Israel-Hamas War: গাজায় যুদ্ধ বিরতি মানল হামাস, টালবাহানায় ইসরায়েল! রাফায় নেতানিয়াহুর অন্য প্ল্যান

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Israel-Hamas War: বড় প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের। গাজায় যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব মেনে নিল হামাস, কিন্তু ইসরায়েল কেন মানছে না? গাজায় যুদ্ধ থামবে কবে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। ওদিকে রাতের অন্ধকারে রাফায় প্রবেশ করল ইসরায়েলের সামরিক ট্যাংক। যে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে এত আলাপ আলোচনা, এখন সেটাই নিয়ে ইসরায়েলের এত টালবাহানা কেন? চাইছেটা কি নেতানিয়াহু? যুদ্ধ বিরতির পুরো বলটাই রয়েছে ইসরায়েলের কোর্টে। হামাসের কী এমন দাবি ছিল, যা ইসরায়েলের মানতে এত অসুবিধা? নেতানিয়াহুর একগুঁয়ে স্বভাবে একের পর এক হুমকি। রাফায় কি তাহলে এবার বড়সড় হামলা শুরু হয়ে যাবে?

 

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করলেও, ইসরায়েলের যুক্তি এই প্রস্তাব তাদের মনের মতো হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এখন গোটা বিষয়টা দাঁড়িয়ে রয়েছে ইসরায়েলের হাতে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি, হামাস যে প্রস্তাবটা গ্রহণ করেছে, সেটা ইসরায়েলের মৌলিক শর্তগুলো থেকে অনেক দূরে। তাই এমন প্রস্তাবে আপাতত ইসরায়েল যাচ্ছে না। তবে এই নয় যে আলোচনা থেমে থাকবে। কিন্তু ওদিকে হাল খারাপ রাফাবাসীর। ইতিমধ্যেই রাফা শহরের বহু অংশ খালি করার জন্য ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করেছিল। তারপর সেই জায়গায় চালায় বিমান হামলা। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণের এই শহরটিতে আক্রমণের হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরায়েল, এবার তা করেও দেখাচ্ছে। যেন কারোর কোন বারণই শুনছে না দেশটা। এক পক্ষ যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হলেও, অন্য পক্ষ দাঁড়াচ্ছে বেঁকে। ইসরায়েলের কিছু কর্মকর্তার দাবি, মূলত মিশরের যে প্রস্তাবটি হামাস গ্রহণ করেছে, তা একটা দুর্বল সংস্করণ। যেখানে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা খুব একটা নেই । তাই ইসরায়েল এই প্রস্তাব আপাতত মেনে নিতে পারছে না। এই প্রস্তাবে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বিরতির চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী পক্ষ হিসেবে দেখানোর একটা কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

 

ওদিকে হামাস তাদের বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে, হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়াহ্ কাতারের প্রধানমন্ত্রীসহ মিশরের গোয়েন্দা প্রধানকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে তাদের প্রস্তাবে অনুমোদন জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, শোনা যাচ্ছে যদি হামাসের শর্ত পূরণ হয়, তাহলে তারা নাকি সারা জীবনের জন্য ইসরায়েলের সাথে শত্রুতামূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে রাজি। এমত জায়গায় দাঁড়িয়ে, কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, হয়তো হামাস এইবার তার সশস্ত্র সংগ্রামে ইতি টানতে চাইছে। যদিও এই বিষয়ে হামাস বিস্তারিত কিছু বলেনি। আপাতত যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে, তা বেশ কয়েকটা ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপ স্থায়ী হবে টানা ৪২ দিন। আর এই সময়কালের মধ্যে মুক্তি পাবে হামাসের জিম্মি করা ইসরায়েলের নারী যোদ্ধারা। অপরদিকে তার বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পাবে প্রায় ৫০ জন বন্দী ফিলিস্তিনি। তবে হ্যাঁ, এই সময় কিন্তু ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজাতেই থাকবে।

 

এছাড়াও চুক্তিতে বলা আছে, যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হওয়া মাত্র ১১ দিনের মধ্যে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বাহিনীর যে সমস্ত সামরিক স্থাপনা গুলো তৈরি করেছিল, সেগুলো ভেঙে ফেলা হবে। আর ওই ১১ দিনের পর উত্তরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাবে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। তারপর শুরু হবে যুদ্ধ বিরতির দ্বিতীয় পর্যায়। যে পর্যায়ে, গাজা থেকে সম্পূর্ণ ভাবে উঠে যাবে ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ। চুক্তির প্রথম ধাপেই শুরু হয়ে যাবে গাজা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। যেখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে গাজার রাস্তা, বিদ্যুৎ, জল, যোগাযোগ ব্যবস্থার কাজ। আর চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে গাজার ঘরবাড়ি, বেসামরিক স্থাপনা পুনর্গঠনে পাঁচ বছর মেয়াদী একটা পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হতে পারে। অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে চুক্তির তৃতীয় ধাপে। হামাসের মতে, এই যুদ্ধ বিরতি হবে কি হবে না, এই বলটাই এখন রয়েছে ইসরায়েলের কোর্টে। ইসরায়েলকেই ঠিক করতে হবে, বলটা তারা কোন দিকে টার্গেট করবে। আদৌ যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে রাজি হবে, নাকি হবে না, সেটা এখন নির্ভর করছে নেতানিয়াহুর একটা সিদ্ধান্তে। যেহেতু হামাসের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের দাবি পূরণ হয়নি, তাই এই চুক্তি নিয়ে পুনরায় আলোচনার জন্য কায়রোয় পাঠানো হবে একটা মধ্যস্থতাকারীদের দল।

 

সংঘর্ষ হচ্ছে হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে। আর এর মাঝে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে, যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম থেকেই বারংবার দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। এবারেও যুদ্ধ বিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জো বাইডেনের। হামাস নেতা খলিল আল হাইয়ারের কথায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাকি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারীরা। মূলত দুই পক্ষের যুদ্ধ বিরতিতে মধ্যস্থতা করছে কাতার আর মিশর। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথুউ মিলার জানিয়েছিলেন, গাজায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি বাইডেন প্রশাসনের অগ্রাধিকার তালিকার রয়েছে একদম শীর্ষে।

 

শুধু তাই নয়, এই চুক্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান বিল বার্নস। অর্থাৎ এটা ধরে নেওয়া যায়, বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে এখন সবাই যুদ্ধ বিরতি চুক্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যার পিছনে বেশ কয়েকটা উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। প্রথমত মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক উত্তেজনাকে শান্ত করা, তাতে আখেরে লাভ যুক্তরাষ্ট্রের। এই উত্তেজনার কারণেই কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রচুর লস খেতে হচ্ছে দেশটাকে। তার উপর ইসরায়েলকে প্রথম থেকে সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে কম চাপে পড়তে হয়নি। দেশের অন্দরেরও এতটাই চাপ যে, এখনই না সামলালে পরবর্তীকালে নির্বাচনের সময় বাইডেনের গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে।

 

এই দ্বন্দ্বের শুরুটা হয়েছিল, গত বছরের ৭ই অক্টোবর। যখন ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালায় হামাস গোষ্ঠী। নিহত হন প্রায় ১২০০ ইজরায়েলি নাগরিক। সেই সময় হামাস প্রায় আড়াইশো জনকে জিম্মি করেছিল। তারপর থেকে হামাসকে ধরতে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৪ হাজার ৭৩৫ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ। যখন যুদ্ধ বিরতি আলোচনা নিয়ে এত শোরগোল, তখনও কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের হামলা থেমে নেই। বরং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কারোর কোন কথা না শুনে, রাফায় পাঠিয়েছেন যুদ্ধ ট্যাঙ্ক। এমনটাই দাবি করছে কিছু ফিলিস্তিন এবং মিশরের কর্মকর্তারা।

 

মিশরের দাবি, হয়তো বা রাফায় স্বল্প পরিসরে অভিযান চালাবে ইসরায়েল। অভিযান শেষে সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসরায়েল নাকি মিশরকে জানিয়েওছে। যদিও এখনো এই বিষয়ে কিছুই বলেনি তেল আবিব। ইসরায়েল যে সহজে হামাসকে ছেড়ে দেবে, এমনটা নয় কারণ কয়েক মাস ধরেই নেতানিয়াহু বলে আসছিলেন, বন্দি চুক্তি হোক আর না হোক, তিনি হামাসের সর্বশেষ শক্ত অবস্থান অর্থাৎ রাফাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে তবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবেন। হামাসের অবশিষ্ট ছটা ব্যাটেলিয়নের চারটেই রয়েছে রাফাতে। ইসরায়েলের বিশ্বাস, রাফাতে শুধুমাত্র হামাসের নেতারাই নয়, বরং এখানে বন্দী অবস্থায় রয়েছে ইসরায়েলের জিম্মিরাও।

 

তবে রাফায় এখনো বড়সড় হামলা চালায়নি ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বাস করে, যে রাফায় বড় ধরনের অভিযান চালাবেন না দেশটা। তবে ইসরায়েলের পদক্ষেপ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করছে ওয়াশিংটন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, রাখায় বর্তমানে অবস্থান করছে প্রায় ১২ লক্ষ ফিলিস্তিনি। যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে গোটা বিশ্বকে। ইতিমধ্যে সৌদি আরব রাফা শহরকে লক্ষ্য বানানো বিপজ্জনক বলে হুমকিও দিয়েছে। সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন তারা মেনে নেবে না। সারমর্মে এটাই বলা যায়, গাজায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি এখন একটা জটিল বিষয় । যার সমাধানে ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে সমঝোতা ভীষণ দরকার।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version