।। সোনম ভুঁই ।।
বাংলাদেশিদের ভারতে আসায় তীব্র অনীহা? চিকিৎসা করানোই কাল? দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেনের টিকিট নিয়ে ব্যাপক কালোবাজারি! ফায়দা লুটছে কারা? বাংলাদেশের মানুষ দিশেহারা, ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রির রমরমা। বিস্ফোরক সিক্রেট ফাঁস। বিমান ভাড়াও কি কম? ভারতে বড় বিপদ দেখছে ওপার বাংলার মানুষ। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কপালেও দুঃখ। রেমিট্যান্সে এফেক্ট?বাংলাদেশিদের এই ভোগান্তির শেষ কোথায়? চিকিৎসা চাইছেন, দুর্ভোগ নয়। সমস্যার শুরু এখানে। ইস্টকোস্ট রেলের খুরদা ডিভিশনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। দক্ষিণ ভারতগামী গুচ্ছেক ট্রেন বাতিল। সেক্ষেত্রে ভেলোরে পৌঁছতে হলে কাটপাটি যাওয়ার জন্য শিবরাত্রির সলতে হয়ে জ্বলছে একমাত্র রাত্রি ১০:৫৫ র হাওড়া যশবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেস।
যেখানে রীতিমতো ঠাসা প্যাসেঞ্জার ফলে চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যেতে চাওয়া মানুষগুলো মারাত্মক সমস্যায় পড়ে গেছেন, যাচ্ছেন। চূড়ান্ত অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশিদেরও। একে দঃ ভারতগামী সব প্যাসেঞ্জারের চাপ হাওড়া যশবন্তপুরে, আর ঠিক সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে। ট্রেনের টিকিট নিয়ে শুরু চরম কালোবাজারি যে গেরোয় পড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী বাংলাদেশিরা। কেন? কারণ প্রতিবছর বিদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর ২২ শতাংশ বাংলাদেশি। আর বাংলাদেশ বলছে, বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ বাংলাদেশি রোগী ভারতে আসেন শুধুমাত্র চিকিৎসা করাতে। তাই, ভোগান্তিও তাদের। কিরকম? অভিযোগ, বিভিন্ন রকম সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বা এআই টুল্স ব্যবহার করে যেমন অনলাইনে অতিরিক্ত দামে টিকিট কাটা হচ্ছে, তেমনই ভারতীয় রেলের আধিকারিক, কর্মীরা মাঝখান থেকে কমিশন নিয়ে ডবল দামে বিক্রি করছেন টিকিট এমন অভিযোগ ও রয়েছে।
যেমন, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর স্পষ্ট বক্তব্য টেক্সট ইন
টু টায়ার, ২৬০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৪৮০০ বা ৫০০০ টাকায়। থ্রি টায়ার, ২১০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ বা ৪২০০ টাকায়। তাও যাওয়া যাবে সেটার কনফার্মেশন নেই। অতিরিক্ত টাকা মুনাফা লুটছে রেল ব্যবস্থার ভেতরের লোকজন। অথচ, সব জেনেও দায়ে পড়ে, বাধ্য হয়ে সেই টিকিটই কিনতে হচ্ছে রোগীর পরিবারকে আর ওই বড় অঙ্কের টাকা খরচ করার ক্ষমতা যাদের নেই তারা ভুগছেন, চিকিৎসাই করাতে যেতে পারছেননা। ক্যানসার, গ্যাসট্রিক, হার্টের অসুখ, কিডনি সহ মারাত্মক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দিনের পর দিন তারা কলকাতায় কাটাচ্ছেন। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ এক দুবার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার উৎসাহই হারাচ্ছেন। দঃ ভারতে চিকিৎসা তাদের কাছে স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
তবে, ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সমস্যা খানিক কম। কারণ, ভারতীয়রা সাধারণত খুব ব্যাতিক্রমী কিছু না ঘটলে ৩ মাস আগে থেকে টিকিট কেটে রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশিরা? প্ল্যানিং ছাড়াই হঠাৎ করে এসে টিকিট কেটে ভেলোর যেতে চান। অনেক ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি সিচুয়েশনও থাকে। সেক্ষেত্রে অনেকেই বিদেশী কোটায় ট্রেনের টিকিট কাটেন। ফরেন কোটার টিকেটের দাম সাধারণ টিকেটের সমান। যদি ফরেন কোটাতেও টিকেট না পাওয়া যায় তাহলে একমাত্র ততকালই ভরসা, কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই কোটা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অ্যাডজাস্ট করতে গিয়েও রেল কতৃপক্ষের নাভিশ্বাস উঠছে, হিমসিম খাচ্ছেন ট্রাভেল এজেন্টরাও। এ তো গেল ট্রেনের কথা, অন্যদিকে বিমান ভাড়াও কিন্তু আকাশছোঁয়া তাহলে উপায়? সেই কারণেই কি ধীরে ধীরে বাংলাদেশিরা ভারতের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে? মোদ্দা কথা, যে বাংলাদেশি রোগীদের উপর ভর করে ভারতের কলকাতায়, দক্ষিণ ভারতে এমনকি দিল্লিতেও চিকিৎসা ব্যবস্থা কেন্দ্রিক ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল এখন সেই বাংলাদেশিরাই চিকিৎসা করাতে এসে নাজেহাল, হয়রান। ফলে, স্থানীয় এজেন্ট, হাসপাতাল, ব্যবসায়ীরাও এফেক্টেড হচ্ছে।
তাছাড়া, ভারত বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। কোথাও গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে প্রতিবেশী দেশের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি।
তবে, শুধু চিকিৎসার প্রয়োজনেই নয়। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ ভারতে আসেন ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ ভারত ভ্রমণে আসেন। আর, প্রতিদিন গড়ে ৭-১০ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে আসেন। তারমধ্যে সিংহভাগ আসেন স্থলপথে, যারা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যান বিভিন্ন কাজে। সেক্ষেত্রে বলতেই হচ্ছে কোভিড পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতু চালুর পর এপার ও ওপার বাংলার মধ্যে যে ব্যবসায়িক লেনদেন গতি পেয়েছিল, ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা যেভাবে বেড়েছিল; বর্তমানে পুরো বিষয়টা ১৮০° অ্যাঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে তার ঠিক উল্টো অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ছবিটা বদলাচ্ছে, ভারতের উপর থেকে বাংলাদেশের মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব মোটেই যে ভালো হবেনা, সেটা হলফ করে বলা যায়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম