জাপান তেজস্ক্রিয় জল ছাড়তে শুরু করেছে, কী ঘটবে এবার! ঘটনাটা কী ? রিস্ক বাড়ছে দেশগুলোর

।। প্রথম কলকাতা ।।

প্রশান্ত মহাসাগরে তেজস্ক্রিয় জল ছড়িয়ে দিচ্ছে জাপান। কোন কোন দেশের রিস্ক বাড়ছে ? কেন তেজস্ক্রিয় জল ছাড়তে শুরু করল জাপান? পুরো ব্যাপারটা আসলে কী?ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র নিয়ে জাপানে কীসের এতো আতঙ্ক? ২০১১-র রেশ ২০২৩ এও। চীন-দক্ষিণ কোরিয়া কিন্তু ছেড়ে কথা বলছে না। ১২ বছর আগের ঘটনা। এক ভূমিকম্পের পর যে সুনামি সৃষ্টি হয় তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর এখন জাপানের সেই ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেই তেজস্ক্রিয় দূষণ-যুক্ত জল প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়া শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এই কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। পুরো ট্যাংকের জল ছাড়ার প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগবে ৩০ টা বছর। ভাবতে পারছেন কতটা বিপদ?

দক্ষিণ কোরিয়া-চীন‌ হাত গুটিয়ে বসে নেই। পুরো ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। চীন জাপানের সামুদ্রিক খাবারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সমস্যা মিটে যেত যদি জাপান এই বর্জ্য জল সাগরে ছাড়ার আগে সেখান থেকে সব তেজস্ক্রিয় পদার্থ তুলে নিতে পারতো। কিন্তু তেজস্ক্রিয় উপাদান ট্রাইটিয়ামকে জল থেকে আলাদা করা যায় না, এটা করার মতো কোনো প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত নেই। তার পরিবর্তে ওই দূষিত জলে আরও জল মিশিয়ে ওটাকে হালকা করে দেওয়া যেতে পারে সেটা জাপান করছে।অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দূষিত জল এখন সাগরে ছেড়ে দেওয়া সেফ। ভুলে গেলে চলবে না, বিশ্বের সব জায়গার জলেই ট্রাইটিয়াম পাওয়া যায়। ট্রাইটিয়ামের মাত্রা যদি খুব কম হয়, সেটা তেমন এফেক্ট ফেলেনা।

আন্তর্জাতিক পরমাণু নজরদারি সংস্থা IAEA বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খাবার জলে ট্রাইটিয়ামের যে নিরাপদ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, ফুকুশিমার বর্জ্য জলে ট্রাইটিয়ামের পরিমাণ তার চেয়েও ছয়গুণ কম। অতএব হিসেব বলছে এখনো পর্যন্ত সাগরে ছাড়া বর্জ্য জলে ট্রাইটিয়ামের মাত্রা নিরাপদ সীমার অনেক নীচেই আছে। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় যাদের নিত্যদিন যেতে হয়, তাদের অনেকে টেনশনে পড়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় যে ঐতিহ্যবাহী সামুদ্রিক ডুবুরিরা ‘হাইনিও’ নামে পরিচিত, তারা দুশ্চিন্তায় করছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, এটা হয়তো একটি চাল। কারণ ওই জলে বিশেষজ্ঞরা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এত কম দেখছেন যে, সামুদ্রিক খাবার নিয়ে টেনশন করার মতো কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ তারা দেখছেন না। বরং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্জ্য জল সাগরের স্রোতে ভেসে যাবে, বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরের কুরুশিও স্রোতে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রিস্ক কম।

শুরুটা হয়েছিল জাপানে ২০১১ সালে। এক ভূমিকম্পের পর যে সুনামি সৃষ্টি হয়, তা ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রটিকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলে। পরমাণু কেন্দ্রটির শীতলীকরণ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায়। পরমাণু চুল্লীর কেন্দ্রটি সাংঘাতিক উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এই কেন্দ্রের জল তখন তেজস্ক্রিয় পদার্থের সঙ্গে মিশে দূষিত হয়ে পড়ে। ওই দুর্যোগের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিক টেপকো পরমাণু চুল্লীর ফুয়েল রডগুলো ঠাণ্ডা করার জন্য পাম্পে করে জল ঢালতে শুরু করে। এর মানে, ওটা থেকে প্রতিদিনই তেজস্ক্রিয় দূষণ-যুক্ত জল বেরোচ্ছিল। যা প্রায় এক হাজার ট্যাংকে ভরে রাখা হচ্ছিল। যে বিশাল পরিমাণ দূষিত জল ওই কেন্দ্র থেকে বেরিয়েছে, তা দিয়ে ৫০০ অলিম্পিক সুইমিং পুল ভরে ফেলা যাবে। জাপান বলছে, যে জায়গায় এই জলের ট্যাংকগুলো আছে, সেটা রিস্কের। হয় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি অকেজো করে বন্ধ করে দিতে হবে। নাহলে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই জলের ট্যাংকগুলো ধসে পড়লে তখন বিপদ হবে। তাই, ফুকুশিমা কেন্দ্র থেকে জাপান বর্জ্য জল সাগরে ছাড়ছে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version