Adyapeath Mandir: কিভাবে তৈরি হয়েছিল আদ্যাপীঠ, নেপথ্যের কাহিনী শুনতে গায়ে কাঁটা দেবে

।। প্রথম কলকাতা ।।

Adyapeath Mandir: পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলিরমধ্যে অন্যতম আদ্যাপীঠ। দক্ষিণেশ্বরের কিছু দূরেই দেবী আদ্যার এই পীঠস্থান। যেখানে দেবী কালী, আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে পূজিতা হন। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হয় রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য শ্রী অন্নদা ঠাকুরের হাত ধরে৷ এই আদ্যাপীঠের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনি৷ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদাচরণ আদ্যাপীঠ মঠ প্রায় ২৭ বিঘা জায়গা জুড়ে অবস্থান করে। এই মন্দিরে দেবী আদ্যার মূর্তি ছাড়াও রয়েছে রাধাকৃষ্ণ ও শ্রীরামকৃষ্ণের ধ্যানরত মূর্তি। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদাঠাকুর ছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা৷ তাঁর পৈতৃক নাম অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য। তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন। সালটা ছিল বাংলার ১৩২১। চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় কবিরাজি পড়তে এসে, কলকাতার আর্মহাস্ট স্ট্রিটে এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতেন৷ সেখান থেকেই বৃত্তি নিয়ে পাশ করেন কবিরাজি। বন্ধুর বাবার সাহায্যেই কবিরাজির ডিসপেনসারির জন্য দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন৷ আদ্যপীঠ মূলত ১৯১৫ সালে অন্নদাচরণ ভট্টাচার্যের অনুগামীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে।

অন্নদাঠাকুরেকে স্বপ্নাদেশ দেন আদ্যা মা ও শ্রীরামকৃষ্ণ। অন্নদাচরণ, একদিন স্বপ্নাদেশ পান শ্রীরামকৃষ্ণের। স্বপ্নাদেশে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ইডেন গার্ডেনসে গিয়ে, সেখানে ঝিলের পাশে নারকেল এবং পাকুড় গাছের কাছ থেকে কালী মূর্তি নিয়ে আসতে বলেন৷ স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনি সেখানে যান এবং ঝিলের পাশ থেকে ১৮ ইঞ্চি আদ্যা মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি পান৷ সেদিন ছিল রামনবমী তিথি। রাতে দেবী তাঁকে দেখা দিয়ে বলেন,’অন্নদা কাল বিজয়া দশমী। তুমি আমায় গঙ্গায় বিসর্জন দিও৷’ দেবীর এই কথা শুনে অন্নদা এক প্রকার আঁতকে ওঠেন। সে ভাবতে থাকে, পুজোপাঠ না করায় মা রাগ করে চলে যাচ্ছেন৷ তখন দেবী বলেন, “আমি শুধু শাস্ত্র বিহিত মতে পুজো পেতে চাই তা নয়। মা খাও, মা পড়ো- এমন সহজ সরল প্রাণের ভাষায় যে ভক্ত নিজের ভোগ্যবস্তু এবং ব্যবহার্য বস্তু আমাকে নিবেদন করেন, সেটাই আমার পুজো৷ যদি কোনও ভক্ত আমার সামনে আদ্যাস্তোত্র পাঠ করে, তাহলে আমি বিশেষ আনন্দিত হই।” এরপর দেবী আদ্যাস্তোস্ত্র বলেন এবং অন্নদা তা লিখে রাখেন। সেই স্ত্রোত্রই বর্তমানে আদ্যাপীঠে পাঠ হয়৷

পরে দেবী আদ্যার স্বপ্নাদেশ মতো, অন্নদা বিজয়া দশমীতে মূর্তিটি বিসর্জন দেন মাঝগঙ্গায়৷ স্বপ্নাদেশ মতই মূর্তিটির ছবি তুলে রেখেছিলেন অন্নদাচরণ৷ সেখান থেকেই তৈরি হয় বর্তমান আদ্যামূর্তি৷ বাংলার ১৩২৫ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে স্বপ্নে সন্ন্যাস দীক্ষাও দেন। আদ্যাপীঠের ভোগে রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য৷ দেবী আদ্যার জন্য সাড়ে ২২ সের চাল রান্না হয়। রাধাকৃষ্ণের জন্য সাড়ে ৩২সের চাল বরাদ্দ রয়েছে এবং রামকৃষ্ণ পরহংসদেবের ভোগ রান্না হয় সাড়ে ১২ সের চালে৷ সেই ভোগ পঞ্চব্যঞ্জনে নিবেদন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে বিশেষ পরমান্ন ভোগ৷ অন্নদা ঠাকুর নির্দেশ দিয়েছিলেন, বৃহৎ ভোগ মন্দিরে যাবে না। মন্দিরের পাশে ভোগালয়ে তা সাজিয়ে দেওয়া হবে। সেখানেই নিবেদন করা হবে ভোগ৷ তাঁর নির্দেশ মতো শুধুমাত্র পরমান্ন ভোগ দেবীর কাছে যায় আজও। এছাড়া রাতে নিবেদন করা হয় ঘি এবং উৎকৃষ্ট চাল দিয়ে তৈরি অমৃতভোগ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version