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে একটি প্রভাতফেরি শুরু হয়। যদিও এই প্রভাত ফেরি বাংলাদেশ উপদূতাবাসের তরফ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু তাতে পা মেলান সাধারণ মানুষ।
তারপর প্রভাত ফেরিটি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের অভ্যন্তরে অবস্থিত শহীদ বেদির সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা । তাঁরা সকলেই পুষ্পস্তবক শহীদ বেদিতে অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। পরবর্তীতে সেখানে অন্যান্য বছরের মতোই আয়োজিত হয় আলোচনা সভা। কলকাতা প্রেসক্লাবের তরফ থেকেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় । পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের তরফ থেকে নয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
কলকাতার ভাষা মঞ্চে সকাল ১১ টায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। অন্যদিকে ভাষা ও চেতনা সমিতির তরফ থেকে চার দিনব্যাপী বাংলা ভাষা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। গতকাল রাতেই একটি মশাল মিছিল শুরু হয় তাদের উদ্যোগে। আর তারপর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকালে প্রভাত ফেরির মাধ্যমে শেষ হয় সেই কর্মসূচি। ‘সময় টিভি’তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে নিউইয়র্কের ভাষা দিবস উদযাপনের ছবি ফুটে ওঠে। তার মাধ্যমে জানা যায়, ভারতের থেকে সময় নিরিখে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক ঘন্টা পিছিয়ে থাকলেও ভাষা দিবস উদযাপন করাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে উৎসাহের কোন কমতি নেই ।
জানা যায়, নিউইয়র্কে যেহেতু কোন স্থায়ী শহীদ মিনার নেই তাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। একাধিক ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য বাংলাদেশি সংগঠনগুলির উদ্যোগে অস্থায়ী মিনার তৈরি করেই শহীদ দিবস উদযাপন করা হয় বিদেশের মাটিতে। এছাড়াও সারা দিনভর চলবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যে শহীদদের কারণে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন, যে শহীদদের আত্মত্যাগ বাংলা ভাষাকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে পেরেছে তাদের আত্মার শান্তি কামনায় বিদেশের মাটিতেও বাঙালিরা ভাষা দিবস উদযাপন করছেন। তাই বলাই যায় ভাষা দিবস কেবলমাত্র বাংলাদেশ (Bangladesh) কিংবা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নয় বিশ্বজুড়ে বসবাস করা প্রত্যেকটি বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম