Canada-Iran relations: কানাডাকে বড় ধমক ইরানের ! পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কঠোর মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি, কিন্তু কেন ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Canada-Iran relations: ইরানের পাল্টা চাল, কালো তালিকায় কানাডার সেনাবাহিনী! চরমে ইরান-কানাডার দ্বন্দ্ব। আর বিন্দুমাত্র হুমকি বরদাস্ত নয়, ইরান চলছে নিজের মর্জিতে। কানাডা বিপ্লবী গার্ডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলতেই পাল্টা পদক্ষেপ ইরানের। যে স্টেপ নিতে চলেছে, তা মধ্যপ্রাচ্যে আগে হয়েছে কিনা সন্দেহ। চাপে পড়তে পারে কানাডার সেনাবাহিনী। গোটা বিশ্বের কাছে কানাডার সেনাবাহিনীকে কি ছোট দেখানোর চেষ্টা করছে ইরান? এভাবেই কি তাহলে জবাব দেবে পশ্চিমাদের? এটা ইরানের টিট ফর ট্যাট নীতি নয় তো? হঠাৎ ইরান এত সাহস কোথা থেকে পেল একের পর এক মাস্টারস্ট্রোক। এবার কানাডা সেনাবাহিনীকে কালো তালিকা ভুক্ত করার চেষ্টা। তাহলে কি, শেষমেশ পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরান সরাসরি যুদ্ধে নেমেই পড়বে? যার শুরুটা হবে কানাডাকে দিয়ে। কানাডার সাথে ইরানের এত রাগ কিংবা শত্রুতা কীসের? কানাডাই বা কেন ইরানের পিছনে পড়েছে?

 

•আর দাবিয়ে রাখা যাবে না ইরানকে, ঘুরিয়ে মাত দিচ্ছে পশ্চিমাদের

সত্যি সত্যি মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। না কারোর চোখ রাঙানি সহ্য করছে, না কারোর হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড দিকে একটু আঁচ আসতেই , এবার হুঙ্কার ছাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ। কানাডাকেও ছেড়ে কথা বলল না। এতদিন যে পশ্চিমা বিশ্ব ইরানকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রে, এবার সেই নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র ভোঁতা করতে যেন উঠে পড়ে লেগেছে ইরান। কানাডার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে চলেছে দেশটা। তাহলে সত্যি সত্যি কি কানাডার বড় ক্ষতি করে ফেলবে ইরান? বর্তমানের বৈশ্বিক ভূরাজনীতি যা উত্তপ্ত, কেউ কাউকে যেন সহ্য করতে পারছে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাল্টা পদক্ষেপ কিংবা হুমকি গুলো কিন্তু পুরো বিষয়টাকে যুদ্ধের দিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আর সেটাই হচ্ছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তকমা দিতেই, কানাডার সেনাবাহিনীকে এবার কালো তালিকা ভুক্ত করতে চলেছে ইরান। ইরানের এমন প্রস্তাবে হতবাক গোটা বিশ্ব। যদি ইরান এমনটা করেও থাকে, তাহলে সেটা শুধু ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে একটা বড় মাইলফলক স্টেপ হতে চলেছে। এতদিন শুধু পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ সহ বহু ব্যক্তি কিংবা সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে এসেছে। এবার সেই একই অস্ত্রে ঘুরিয়ে মাত দিতে চাইছে ইরান।

 

ইরানি পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কানাডার সেনাবাহিনীকে কালো তালিকা ভুক্ত করতে হবে তেহেরানকে। কারণ একটাই, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে দেগে দিয়েছে কানাডা। অথচ ইরানের মতে, তাদের এই বিপ্লবী গার্ড যথেষ্ট প্রশংসনীয় কাজ করে থাকে। সন্ত্রাসমূলক কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। কানাডার এমন পদক্ষেপ কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছে না দেশটা। ইরানের কথায়, তাদের বিপ্লবী গার্ড একটা অভিজাত বাহিনী। তাদের দেশের সামরিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির। এই সংগঠনে যুক্ত প্রায় ২ লক্ষ সক্রিয় সদস্য। শুধু ইরান নয়, আইআরজিসির প্রভাব রয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। বিভিন্ন মিত্র দেশের সরকার সহ তেহেরান পন্থি সশস্ত্র সংগঠন গুলোকে অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে বিপ্লবী গার্ড।

 

বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডার বিরোধী আইন প্রণেতা এবং প্রবাসী ইরানিদের দাবির মুখে কানাডা আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেয়। ইরানের দাবি, এমন পদক্ষেপ নাকি অবিবেচক এবং নীতিবিরুদ্ধ। যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তেহেরান। শুধু নিন্দা জানিয়ে বসে থাকছেন না ইরানি রাজনীতিকরা। তারা কানাডার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপের পথে হাঁটছেন। সম্প্রতি ইরানের পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালীন ২৫০ জন সংসদ এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে আইআরজিসিকে কালো তালিকা ভুক্ত করার বিষয়টিকে কানাডা সরকারের শত্রুতামূলক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং নিন্দা জানানো হয়েছে। ইরানি আইনপ্রণেতারা সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করছেন আইআরজিসিকে। তাদের মতে কানাডা সরকারের এমন পদক্ষেপ সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন আর বিধিবিধানের পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এর বিরুদ্ধে সমস্ত রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক কৌশল ব্যবহার করার আহ্বান জানান তারা।

 

•হঠাৎ ইরানের পরিবর্তন, সাহসের মূল উৎসটা কী?

এই যে ইরান এখন কারোর কথা শুনছে না, বা কাউকে ভয় পাচ্ছে না, কারণটা কি? হঠাৎ একদিনেই কি এতটা পরিবর্তন হল? আজ যে ইরানের এত প্রতিপত্তি, একটা সময় কিন্তু ছিল না। মধ্যপ্রাচ্য বলতেই বারংবার চলে আসত সৌদি আরবের নাম। কিন্তু চলতি দশক থেকে বিশ্ব রাজনীতিতে যেন হু হু করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইরানের প্রভাব। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মার্কিন আর তার মিত্রদের চাপেও কিন্তু দেশটা তার ধারাবাহিক সফলতা বজায় রেখেছে। বহু কূটনীতিক মনে করেন, হয়ত খুব দ্রুত ভূ রাজনীতিতে অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠবে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটা। বহু মুসলিম রাষ্ট্রই মনে করে, ইরানের সামরিক সফলতার ঐতিহ্যের পাশাপাশি রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যার বিরুদ্ধে কানাডা এত বড় স্টেপ নিল। কানাডাকেও ছেড়ে কথা বলছে না ইরান। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পরবর্তী ঘটনাগুলো দেশটাকে প্রতিরোধ আর বিজয় অর্জনের অন্যতম দৃষ্টান্ত করে তুলেছে। আর সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই আইআরজিসির। বলা হয়ে থাকে, ইরানের উপর ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে, ইরানিদের প্রতিরোধ আর বিজয় সফলতা অর্জনের অন্যতম দৃষ্টান্ত।। আর এখনো কিন্তু ইরান তার বিজয় অর্জন করে চলেছে। যেখানে বড় ভূমিকা রয়েছে এই বিপ্লবী গার্ডের। ইরানের বিরুদ্ধে যতই পশ্চিমা চাপ আসুক না কেন, ইরান জানে তার কাছে একটা শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে। তাই এত মনের জোর।

 

•ইরান-কানাডার শত্রুতা, চলছে পাল্টা হুমকির রেষারেষি

দুই দেশের সম্পর্কের তিক্ততার চরম বিস্ফোরণ ঘটে বছর চারেক আগে। যখন ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। তখনই বাগদাদ থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করে কানাডা। ইসলামিক স্টেট এর বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের অংশ হিসেবে সেই সময় ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি আর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সৈন্য মোতায়নে রেখেছিল কানাডা। আবার ইরান বছর দুয়েক আগে ঘোষণা করেছিল, দেশটার অভ্যন্তরে নাকি সহিংসতার উস্কানি আর সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডা। তাই ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দ্রুত ওই দুই দেশের কিছু নাগরিক এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এর আগেও কিন্তু কানাডা সরকার একই অভিযোগে ইরানের বিভিন্ন ব্যক্তি আর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল। অর্থাৎ এরকম পাল্টাপাল্টি হুমকি, নিষেধাজ্ঞা চাপানো কানাডা ইরানের মধ্যে একদমই নতুন নয়। কিন্তু বর্তমানে উত্তেজনার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। এখন আর এই দুই দেশ একে অপরকে বিন্দুমাত্র সহ্য করতে পারছে না। ইরানকে দমাতে তাই সরাসরি বিপ্লবী গার্ডের রাশ টেনে ধরতে চাইছে পশ্চিমাদের মিত্র কানাডা। কিন্তু তা সফল হতে দেবে না ইরান। তাইতো এবার পাল্টা চাল চালল তেহরানও।

 

দেখুন, কানাডার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আগাগোড়াই খুব খারাপ। সম্পর্কের উন্নতির জন্য দুই দেশ কোনদিনও চেষ্টাও করেনি। বহু বছর আগেই ইরানে দূতাবাস বন্ধ করেছে কানাডা। এমনকি ইরানি বহু কূটনীতিককে কানাডা থেকে বহিষ্কার করবে বলে হুমকিও দিয়েছে। কানাডার বহুদিনের দাবি, ইরান নাকি বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি। আর তা রুখতে কানাডা বদ্ধপরিকর। এই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক একদম নেই বললেই চলে। যখনই কানাডা ইরানের বিরুদ্ধে স্টেপ নিয়েছে, তখনই অভিযোগের আঙুল তুলেছে ইরানের আণবিক কর্মসূচি, ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটার বৈরিতা, আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ইরানের সামরিক সহযোগিতার দিকে। ইরান আণবিক কর্মসূচির আড়ালে নাকি তৈরি করছে ভয়ানক সব নিষিদ্ধ অস্ত্র। পশ্চিমা বিশ্বসহ ইসরায়েলের সঙ্গে একই সুরে কথা বলেছিল কানাডা। তারপর থেকে ইরানের উপর দফায় দফায় অবরোধ আরোপ করেছে তারা। তবে সেই সময় আর বর্তমান সময়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তখন ইরান চুপ থাকত, কিছু বলতো না। কিন্তু এখন পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। টিট ফর ট্যাট, ইট ছুঁড়লে যে উল্টে পাটকেল খেতে হবে তা বুঝিয়ে দিচ্ছে ইরান।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version