Iran-Israel: গাজাকে বাঁচাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান ! মুসলিমবিশ্ব একজোট

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Iran-Israel: যে ইরান ছিল একসময় এক ঘরে, সেই ইরান এখন মুসলিম বিশ্বের ত্রাতা? ইরানের প্ল্যানে আদৌ কি কুপোকাত হবে ইসরায়েল? কবে থামবে গাজা যুদ্ধ? মধ্যপ্রাচ্যকে বাঁচাতে মুসলিম দেশগুলো ইরানের পাশে দাঁড়াবে তো? গোটা মুসলিম বিশ্বকে একজোট করছে ইরান। না এখানে কোন নিজের স্বার্থ নয়, শুধুমাত্র ভাবছে মুসলিম দেশগুলোর কথা। যখন মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের একের পর এক মুসলিম কান্ট্রি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে, তখন বড় আশঙ্কায় ইরান। মধ্যপ্রাচ্যকে বাঁচাতে হবে পশ্চিমাদের নজর থেকে। আর সেই লক্ষ্যে, কে শত্রু কে মিত্র তার হিসাব রাখতে চাইছে না তেহেরান। মুসলিম দেশগুলোকে এক জোট করে এক সুতোয় বাঁধতে চাইছে। মূল উদ্দেশ্য, ফিলিস্তিনকে বাঁচানো। গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করা।

 

প্রায় আট মাস হয়ে গেল। এখনো পর্যন্ত ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ থামেনি। এই মুহূর্তে বিধ্বস্ত গাজাকে বাঁচাতে গেলে সমস্ত মুসলিম বিশ্বকে একজোট হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে, এমনটাই মনে করছে ইরান। দেশটার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি কিন্তু বলেছিলেন, প্রতিরোধই মুসলিম বিশ্বের সমস্যার সমাধান করতে পারে। ইতিহাস প্রমাণ করে, বিশ্বের বিভিন্ন জাতি যেখানে অধিপত্যকামী আর সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সেখানেই কিন্তু সম্মান আর স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তাহলে কি রাইসির সেই কথাগুলোই এখন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করছে ইরান? একটা সময় যে মুসলিম বিশ্ব ইরানকে কোনঠাসা করেছিল, এক ঘরে করে রাখার চেষ্টা করেছিল, সেই ইরান কিন্তু অতীত ভুলে সবাইকে আবার কাছে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন, আফগানিস্তান পাকিস্তান সৌদির সঙ্গে ইরানের এক সময় ছিল আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। কিন্তু ইরান সেই রাগ পুষে রাখেনি। মুসলিম বিশ্বকে বাঁচাতে দেশগুলোর সামনে বাড়িয়ে দিয়েছে বন্ধুত্বের হাত। সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আর ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরুও করে দিয়েছে অর্থাৎ ইরান যা বলে তা যে করে দেখায়, তা বুঝিয়ে দিচ্ছে তেহেরান।

 

গাজাকে বাঁচাতে ‘ইসরায়েল বিরোধী জোট’, নেপথ্যে ইরানের প্ল্যান

মাসের পার মাস যখন হামাসের পাল্টা জবাব দিতে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বিশ্বের বহু দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু সক্রিয়ভাবে গাজার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সাহসও দেখায়নি। পুরো বিষয়টাই রয়ে গিয়েছে মৌখিক হিসেবে। অনেকটা সমঝোতার আকারে। তাতে আখেরে লাভ হয়নি গাজাবাসীর। তাই এবার গাজায় হামলা বন্ধ করতে কেউ এগিয়ে না এলেও, ইরান যেন তার দায়িত্ব ঠিকই পালন করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ইরান তার প্রক্সি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে তটস্থ করে রেখেছে ইসরায়েলকে। এই যে গাজা ভূখন্ডে এখনো পর্যন্ত হামাস টিকে রয়েছে, তা কিন্তু শুধুমাত্র ইরানের জন্য। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্যর যাবতীয় বিষয়ে বারংবার শোনা যাচ্ছে ইরানের নাম। আর এবার ইরান নিতে চলেছে একটা বড় পদক্ষেপ। সেটা হল ইসরাইল বিরোধী জোট। যখন মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর গাজা হামলার নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই, তখন যেন ইরান এই পরিস্থিতি একেবারেই সহ্য করতে পারছে না।

 

তাই মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, মুসলিম দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা একজোট হয়ে আদৌ কি ইসরায়েলকে চাপে ফেলতে পারবে? যদি সক্রিয় কোন ভূমিকা না থাকে, যদি সবটাই আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়, তাহলে ইসরায়েলের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না এই জোট। সক্রিয় স্টেপ নিতে, ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এই যে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া এখানে কিন্তু আফগানিস্তানের কোন ভূমিকাই নেই। কিন্তু তাও যেন ইরান প্রত্যেক মুসলিম দেশকে পাশে চাইছে। ইরানের মূল লক্ষ্য, ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন ওআইসির ফেমওয়ার্কের মাধ্যমে ইসরায়েলকে চাপে রাখা। মধ্যপ্রাচ্যে একটা টেকসই নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা গড়ে তোলা। ইরানের বহু কূটনীতিক মনে করছেন, বাঘেরি কানি ইরানের প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসমাপ্ত কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তিনি তেল আবিবকে এক ঘরে করতে সাহায্য চেয়েছেন রাশিয়ার কাছেও। আর তাই হয়তো আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যে যদি সামরিক শক্তিতে কেউ ইসরায়েলকে টক্কর দিতে পারে সেটা হলো একমাত্র ইরান। কোমর বেঁধে সামরিক শক্তিমত্তার পথ ছেড়ে, এইবার নেমেছে কূটনৈতিক জটিল সমীকরণে।

 

মুসলিম বিশ্বের উদ্ধারকর্তা ইরান, চুপ থাকবে না ইসরায়েলও

এই ইরানকেই ইসলাম বিশ্ব একসময় এক ঘরে করে দিয়েছিল। কিছুটা মতাদর্শ, আর কিছুটা রাজনৈতিক কারণে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তুলনায় কিন্তু ইরানের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত এবং স্থিতিশীল। একটা সময় ছিল যখন ইসলামিক স্টেট এর বিরুদ্ধে ইরান সিরিয়া এবং ইরাকে সক্রিয়ভাবে লড়াই করেছে। আজ ইরান মুসলিম বিশ্বের কথা ভাবছে, একটা সময় ইসলামিক স্টেট বারংবার বার টার্গেট করেছে, সেই ইরানকেই। ইরানের ভিতরে হয়েছিল হামলার ষড়যন্ত্র। অথচ তেহরান বারংবার বলেছে, তারা বড় কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। যদিও নিরাপত্তার খাতিরে ইরান সিরিয়া এবং সমমনা আন্দোলনের তথাকথিত আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট হিসেবে পরিচিত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধ অক্ষের তৎপরতা থামিয়ে রাখেনি। যেখানে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী, ফিলিস্তিনের হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীসহ ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা।

 

এই যে ইরান একটা সময় এক ঘরে হয়েছিল, মূলত দুটো কারণ ছিল। ছড়িয়ে দেওয়ার মডেল হিসেবে ইসলামী বিপ্লব পরিচিতি পাওয়ার পর উপসাগরীয় তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলো ইরানকে হুমকি হিসেবে দেখে। আর দ্বিতীয়ত ইরান ঐতিহাসিকভাবে নিজেকে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। বিশেষ করে তার ভূখণ্ড সম্পদ জনসংখ্যা এবং পারস্য সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের কারণে। যার কারণে টক্কর বাঁধে সৌদি আরবের সঙ্গে। যদি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির কথা বলা হয়, সেখানে সৌদির সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। পুরোটাই চলে উপর উপর দিয়ে। বিগত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেছে। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘ নব্য মধ্যপ্রাচ্য স্নায়ুযুদ্ধ’। আর বিগত কয়েক বছরে তো এই অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ছায়া যুদ্ধের মাধ্যমে সংঘাত আরো বেড়েছে। তার পরেও কিন্তু ইরান সৌদির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। আসলে ইরান বুঝে গিয়েছে, এই মুহূর্তে পশ্চিমাদের সাথে লড়ার জন্য মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে বড্ড দরকার। যদিও ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সম্পর্কে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে সৌদি আর ইরান। কুটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক এবং বিনিয়োগ চুক্তি। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে থেকেও কিন্তু ইসরায়েল অন্যান্য দেশগুলোর কোন ধরনের জোটের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং কাজ করছে স্বতন্ত্রভাবে। দেশটার শক্তিও কম নয়। কৌশলে হাতে হাত মিলিয়ে চলছে পশ্চিমাদের সঙ্গে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক খুব একটা সরল নয়। যেহেতু আরব বিশ্বে থেকেও ইসরায়েল একেবারেই আলাদা। তাই বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের কাছে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে দেশটা।

 

মধ্যপ্রাচ্যের নায়ক ইরান, এবার শুধু সফল হওয়ার অপেক্ষা!

সত্যি কথা বলতে এখানে যেন ইরান কিছুটা ভয় পাচ্ছে। কারণ সময়টা যেন আর কারো অনুকূলে নেই। আর থাকবেই বা কি করে? মুসলিম বিশ্বের ঐক্যটাই তো আজ ভাঙতে বসেছে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে শুধু অভ্যন্তরীণ কোন্দল, হানাহানি আর বিভেদ। মুসলিম বিশ্বের ক্রান্তিকালে সঠিক নেতৃত্বের দরকার। সেই ভূমিকাটা হয়তো এবার পালন করবে ইরানই। কারণ যদি বলা হয়, মুসলিম বিশ্বের নেতা কে? এই প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু বড্ড কঠিন। সে ক্ষেত্রে সামনে চলে আসবে তিনটি দেশের নাম। সৌদি আরব, ইরান আর তুরস্ক। কিন্তু বহুদিন ধরেই মুসলিম বিশ্বের সংকটের ক্ষেত্রে সৌদি আরব তার প্রত্যাশিত ভূমিকা কোথাও গিয়ে যেন পালন করতে পারেনি। নেতৃত্বের আসনে আসতে পারেনি। এমনটাই মনে করে সমালোচক মহল। উল্টে প্রকাশ পেয়েছে সৌদি আরবের আধিপত্যশীল আচরণ। ইরান সৌদির তিক্ততা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ভোগাচ্ছে গোটা মুসলিম বিশ্বকে। ইয়েমেন আর কাতারের সঙ্গেও সৌদি দিনের পর দিন সম্পর্ক খারাপ করেই চলেছে। অপরদিকে সামরিক দিক থেকে কিন্তু মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ তুরস্ক। দেশটি সামরিক জোট ন্যাটোরও সদস্য। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, তিনি গোটা মুসলিম বিশ্বকে আদৌ নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা সেখানে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তাই অবশেষে পড়ে থাকে ইরানের নাম। এবার দেখা আর আদৌ ইরানের প্রচেষ্টা সফল হয় কিনা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version