জাপান একটি অতি আশ্চর্য দেশ। রাস্তায় টাকা পড়ে থাকলেও কেউ নেয় না, ডাকাত ধরে রোবট

।। প্রথম কলকাতা ।।

রাস্তায় আপনার কোন জিনিস হারিয়ে গেলে চিন্তা নেই, নিশ্চিন্তে থাকুন। ফেরত পাবেন। এদেশে কেউ আত্মহত্যা করে না। নেই চুরি ডাকাতি খুন। শিশুরা একা একা ট্রেনে বাসে স্কুলে যায়। চাইলেই পাবেন সাহায্য। আপনার কোটি কোটি টাকা মাটিতে পড়ে থাকলেও কেউ কুড়িয়ে নেবে না। এখানে ট্যাক্সির দরজা থেকে শুরু করে টয়লেটের দরজা নিজে থেকেই খোলে। চোর ডাকাত ধরে রোবট। কি, এক আশ্চর্য গল্প মনে হচ্ছে? কিন্তু আদতে সত্যি বলছি। দেশটা জাপান। এখানে সবাই কীভাবে এত খুশিতে থাকে?কেন অপরাধ শূন্য? এই সিস্টেমটা জেনে রাখুন। মন ভালো হয়ে যাবে।

জাপানের বাজার অর্থনীতি অনেক এগিয়ে। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই জাপানের অর্থনীতি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল। সেই ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনে বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করেছে জাপানিরা। ৫০ বছরের মধ্যে দেশটার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পৌঁছেছে প্রায় ৩৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। জাপানে অপরাধ হয় না বললেই চলে। সমাজ ব্যবস্থা সাজানো গোছানো পরিপাটি ভীষণ সুন্দর। আসলে জাপানিদের চরিত্র গঠনের মূল ভিত্তিটা কোথায় জানেন? একবাক্যে, স্কুলগুলো। বিষয় ভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি দেওয়া হয় জীবনমুখী শিক্ষা। শেখানো হয় সামাজিকতা, ন্যায়-অন্যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বোধ। পিঠে ভারি ভারি ব্যাগের বোঝা নয়, সপ্তাহের সাত দিন পড়ার চাপও নয়। শিশুরা সপ্তাহে পাঁচ দিন স্কুলে যায়। প্রতিটা ক্লাসের মাঝে থাকে দশ থেকে পনের মিনিটের বিরতি। সর্বোচ্চ ক্লাস ছটা। স্কুলে সবার আগে আসেন প্রধান শিক্ষক। স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অভ্যর্থনা করেন। বিদ্যালয় থেকেই দেওয়া হয় ভালো গুণমানের খাবার। রয়েছে আলাদা ডায়েটিশিয়ান। বাচ্চাদের জন্য ঠিক কতটুকু ক্যালরি কিংবা পুষ্টি সম্পন্ন খাবারে দরকার, প্রতিদিন তিনি ঠিক করে দেন। শিশুদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা ঠিক কি খাচ্ছে, কেন খাচ্ছে।

জাপানের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি আদর্শের সূতিকাগার। প্রত্যেক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই রয়েছে শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস। আর দেশের সুনাগরিকরাই পারে নিরাপদ অপরাধ মুক্ত দায়িত্বশীল সমাজ গড়ে তুলতে যেখানে। তাই তো জাপানে সবাই নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। রাত ১ টাতেও মহিলারা একা একা চলাফেরা করেন। মাত্র ৫ বছরের শিশুরা বাসে ট্রেনে চড়ে একাই স্কুলে যায়। শুধু অপরাধ কেনই বা বলা হচ্ছে, দেশটা সামান্য নিয়ম পরিবর্তনে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। ১ লাখ মানুষের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মাত্র ৩.১ জনের। অথচ ১৯৫০ সাল নাগাদ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে সড়ক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুহার আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপানি পর্যবেক্ষক দুর্ঘটনা কমাতে ঘোষণা করে ট্রাফিক যুদ্ধ। বাড়াতে থাকে ট্রাফিক সিগন্যালের সংখ্যা। এক লক্ষ মানুষের মধ্যে চুরি ডাকাতি মাত্র হয়তো একটা কিংবা দুটো। খুনের সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে। আত্মহত্যাতেও পিছিয়ে দেশটা। প্রতিবছর গড়ে এক লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে আত্মহত্যা করেন বড়জোর ১৭ জন। অথচ জাপানি রয়েছে সুইসাইড ফরেস্ট। যা ১২৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে ভাবাই যায় না।

আসলে জাপান জুড়ে চলছে একটা সুষ্ঠু সিস্টেম। সেই সিস্টেমে ভূমিকম্পের মধ্যেও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে বুলেট ট্রেন। বিশ্বজোড়া নাম করেছে জাপানের এন সেভেন হান্ড্রেডএস ট্রেন। কোন চালক নিয়ম ভাঙলেই বাতিল হয়ে যাবে তার লাইসেন্স। সড়কে মৃত্যুহার কমাতে রয়েছে জরুরী চিকিৎসা ব্যবস্থা। পুলিশের পরিবর্তে জাপানের রাস্তায় রয়েছে রোবট। কোকোবো নাম রোবট জাপানের রাস্তায় দিতে পারে ভিসুয়াল, অডিও এবং স্মোক ওয়ার্নিং। এআই এর মাধ্যমে চলে ঘন ঘন টহলদারি। চুরির কোনো সুযোগই নেই। সুযোগ বুঝে জাপান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। বুঝতে পারবেন আসল তফাৎটা কোথায়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version