।। প্রথম কলকাতা ।।
International Mother Language Day: আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই ভাষার অধিকার চেয়ে আমার হাজার হাজার ভাইদের রক্ত ঝরেছে। শহীদ হয়েছেন অনেকে। এটি জনগণের জন্য একটি বিশেষ দিন। একে অপরের মনের ভাব প্রকাশের জন্য ও যোগাযোগ তৈরিতে ভাষা সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য ভাষার সঙ্গে নিজের মাতৃভাষাকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের বাইরে ত্রিপুরা (Tripura), পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), অসমের (Assam) বরাক উপত্যকার অন্যতম ভাষা বাংলা। যদিও শুধু বাংলা ভাষা নয়, প্রয়োজনে মানুষ এখানে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে থাকে। ওপার বাংলায় (Bangladesh) বাংলা ভাষার (Bengali Language) ব্যবহার একটু বেশিই হয়। বর্তমানে পৃথিবীর ৩০ দেশে ১০০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু রয়েছে। যেখানে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণার কাজ করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই দিনটি পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে অনেক বড় ইতিহাস। আর এই দিনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ওপার বাংলার স্বপ্ন, ঐতিহ্য, বহু মানুষের আত্মত্যাগ, হার না মানা লড়াই ও সংগ্রাম। এক কথায় বলতে গেলে, বিগত বহুদিনের লড়াইয়ের ফল আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস।
কিন্তু কেন পালন করা হয় এই দিনটি? কীভাবে ভাষা দিবস আন্তর্জাতিকতার শিখরে পৌঁছালো?
সেই সময়ের ঘটনা যখন ভারত (India) সবে স্বাধীন হয়েছে। ধর্মের কারণে আলাদা হওয়া পাকিস্তানের একটি পূর্ব পাকিস্তান, অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রতিবেশী পূর্ব পাকিস্তানে গুরুত্ব পেয়েছে বাংলা। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু (Urdu) প্রধান ভাষা। আর তাতেই পূর্ব পাকিস্তান চোখের বিষ হয়ে উঠেছিল তৎকালীন পাক সরকারের। এরপর বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে সরব হয় পূর্ব পাকিস্তান (East Pakistan), শুরু হয় আন্দোলন। যদিও প্রথমে লড়াইটা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ ছিল। ভাষা আন্দোলন-ইতিহাস ও তাৎপর্য বইয়ে লেখা রয়েছে এমনটাই। বইটি আবদুল মতিন ও আহমদ রফিকের লেখা। বইয়ের কথা অনুযায়ী, চল্লিশের দশকের শুরুতেই সাহিত্যিকরা এই বিষয়ে নজর দিয়েছিলেন।
সেই সময় এই বিষয়ে নানা মত দিয়েছিলেন সকলে। পক্ষে-বিপক্ষে সকলেই নিজেদের বক্তব্য রেখেছিলেন। তার পর ধীরে ধীরে এই বিষয় নিয়ে আওয়াজ তোলে ছাত্ররা এবং এটি রাজনৈতিক আঙ্গিনায় পৌঁছে যায়। ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্র ও সমাজকর্মীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। যার ফলে শহীদ হন অনেক তরুণরা। মাতৃভাষার অধিকার ও সম্মান রক্ষার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল, তাকে স্মরণ করে পালন হয় এই দিনটি।
এই দিনটি পৃথিবীর সব জাতির মানুষের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদার কথা মনে করিয়ে দেয়। বাঙালির জন্য বিশেষভাবে এই দিনটি আবেগের কারণ হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, বাংলার অধিকার নিয়ে রাস্তায় নামা তরুণদের আত্মত্যাগ রয়েছে এদিনের সঙ্গে জড়িয়ে। ঢাকার রাজপথে রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল সালাম, রফিক, বরকত জব্বারদের। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই ও অক্লান্ত পরিশ্রমের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ, যার শিকড় এই বাংলা ভাষা। কিন্তু এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকতার নাম দেওয়ার পেছনে প্রথম উদ্যোগী হন বাংলাদেশের রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম অর্থাৎ এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এই দুজনের নাম। কানাডায় (Canada) বসবাসকারী এই দুই বাঙালি ১৯৯৮-এর ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপুঞ্জের তৎকালীন মহাসচিবের কাছে আবেদন পত্র পেশ করেন।
যেখানে ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানানো হয়। এরপর ১৯৯৯-এর ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে ভারত, ইরান, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া সহ আরও বেশ কিছু দেশ সমর্থন জানায়। যার ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় পাশ হয় প্রস্তাবটি। ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। এত মানুষের লড়াই, হরতাল, বন্ধ, অবরোধ অবশেষে কাজে এসেছে। যদিও ভারতে বাংলার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন প্রথম হয়েছিল মানভূম জেলায়। সেই আন্দোলন শুধু মানভূম জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাক উপত্যকায় এই নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। স্বাধীনতার সময় অসমে প্রায় ২০ লক্ষ বাঙালির বসবাস ছিল। কিন্তু ১৯৫১ সালের জনগণনায় তা কম দেখানো হয়। ধীরে ধীরে শিক্ষা, চাকুরী ক্ষেত্রে বাঙালিরা বঞ্চিত হতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৬০-এর ১০ অক্টোবর অসমীয়া ভাষাকে অসমের একমাত্র ভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। যার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বাঙালিরা। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ১০ জনের অধিক এবং শেষে বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার অধিকার মেনে নেওয়া হয়। বলতে গেলে, মাতৃভাষাকে হারানোর ভয় থেকে যে লড়াই হয়েছিল, তার ফল এই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম