।। প্রথম কলকাতা ।।
Qatar: চারিদিকে শুধু ধু ধু মরুভূমি। বালি ঘেরা দেশে এক ফোঁটা জল পেতে গেলেও লড়াই করতে হয়। বর্তমানে সেই দেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের তালিকায়! ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করে সারা বিশ্বজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে উপসাগরীয় এই ছোট্ট দেশ। বুঝতেই পারছেন কার কথা বলা হচ্ছে। দেশটি কাতার। দেশটির উত্থান ইতিহাস ঘাঁটলে কিছুটা আশ্চর্য হবেন। ভাববেন মাত্র কয়েক বছরে কিভাবে কোন জাদুতে কাতার এত ধনী হল? এমন মিরাকল বিশ্বের কম দেশই দেখাতে পেরেছে। এর চাবিকাঠি শুধু প্রাকৃতিক তেল আর গ্যাসের ভাণ্ডার নয়, কাতারের ভাঁড়ারে রয়েছে আরও অনেক রহস্য। যার কারণে তারা আজ বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশ।
সময়টা ১৯৭১ সাল, ব্রিটিশ শাসন থেকে বেরিয়ে এসে ধু ধু মরুপ্রান্তরের জন্ম নেয় নতুন ছোট্ট রাষ্ট্র কাতার। তখন দেশটির অর্থনীতি রীতিমত ধুঁকছে। অথচ সেদিনের সেই কঙ্কালসার দেশ মাত্র ৫০ বছরে কিভাবে টাকা ইনকাম করতে হয় তা সারা বিশ্বকে দেখিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এর নেপথ্যের অন্যতম কারণ তেল। কিন্তু কাতার এই তেলকে কাজে লাগিয়ে প্রথম দিকে খুব একটা লাভবান হয়নি। ১৯৪০ সালে কাতারে প্রথম তেলের সন্ধান মেলে। দেশটি নতুন স্বপ্ন নিয়ে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াতে থাকে। কিন্তু মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যে আবার আশার আলো নিভে যায়। তলানিতে গিয়ে ঠেকে তেলের খনি। কিন্তু ৭০ দশকে এসে আবার ভাগ্য খুলে যায়। এবার তেল নয়, কাতার আবিষ্কার করে ফেলে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি। বর্তমানে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্যাসের খনি রয়েছে কাতারে। কিন্তু সেই সময় দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের কদর কিংবা দাম সেভাবে আশাব্যঞ্জক ছিল না। কম মানুষই সেই সময় গ্যাস ব্যবহার করতেন। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এইভাবে কাতার চলতে পারে না।
কাতারের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে ১৯৯৬ সালে। ক্ষমতার হাত বদল হতেই নতুন খলিফা কাতারকে সমৃদ্ধশালী করতে উঠে পড়ে লাগেন । প্রচুর বিনিয়োগ করেন। হাতিয়ার বানান গ্যাস তরলীকরণ প্রক্রিয়াকে। দেশটি পরিবহন খরচ এতটাই কমিয়ে ফেলে যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিও দেখে হকচকিয়ে যায়। শুধু নিজের দেশের মধ্যেই নয়, পৃথিবীর আনাচে কানাচে গ্যাস পরিবহন করতে থাকে। বর্তমানে কাতার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ তরল গ্যাস রপ্তানির দেশ। কাতার বুঝে গিয়েছিল গ্যাস, তেল এগুলো সবই প্রাকৃতিক সম্পদ। এদের ভাণ্ডার একটা সময় শেষ হবেই। তাই মাকড়সার জালের মতো সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়াতে থাকে টাকা। গোটা বিশ্বে তাদের এই বিনিয়োগ যথেষ্ট প্রশংসার দাবিদার। আরব বিশ্ব কাতারকে অবরোধ করেছিল, কিন্তু তাতে দেশটির গায়ে কোনো আঁচ লাগেনি। উপরন্তু আরব বিশ্ব বাধ্য হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে।
কাতারের রাজধানীতে থাকা আকাশচুম্বী বাড়িগুলি সবার চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। যত দিন যাচ্ছে বিশ্বে কাতারের ব্যবসায় বিনিয়োগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশটি তুরস্কের সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি খামার, রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোজনেকট এবং যুক্তরাজ্যের বিশাল গ্যাস কোম্পানি ন্যাশনাল গ্রিডে রীতিমতো বড় ধরনের বিনিয়োগ করে আসছে। এই বিনিয়োগ হয় মূলত কাতার বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছিল ২০০৫ সালে। এই সংস্থা সংক্ষেপে কিউআইএ হিসেবে পরিচিত। ভাবলে কিছুটা আশ্চর্য হবেন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের সবচেয়ে জনবহুল শহর হাউস্টনের থেকেও কম জনসংখ্যার দেশ কাতার। সারা বিশ্বব্যাপী এই দেশটির সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৩৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ইউরোপের বহু দেশ কাতারে বিনিয়োগ করে। আবার কাতার জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ইতালির বিলাসবহুল ফ্যাশন হাউস এবং ফুটবল ক্লাবের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে আসছে। পাশাপাশি লন্ডনের স্যভয় হোটেল, শার্ড স্কাইক্র্যাপার, হ্যারোডস ডিপার্টমেন্ট স্টোর, অলিম্পিক ভিলেজ, এইচএসবিসি টাওয়ারেও কাতারের বিনিয়োগকারীদের মালিকানা রয়েছে। কাতারের বড় ধরনের বিনিয়োগগুলি ইউরোপে থাকলেও, সম্প্রতি কাতার দৃষ্টি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। ২০১৫ সালে কাতার নিউইয়র্কে একটি অফিস খুলেছে। হলিউডের সিনেমাশিল্পেও বিনিয়োগ করে চলেছে। এছাড়াও ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রসারিত হচ্ছে হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানের সঙ্গে।
আসলে কাতারে রয়েছে সম্পদ, মেধা, কূটনীতি, রাজনীতি আর সততা। এসব কিছু মিলেমিশে ছোট্ট মরুভূমির দেশ আজ সারা বিশ্ব জুড়ে কামাল দেখাচ্ছে। মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে কাতার বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ অর্থাৎ এই দেশে ধনী মানুষের অভাব নেই। কিভাবে জিরো থেকে হিরো হওয়া যায় তার জলজ্যান্ত উদাহরণ কাতার।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম