Iran president: রাইসির থেকেও কট্টর ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট !

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Iran president: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর, প্রেসিডেন্টের পদে কে বসবে? গোটা ইরান সহ মধ্যপ্রাচ্যে চলছে জোর আলোচনা। প্রশ্ন একটাই, ইরান তো নতুন প্রেসিডেন্ট অবশ্যই পাবে, কিন্তু তিনি কি রাইসির মতো করে দেশটা পরিচালনা করবেন, নাকি ব্যর্থ হবেন? যদি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কূটনৈতিক অবস্থানের দিকে তাকান, তাহলে কিন্তু শত্রু সংখ্যা কম নেই। শুধু তাই নয়, পশ্চিমা দুনিয়ার কাছেও ইরান এখন চক্ষুশূল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, ইরানকে সামলাতে গেলে একজন দক্ষ প্রেসিডেন্টের বড্ড দরকার। কিন্তু ইরান কি তা পাবে? ইতিমধ্যেই ইরানের অভ্যন্তরে শোনা যাচ্ছে কয়েকটা নাম, যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় যোগ দিতে পারেন। আর সেখানেই একটা নাম বারংবার শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। নির্বাচনে জেতার সম্ভবনা কতটুকু? সবটাই রয়েছে খামেনির হাতে। আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় এলে দ্বিগুণ চাপে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েল।

 

আহমাদিনেজাদ খামেনির অপছন্দের, ভেঙে যাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন?

ইব্রাহিম রাইসির আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন হাসান রুহানি, আর ঠিক তার আগে ক্ষমতায় ছিলেন এই মাহমুদ আহমাদিনেজাদ । যদি হাসান রুহানির আর আহমাদিনেজাদের রাষ্ট্র পরিচালনা নীতি কিংবা পরিকল্পনার দিকে তাকান, তাহলে কিন্তু বিস্তর পার্থক্য রয়েছে । তবে রাইসি যে ভাবে ইরানকে পরিচালনা করেছেন, তার সঙ্গে মাহমুদ আহমাদিনেজাদের ইরান পরিচালনার মধ্যে কিছুটা মিল লক্ষ্য করা যায়। কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, হয়ত রাইসি যেভাবে ইরান শাসন করছেন, সেইভাবে ইরান শাসন করার জন্য নতুন প্রেসিডেন্ট পাবে দেশটা। কিন্তু এসব কথা এখন সবই সম্ভবনা। কারণ ইরানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রার্থী তালিকায় আসা, আর নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য। রয়েছে প্রচুর নিয়ম আর জটিলতা।

 

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদ ফাঁকা হওয়ার ৫০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। আর সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হবে যোগ্য প্রার্থীকে। ইতিমধ্যেই মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। তিনি কিন্তু ইরানের অন্যতম একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর বহু সমর্থক ধরেই নিয়েছেন, তিনি যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান তাহলে তার জয় কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু মূল সমস্যাটা কি বলুন তো, অতীতের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। ইরানে ২০১৭ আর ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহু আলি খামেনির নেতৃত্বাধীন গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করেছিল। এবারেও যদি তার রিপিট হয়, তার পরিণাম আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে করছে ইরানের বিরোধী দলগুলো। ২০১৭ সালে যখন তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছিল, তখন তিনি কড়া সমালোচনা করেছিলেন ইরানের পুরো কাঠামো নিয়ে। শুধু তাই নয়, প্রকাশ্যে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিরও সমালোচনা করেছিলেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কিছুটা নিরব রয়েছেন। ২০০৫ সালে যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এবং তার ঘনিষ্ঠ ধর্মগুরুদের বক্তব্য দেখে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন, ইরান রাষ্ট্রপতি পদের জন্য পেয়েছে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তিকে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক বন্ধুত্ব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জিতলেও, শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। আহমাদিনেজাদের বহু সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি খামেনির।

 

ওদিকে রাতারাতি পাল্টি খান আহমাদিনেজাদও। তিনিও খামেনির বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্তেই অনড় ছিলেন। আসলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হলেন খামেনি, ইরানের রাজনৈতিক কাঠামোর শীর্ষে রয়েছেন তিনি। তিনি যা বলবেন তাই হবে। ২০১৭ সালে আহমাদিনেজাদ তৃতীয় দফা রাষ্ট্রপতি হওয়ার চেষ্টা করলেও গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থী পদ প্রত্যাখ্যান করে। আসলে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর যেকোনো প্রার্থী যারা বিশেষ করে ইরানের বিদ্যমান ব্যবস্থাকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিতে চান, তাদের কিন্তু এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোন অনুমতি নেই। শুধু তাই নয়, এই গার্ডিয়ান কাউন্সিল ইরানের যে কোন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজে নিযুক্ত করেন এই সংস্থার অর্ধেক সদস্যকে। অর্থাৎ ধরে নিতে পারেন খামেনিকে চটিয়ে কোন লাভ নেই। কারণ ইরানের এই সুপ্রিম লিডার দেশটার সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সুরক্ষা, প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।

 

ইরানের বহু মানুষের কাছে পছন্দের নেতা আহমাদিনেজাদ, কারণটা কী?

আহমাদিনেজাদের পর ২০১৩ সালে ইরানে ক্ষমতা এসেছিলেন হাসান রুহানি। তাকে ইরানের সব থেকে সুরক্ষিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয়। মেয়াদের শুরু থেকেই তিনি খামেনির আস্থা অর্জনের চেষ্টাও করেছিলেন। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চেষ্টা সহ চুক্তি করার জন্য তাকে খামেনির সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তারপর রুহানি আর তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে আনা হয় বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অপরাধের অভিযোগ। তার আগে মাহমুদ আহামাদিনেজাদ কিন্তু ইরানের কম জনপ্রিয় একজন নেতা নন। তিনি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার আগেও দায়িত্ব পালন করেছেন তেহরানের মেয়র হিসেবে। যখনই ক্ষমতা এসেছেন তখনই কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমাদেশ গুলোকে।

 

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও তিনি কঠোর অবস্থানে ছিলেন। যার কারণে ইরানের অভ্যন্তরে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। যে নীতি পুলিশ নিয়ে ইরানকে গোটা বিশ্বের কাছে এক বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে , সেখানেও জড়িয়ে মাহমুদ আহমাদিনেজাদের নাম। আগাগোড়াই তিনি অতিরক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার সময়ে ইরানের নীতি পুলিশের নাম রাখা হয়েছিল ‘গাতে ই এরাদ’। এই নীতি পুলিশের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কিনা, তা ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ইরানে হয়ে উঠেছিল একটা অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। ইরানে এই যে রাজনৈতিক পদ পরিবর্তন হচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে ভালো কিছুই হবে বলে মনে করছেন আহমাদিনেজাদ। এই বিষয়ে তিনি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। তার কথায়, সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এটা শুধু ইরানে নয়, গোটা বিশ্বেই এমনটা হচ্ছে। তিনি আশাবাদী, শীঘ্রই ভালো কিছু দেখতে পাবেন।

 

গতবারের নির্বাচনে ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি আহমাদিনেজাদ। তখন কিন্তু তিনি নির্বাচন বয়কটও করেছিলেন। ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, এই নির্বাচনে ভোট দেবেন না। তিনি এই অপরাধের ভাগী হতে চান না। রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। সেই সময় কিন্তু আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিসহ ইরানের রক্ষণশীল রাজনৈতিকদের সমর্থন পেয়েছিলেন। আর এই জায়গাটা থেকেই বারবার ঝাড় খেয়ে যাচ্ছে আহমাদিনেজাদ।

 

যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের চক্ষুশূল আহমাদিনেজাদ, কিন্তু কেন?

আগামী ২৮ শে জুন ইরানের মানুষ ঠিক করবে তাদের দেশের নতুন প্রেসিডেন্টকে হবেন। সেই তালিকায় থাকলেও থাকতে পারেন আহমাদিনেজাদ। মোটামুটি ভাবে ইরানের জনগণ তাকে একজন কট্টর পন্থী রাজনীতিক হিসেবে চেনেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কাই করেননি তিনি। উল্টে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জোর ঘোষণা করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর, প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করার অধিকার ইরানের রয়েছে। তিনি ইরান পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবে। সরাসরি নাকোচ করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সমস্ত সম্ভাবনা। স্পষ্ট বলে দেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের কোন প্রয়োজন নেই। তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ দেখা দিয়েছিলেন। জবাবে বলেছিলেন, তার সরকার শান্তিপূর্ণভাবেই কাজ করবে। আর মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি উদ্বেগ বেড়েছিল ইসরায়েলেরও। তিনি ক্ষমতায় আসার পর, তৎকালীন ইসরায়েলের উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ইরানের ক্ষমতার হাত বদলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তৈরি হবে একটা গুরুতর সমস্যা। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ ইসরায়েল ইরানকে নিরাপত্তার জন্য সবথেকে বড় হুমকি বলে মনে করে। ইরান সবসময় পরমাণু কর্মসূচিতে সক্রিয়। ইসরায়েলের আশঙ্কা, ইরান যদি একবার পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলে, তাহলে প্রধান লক্ষ্য হবে ইসরায়েল।

 

সবশেষে এটাই বলা যায়, ইরানের অভ্যন্তরে ইতিমধ্যেই বহু সাধারণ জনগণ সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চাইছে। যদিও শুধু তিনি নন, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন অনেকেই। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা। তবে সব থেকে বড় খটকা হল, শেষ পর্যন্ত কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিংবা কাকে অনুমতি দেওয়া হবে, সেই নিয়ে রয়ে গিয়েছে বিস্তর সংশয়। আবার কিছু কিছু ইরানি মিডিয়া দাবি করছে, যদি ব্যতিক্রমী কোন ঘটনা না ঘটে তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করা হতে পারে। এখন ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে কে আসবেন, তা নির্বাচন এবং নির্বাচনের ফলাফলের উপরই নির্ভর করছে।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version