।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas war: ইরানের হাতে আসতে চলেছে সুপার পাওয়ার। আর তাতেই আনন্দে লাফাচ্ছে হামাস। ইসরায়েলকে জব্দ করার নতুন ছক কষে ফেলেছে হামাস-ইরানের জোট। স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি ঠিক আছে, কিন্তু কিছুতেই ইসরায়েলের কাছে মাথা নত করবে না হামাস। ইরানের শক্তি দেখেই কি এত সাহস পাচ্ছে ফিলিস্তিনের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী? প্রকাশ্যে ইরানের মারাত্মক প্ল্যান। মজুদ করে ফেলেছে প্রচুর ইউরেনিয়াম। হামাসের সাহসের পিছনে কি তাহলে মদদ দিচ্ছে ইরানের আণবিক শক্তি? ইরানই যখন পশ্চিমাদের তোয়াক্কা করছে না, তখন ইরানের বন্ধু হামাস কড়ায় গন্ডায় আদায় করতে চাইছে নিজের অধিকার? বিগত ৮ মাস হয়ে গেল। হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে। কোথায় হামাস ফিলিস্তিনের একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী মাত্র, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইসরায়েল ক্ষমতায় বহুগুণ এগিয়ে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত গাজায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, ধ্বংসলীলা চললেও হামাস কিন্তু মাথা নত করেনি। গোটা বিশ্ব জানে, হামাসের পিছনে রয়েছে ইরানের সাপোর্ট। ইরান যত শক্তিধর হচ্ছে হামাসের বুকে ততই যেন সাহস বাড়াচ্ছে। তাই কি কোন মতেই ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চাইছে না এই সশস্ত্র গোষ্ঠী? পিছন থেকে ইরান হামাসকে ঠিক কোন শলাপরামর্শ দিচ্ছে? উভয় সংকটে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যুদ্ধ বিরতি করবেন, নাকি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন ভেবেই পাচ্ছেন না। ইরান আর হামাসের জোটে নাকানিচোবানি খাচ্ছে ইসরায়েল।
আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে ইরান যাতে কোনভাবেই আণবিক শক্তির অধিকারী না হতে পারে, সেক্ষেত্রে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সহ তার মিত্র দেশগুলোও সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফল হয়েছে একেবারেই উল্টো। যতো পশ্চিমাদের চাপ বেড়েছে, ততই ইরান আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ইরান যদি মারাত্মক সব অস্ত্রের অধিকারী হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে ইসরায়েল যে মধ্যপ্রাচ্যে বিপদে পড়বে তা বলাই বাহুল্য, আর তাই প্রথম থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইরানকে একটু যেন বেশি চাপ দিচ্ছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু এবার সব চেষ্টাই ব্যর্থ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ইরান তার ইউরেনিয়াম সক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে। এতদিন ধরে পশ্চিমারা যেটা আটকাতে হাজারো চেষ্টা করছিল, সেটাই করে দেখাচ্ছে ইরান।
ইরান ইউরেনিয়াম কর্মসূচির উপর একটু বেশি জোর দিচ্ছে বলে মনে করছে কূটনীতিকরা। ইরানের নাতাঞ্জ আর ফোরদৌতে রয়েছে গবেষণা কেন্দ্র। সেখানেই চলছে ইউরেনিয়ামের নানান পরীক্ষা। এর ফলে ইরানের পক্ষে ভয়ঙ্কর কোন অস্ত্র বানানো একেবারেই কঠিন ব্যাপার নয়। জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি বোর্ড কয়েকদিন আগে ইরানের বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ এনেছিল। তাও এই ইউরেনিয়াম মজুদ করার বিষয়ে। কিন্তু ইরান কি করল? সে সব বিষয়ের দিকে পাত্তা তো দিলই না, উল্টে পাল্টা জবাবে আরো দুটি ভূগর্ভস্থ অঞ্চলে ইউরেনিয়ামের পরিশোধন কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ৩৫ টি দেশের বোর্ড অফ গভর্নরস এই ধরনের কর্মসূচি দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে একটা প্রস্তাব এনেছিল। আর তাতেই বেশ ক্ষেপেছে তেহরান। কূটনৈতিক মহলের গুঞ্জন বলছে, ইউরেনিয়ামকে প্রায় ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় উন্নীত করেছে ইরান। যা মারণ অস্ত্রের ব্যবহারের জন্য প্রায় উপযোগী।
শুধু তাই নয়, ইরান ঘোষণা করে দিয়েছে এই সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি তারা আরো বাড়াবে। অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞাই বলুন আর জাতিসংঘের প্রস্তাব, কোন কিছুই ইরানকে আটকাতে পারবে না। কিছু কূটনীতিকদের মতে, ইরান নাকি তার ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ জায়গায় এমন কিছু যন্ত্র প্রতিস্থাপন করছে যা ইউরেনিয়ামকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। তবে নাকি যতটা ইউরেনিয়াম ইরান সঞ্চয় করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, পরিমাণ ততটা নয়। আর এখানে কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন। কারণ গত মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই এখন দেশটার সামনে রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। তাই হয়ত ইরান এই মুহূর্তে বড় কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একদম চুপ করে রয়েছে। সম্প্রতি গোটা মধ্যপ্রাচ্য রাজনৈতিক সংকটে ভুগলেও ইরান হামাসের সাথে টুকটাক আলোচনা ছাড়া প্রকাশ্যে তেমন কোন হামলার সঙ্গে জড়ায়নি। হয়তো বা ইরান অপেক্ষা করছে তাদের নতুন সরকারের জন্য।
৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা ইরানের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা না পাওয়ার তুমুল সমালোচনা করে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল। যে প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স আর জার্মানি। অপরদিকে বিরোধিতা করেছে চীন এবং রাশিয়া। ইরান আবার এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেছে, এই প্রস্তাব নাকি মোটেও যৌক্তিক নয়। তাহলে কি এটাই স্পষ্ট, প্রস্তাবটি তড়িঘড়ি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উত্থাপন করা হয়েছে? বহু বিশ্লেষকের মতে, হয়তো বা ইরানের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর জন্যই এমন উদ্যোগ। এর আগেও কিন্তু আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার বোর্ডে এই ধরনের প্রস্তাব পাস হয়েছে, আর তখনই ইরান তাদের নজরদারি থেকে ক্যামেরা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে বরং উল্টে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে।
এমত পরিস্থিতি, আবার বিস্ফোরক দাবি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার মতে এই প্রতিবেদন থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম কর্মসূচি বাড়িয়ে যাচ্ছে। যার শান্তিপূর্ণ কোন উদ্দেশ্য নেই। মূলত ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধি বা মান ৯০% হলে তা অস্ত্রের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান হয়তো এখনই ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন বাড়াবে না। কিন্তু তলে তলে যে দেশটা কি করছে তা তো কেউই জানে না। স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। এর উত্তর দিতে পারবে একমাত্র ইরানই। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ২০১৫ সালে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে ইরান এই নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সেই চুক্তি আর তেহেরান মানছে না। এই চুক্তির আওতায় ইরানে ইউরেনিয়াম কর্মসূচি স্থগিত করার বদলে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে সরতেই, পুরো খেলাটা নিজের মতো করে খেলছে ইরান। আর এসব দেখে ইসরায়েলকে ধরাশায়ী করার স্বপ্ন দেখছে হামাস।
হামাসের এখন মূল শত্রু ইসরায়েল। যখন নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শক্তি কিভাবে বাড়ছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হামাস খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে, ইসরায়েলকে পাত্তা দেওয়ার খুব একটা দরকার নেই। কারন হামাস বিপদে পড়লে ইরানের থেকে সাহায্য পাবে। তাই মাথা নত নয়, বরং গাজায় স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি মেনে নিতে ইসরায়েলকে চাপ দিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। যেহেতু ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোন কথা বলেনি, তাই হামাসও কিন্তু গাজাভূমিতে নিজেদের হার কখনোই মানবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কিন্তু চাইছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া তাঁর যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবটা যাতে ইসরায়েল মেনে নেয়। তারপরেও গজায় যুদ্ধ বিরতি প্রশ্নে রয়েছে তুমুল অচল অবস্থা। দিনের পর দিন জটিল হচ্ছে গাজা যুদ্ধের অবসান এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির আলোচনার বিষয়টা।
এই জটিল অবস্থাতেই নেতানিয়াহুর যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন মন্ত্রী বেনি গাণতসে। আর ইনি কিন্তু সাধারণ কেউ নন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফস অফ স্টাফ হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আর সেই ব্যক্তি এখন যোগ দিয়েছেন ইসরায়েলের বিরোধী দলে। সমকক্ষ হিসেবে লড়তে চান নেতানিয়াহুর সঙ্গে। তাঁর স্বপ্ন এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হওয়া। আর নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না থাকা মানেই ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কমফোর্ট জোনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাই হয়ত বাইডেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বিরতির এত চাপ। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ শুনলেই, ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে নেতানিয়াহুর জোট সরকার, অপরদিকে নতুন নির্বাচনে যদি হেরে যান, তাহলে তাঁকে মুখোমুখি হতে হবে তদন্ত কমিশনের। সোজা কথায় ইরান-হামাসের জোট, আর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বেজায় নাজেহাল নেতানিয়াহু।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম