।। প্রথম কলকাতা ।।
Women Village: প্রায় ৩০ থেকে ৩১ বছর হয়ে গিয়েছে, এই গ্রামে পুরুষ প্রবেশ করেনি, তা সত্ত্বেও গর্ভবতী হয়ে যান মহিলারা। এখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙে নারী শক্তি এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এই গ্রামকে বলা হয় নারীর নিরাপদ স্বর্গ। নারীরা গ্রামের সীমানা পেরিয়ে পছন্দের পুরুষকে বেছে নেন। বলা হয়, এই গ্রাম স্বাধীনতার আরেক নাম। অথচ এই গ্রামে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ। পর্যটক (Tourist) হলে আলাদা ব্যাপার। গ্রামটি কেনিয়ার (Kenya) উমোজা।
সহজ সরল সুন্দর গ্রাম কেনিয়ার উমোজা। আফ্রিকার (Africa) ঐতিহ্যবাহী উমোজা গ্রামটি বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এখানে পুরুষ বসবাস নিষিদ্ধ। যার কারণে গোটা বিশ্বে নারীদের গ্রাম হিসেবে উমোজা আলাদা পরিচিতি পেয়েছে। উমোজা কথার অর্থ ঐক্য। এই গ্রামে যেতে গেলে যেতে হবে নাইরোবি থেকে অন্তত ছয় ঘন্টার দূরত্বে। নারী সর্বস্ব এই গ্রামের কথা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন এই গ্রামে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ? কেন শুধুমাত্র মহিলারাই এই গ্রাম আঁকড়ে ধরে বসে আছেন? আসলে ১৯৯০ সালে ঘটেছিল এক দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। রেবেকা লোলোসলি নামক এক নারী প্রায় ১৫ জন শারীরিক নির্যাতিত কিংবা বিভিন্নভাবে অবহেলিত নারী নিয়ে এক জোট তৈরি করেছিলেন। লোলোসলি নিজেও বহুদিন ধরে বিভিন্ন পুরুষদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, অথচ দেখেছিলেন চোখের সামনেই তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই নিজের জেদ থেকে তৈরি করেন উমোজা। যেখানে নিরাপদে থাকতে পারেন নারীরা। এখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবে এখানে পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারেন।
প্রতিবছর এই গ্রামের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান। আর তাদেরকে আপ্যায়ন করতে নানা ঐতিহ্যবাহী নাচ গানের ব্যবস্থা করে এই গ্রামের সংগ্রামী নারীরা। একেই পুঁজি করে তারা বেঁচে রয়েছেন। বর্তমানে গ্রামটি একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। নারীরা সাহসী হলে যে কত কিছু করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছে উমোজা গ্রামের মহিলারা। এছাড়াও তাদের ঐতিহ্যবাহী গয়না আর পোশাক বেশ নজরকাড়া। গ্রামের মহিলারা প্রত্যেকেই স্বনির্ভর। নিজেদের খাবার, কাপড় থেকে শুরু করে বাড়ির জন্য নিয়মিত তারাই আয় করেন। প্রত্যেক মহিলা সদস্য ছোট ছোট ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাদের হাতে বানানো গয়না গোটা বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মূলত পর্যটকদের এই গ্রামের প্রবেশ করতে গেলে কিছু প্রবেশ মূল্য দিতে হয়, আর তাই দিয়ে চলে গ্রামের উন্নয়নের কাজ। উমোজার নারীরা নিজেদের পছন্দের পুরুষকে খুঁজে নেন গ্রাম থেকে বেরিয়ে। ওই ব্যক্তির সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু একে অপরকে বিয়ে করেন না। তাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য গ্রামেই গড়ে উঠেছে স্কুল। তাই পুরুষ শূন্য গ্রাম বলে অসহায় অবলা ভাবলে মারাত্মক ভুল করবেন। এই গ্রামে মাথা উঁচু করে বাস করছেন মহিলারা। কোন পুরুষ যার ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেও পারে না।
উমোজা গ্রামের মহিলারা তাদের সন্তানের বাবার নাম বা পরিচয় চান না। এখানে প্রত্যেকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। গ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব প্রান দুজন প্রতিনিধি। প্রতিবছর প্রতিনিধির পরিবর্তন ঘটে। মহিলা ছাড়া গ্রামে থাকে বাচ্চারা। গয়না কিংবা পোশাক বানানোর পাশাপাশি গ্রামের মহিলারা কৃষিকাজ এবং পশু পালনের সঙ্গে যুক্ত।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম