।। প্রথম কলকাতা ।।
Round Up 2022: ২০২২ মানুষকে দিয়েছে একটানা ঘরবন্দি থেকে মুক্তির স্বাদ। যদিও করোনা আতঙ্কের রেশ কাটেনি। ওয়ার্ক ফ্রম হোমে মানুষ নতুন ভাবে ঝালিয়ে নিয়েছে পুরনো সম্পর্ক গুলিকে। বদলে ফেলতে হয়েছে হেঁসেলের হিসেব নিকেশ। করোনার (Corona) জেরে একদিকে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অপরদিকে পাল্লা দিয়ে উত্তরোত্তর বেড়েছে ভোজ্য তেল (edible oil) আর জ্বালানি তেলের (Fuel oil) দাম। বিশেষ করে যারা কাজ হারিয়েছিলেন তাদের কাছে ২০২২ এর শুরুটা এক্কেবারে ভালো ছিল না। কারোর দিন কেটেছে একরাশ মন খারাপ নিয়ে, কারোর বা দিন কেটেছে সংসার খরচের হিসেব করে। আর কয়েকটা দিন পরেই নতুন বছর, ২০২৩ কে মানুষ সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে। পিছনে পড়ে থাকবে ২০২২ এর সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নার মিলমিশে নানান মুহূর্ত। ২০২২ এ অন্যতম চর্চিত বিষয় ছিল পেট্রোল-ডিজেল আর ভোজ্য তেলের দাম। এই প্রতিবেদন আপনাকে মনে করিয়ে দেবে ২০২২ এর তেলের হিসেব-নিকেশের কথা।
জ্বালানি তেলের জ্বালায় অস্থির বাজার
২০২২ এর ৬ই এপ্রিল দাঁড়িয়ে আমজনতার মাথায় হাত। কারণ পেট্রোল-ডিজেলের দামে তখন আগুন, ১৬ দিনে দাম বেড়েছে ১০টাকা। জ্বালানির দামে যেন কোনো লাগাম নেই। প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ছে দাম। ১৬ দিনের মাথায় পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছিল ১৪ বার। সেদিন কলকাতায় পেট্রোলের (Petrol) দাম দাঁড়ায় ১১৫ টাকা ১২ পয়সা। অপরদিকে ডিজেলের (Diesel) দাম লিটার প্রতি হয় ৯৯ টাকা ৮৩ পয়সা। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের (Ukraine-Russia conflict) বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছিল জ্বালানির দাম। গত দশ বছরের তুলনায় ২০২২ এ তুলনামূলক ভাবে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেশ অনেকটা বেড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে গোটা বিশ্বে। কারণ এই দুটি দেশ অপরিশোধিত তেলের রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। এসবের মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয় ভারতে। সেই সময় নাকি পেট্রোলিয়ামের স্টক কমতে শুরু করে। যেখানে সব দেশেই প্রায় তিন মাস কিংবা ৯০ দিনের জন্য পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থাকা দরকার, সেখানে ভারতে পেট্রোল-ডিজেল মিলিয়ে মজুদ ছিল মোট ৭৪ দিনের তেল।
সময়টা এপ্রিল মাসের ২ তারিখ। যুদ্ধের কারণে তখন ১৪ বছরে অপরিশোধিত তেলের দর সর্বোচ্চ অংশে পৌঁছেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩০ ডলার অতিক্রম করেছে। অথচ ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ছিল মাত্র ৪২ মার্কিন ডলার। সেই দর হঠাৎ করেই ২০২২ এর মার্চ মাসের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যেই ব্যারেল প্রতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১১ মার্কিন ডলারে। যদি ১০ বছর আগে ফিরে দেখেন অর্থাৎ ২০১২ সালে জ্বালানি খরচের দিক থেকে সেই সময় মানুষ বেশ স্বস্তিতে ছিলেন। ২০১২ সালে মে মাসের দিল্লিতে পেট্রোলের দাম ছিল মাত্র ৭১ টাকা। মুম্বাইতে পেট্রোলের দাম ছিল ৭৮ টাকা। জুন মাসে দিল্লিতে দাম হয় ৭১ টাকা। মুম্বাইতে দাম হয় ৭৬ টাকা। সেই দরের সাথে এখনকার দরের কোনো তুলনাই চলে না।
ভোজ্য তেলের দরে চাপে ছিল হেঁসেল
২০২২ এ হেঁসেলে শান্তি ছিল না। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ ২৫ শতাংশ বা ৪ থেকে ৬ লক্ষ টন কমতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। ভারতে ভোজ্য তেলের মোট ব্যবহার প্রায় ২৩০ থেকে ২৪০ লক্ষ টন। যেখানে সূর্যমুখী তেলের অবদান প্রায় ১০%। ভারত বছরে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করে থাকে। যেখানে যেখানে ইউক্রেন পাঠায় ৭০ শতাংশ, আর রাশিয়া পাঠায় ২০ শতাংশ। ইউক্রেনের বন্দরে আটকে যায় প্রায় তিন লক্ষ টন সূর্যমুখী তেল। ভারতে ফেব্রুয়ারিতে সূর্যমুখী তেলের দাম বাড়ে ৪ শতাংশ।
দেশের সর্ষে আমদানি বাড়লেও দাম কমেনি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে কেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে রাজ্যগুলিকে নানা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি কড়াকড়ি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এমআরপি অর্থাৎ ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইস থেকে কোনোভাবেই দাম বেশি নেওয়া হবে না। পরিশোধিত পাম তেলের শুল্ক ২০২২ সালের মার্চের শেষ পর্যন্ত ১৭.৫% থেকে কমিয়ে করা হয় ১২.৫%। কিন্তু আখেরে লাভ চোখে দেখতে পায়নি সাধারণ মানুষ। অপরদিকে সরকারের ভাঁড়ারে তৈল বীজের টান পড়ে। বিশেষ করে সর্ষের বীজের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। বহু মানুষ মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় তখন ঝোঁকে নিম্নমানের তেলের দিকে। দিল্লিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ১ লিটার সরষের তেলের দাম ছিল ১৩৬ টাকা। ২০২১ সালে সেই তেলের দাম ডিসেম্বর মাসে এসে দাঁড়ায় ২০৩ টাকা। আর ২০২২ এর খবর তো আপনি জানেন অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে সর্ষের তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। জ্বালানি তেলের পাশাপাশি টেক্কা দিয়েছে ভোজ্য তেলের দাম, অথচ এই দাম বৃদ্ধির হার ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ছিল ৫০ শতাংশ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম