Egypt-Israel relations: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাঠে মিশর, তলে তলে ইরানের সাথে ফন্দি

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Egypt-Israel relations: এবার ইসরায়েলের পিছনে পড়ল মিশর। ফিলিস্তিনিদের হয়ে এত কথা কেন বলছে দেশটা? শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা করে দিল। শুধুই কি ইসরাইলের উপর রাগ নাকি পুরোটাই কূটনৈতিক চাল? গাজার কথা কতটা ভাবছে মিশর? সাম্প্রতিক সময়, মিশরের সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্বটাই কি এর আসল কারণ? হঠাৎ মিশর ইসরায়েলের শত্রু বনে যাচ্ছে না তো? এই দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কিন্তু কম বিতর্ক নেই। কখনো মিষ্টি তো, কখনো তেতো। আবার কখনো বা একে অপরের প্রতি হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। কিন্তু এবার যেন ছাড়িয়ে গেল সমস্ত লিমিট। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যার মামলায় সমর্থনের পাশাপাশি লড়াইয়ের ঘোষণা করল মিশর।

 

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবার লড়াইয়ের মাঠে মিশর, সাপোর্ট ফিলিস্তিনকে

বিশ্ব ময়দানে একে একে বহু দেশ যখন কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইসরায়েলের পাশ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক সেই সময় মিশর সামনে এসে রীতিমত লড়াইয়ের ঘোষণা করল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় যেভাবে ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের উপর ক্রমবর্ধমান হামলা চলছে, ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সরাসরি টার্গেট করা হচ্ছে, সেই সব নানান অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিশরের এমন সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি দখলদার শক্তি হিসেবে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের যে দায়িত্ব আছে, তা পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে দেশটা। মিশরের দাবি, গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিংবা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত না করতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলকে যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটা মানা উচিত। গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে,আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা ঠুকেছে। এবার সেই তালিকায় যোগ দিল মিশরও।

 

যদি বলা হয়, মিশর আর ইসরায়েলের সম্পর্ক ঠিক কেমন? ভালো না মন্দ? এর উত্তরটা বেশ ঘোলাটে। এই দুই দেশের সম্পর্ক না চরম শত্রুতার, না ভালো বন্ধুত্বের। মিশরীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে রাফা ক্রসিং, যার গাজার অংশ দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। আর এখান থেকেই প্রবেশ করতে পারছে না মানবিক সহায়তা। যার জেরে, ক্রসিং এর মিশরীয় অংশে দাঁড়িয়ে রয়েছে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক। গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করতেই, প্রাণ বাঁচাতে গাজা উপত্যাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছে লক্ষ লক্ষ গাজা বাসী। এমত পরিস্থিতিতে, মিশরের মধ্যে কাজ করছে একটা বড় আশঙ্কা। কারণ রাফা ইসরায়েলে হামলার ফলে শরণার্থী সংকটে পড়তে পারে কায়রো। ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে মিশর। আরে এই শঙ্কার কথা বারংবার মিশর জানিয়েছে। কিন্তু সেসবে কানই দেয়নি তেল আবিব। এখানেই শেষ নয়, মিশর আর কাতার মধ্যস্থতা করেছিল, অবিলম্বে যাতে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করা যায়। সেই চুক্তি বাতিল করতেই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে কায়রো।

 

তারপর রাফায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হতেই, ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মিশর। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, বরং দুই দেশের এই তিক্ততার পিছনে কাজ করছে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন। অথচ গাজা ইস্যুতে মিশরই হল এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী। আরব দেশ হিসেবে প্রথম এই দেশটাই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছিল। আর সেই জায়গা থেকেই এবার পিছু হটছে মিশরীয় সরকার। আশঙ্কা, এবার গভীর প্রভাব পড়বে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কে। এর আগেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছিল তুরস্ক। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে করা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল লিবিয়া, কলম্বিয়া, নিকারাগুয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশ। এবার সেই পাল্লা আরো ভারী করল মিশর।

 

মিশর ইসরায়েলের সম্পর্ক বন্ধুত্বের নাকি শত্রুতার?

মিশর আর ইসরায়েলের তিক্ততা চরমে উঠেছিল সেই ১৯৪৮ সাল নাগাদ। সেই সময় ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে, প্রতিবেশী প্রচুর আরব দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে যায়। সেই সময় দাঁড়িয়ে, মিশরের সেনাবাহিনী চূড়ান্ত পরাস্ত হয়েছিল ইসরায়েলের কাছে। ১৯৫৬ সাল নাগাদ মিশরের প্রেসিডেন্ট সুয়েজ খাল বন্ধ করে দেন ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইসরায়েলের জন্য। একদিকে আরব দেশগুলো ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের কাছে পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারছিল না, আর অপরদিকে ইসরায়েল বুঝতে পেরেছিল, তার প্রতিবেশী দেশগুলো তাকেই ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। তাই সামনে অপেক্ষা করছে আর একটা যুদ্ধ। এভাবেই পরস্পরের মধ্যে বাড়ছিল অবিশ্বাস আর ঘৃণার বোঝা। যার জেরে স্নায়ুযুদ্ধের তিক্ততা পৌঁছায় চরমে। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আধুনিক বিমান ব্যবস্থা নিয়ে দাঁড়ায় মিশরের পাশে। আর ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায় ফ্রান্স, ব্রিটেন আর যুক্তরাষ্ট্র। তিক্ততা বাড়তে বাড়তে আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। সেই সময় মিশরের বিমান বাহিনী হয়তো শক্তিশালী ছিল, কিন্তু দুর্বল ছিল সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল আরবদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া। আর যেটি শুরু হয় মিশরকে দিয়ে। তারপর মাঝে কেটে গিয়েছে বেশ অনেকগুলো বছর। সম্পর্ক এসেছে শীতলতা। কিন্তু অন্দরে রয়ে গিয়েছে শত্রুতার বীজ।

 

তবে বছর ছয়েক আগে, কূটনৈতিক মহলে গুঞ্জন ওঠে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব মোকাবিলা করতে বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের নাকি ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে মিশর। শুধু তাই নয়, চরম অভিযোগ তোলা হয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ইসরায়েল যেভাবে হেলিকপ্টার, জেট বিমান দিয়ে শতাধিক হামলা চালিয়েছে, তার অধিকাংশটাই হয়েছে মিশরের সিনাই এলাকাতে। তলে তলে সেখানে সাপোর্ট ছিল তৎকালীন মিশরের প্রেসিডেন্টের। লক্ষ্য, ওই এলাকার সক্রিয় বিদ্রোহীদের দমন করা। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখা ভালো, ইসরায়েলের মধ্যে কিন্তু শান্তি চুক্তি রয়েছে সেই ১৯৭৯ সাল থেকে। তবে হ্যাঁ, একে অপরের সঙ্গে যে কোন রকম সহযোগিতা করে এমন কথা কখনো শোনা যায়নি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, বিমান হামলা তো অনেক দূরের কথা। তাই এই গুঞ্জনকে মনগড়া যুক্তি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বহু সমালোচক।

 

মিশরের ব্যবহারে হতাশ ইসরায়েল

মিশর আর ইসরায়েলের মধ্যে চরম শত্রুতা না থাকলেও, মাঝে বয়ে গিয়েছে স্নায়ুযুদ্ধের চোরা স্রোত। যেখানে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চায় না মিশরের সঙ্গে শত্রুতা হোক। তাই সম্প্রতি মিশরের এমন পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য কঠোর কূটনৈতিক বার্তা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমন পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য একটা অবিশ্বাস্য কূটনৈতিক আঘাত। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে মিশর ইসরায়েলের অবস্থানের ভিত্তি প্রস্তর। জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো সহ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় ইসরায়েলের আজ যে সংযোগ রয়েছে তার সবই ৪০ বছর আগে মিশর যা করেছিল তার ফল। অর্থাৎ এ থেকেই বোঝা যায়, মিশরের এমন বার্তায় ইসরায়েল বিন্দুমাত্র খুশি হয়নি। আর ওদিকে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, গাজায় এই মুহূর্তে যুদ্ধ বিরতিতে পৌঁছাতে একটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। এখানে এমন কিছু মধ্যপন্থী প্রস্তাব রয়েছে, যা উভয়পক্ষের উদ্দেশ্য পূরণ করে। তাই এটা অনুমোদন করা উচিত। যার মাধ্যমে একটা স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি হবে। জিম্মি-বন্দিদের অদল বদল চুক্তি হবে। কঠিন মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা সহ বাস্তুচ্যুতর ধারাবাহিকতা রোধ করা যাবে।

 

ইরানের সাথে মিশরের বন্ধুত্বের জল কতটা?

এর আগেও ২০১১ সাল নাগাদ ইসরায়েলের উপর বেশ ক্ষেপেছিল মিশরীয় মন্ত্রিসভা। সেই সময় ইসরায়েলিদের যুক্তি ছিল, বহু আততায়ী নাকি গাজা থেকে মিশরের সিনাই হয়ে ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করছে। পরোক্ষ ভাবে বলতে গেলে, মিশর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে তার সিনাই উপদ্বীপের উপর। এই অভিযোগ কায়রোর মন্ত্রিসভার পক্ষে বেশ অপমানকর ছিল। সেই সময় ইসরায়েল থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে আনে মিশর। এর আগেও মিশর একই ভাবে ১৯৯২ সালে আর ২০০০ সালে তেল আবিব থেকে প্রত্যাহার করে তাদের রাষ্ট্রদূত । আর এখানেই তো উঠছে বড় প্রশ্ন। তাহলে কি, মিশরের সঙ্গে ইরানের তলে তলে আরো গভীর হচ্ছে বন্ধুত্ব? কারণ, না হওয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। ইরান আর মিশর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দুই প্রভাবশালী রাষ্ট্র। তবে দুই দেশের মধ্যে বৈরী সম্পর্কের ইতিহাস কিন্তু বেশ লম্বা। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়।

 

তারপর দীর্ঘ ৩০ বছর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে পড়েছিল ভাটা। বছর দশেক আগে, সেই সম্পর্ক আস্তে আস্তে জোড়া লাগতে শুরু করে। যখন আন্তর্জাতিক আর অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে ছিল ইরান আর মিশরের শাসকগোষ্ঠী, তখন কৌশলগত স্বার্থে কায়রো আর তেহরান কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী হয়েছিল। গত বছর মিশরের সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইরান। যেখানে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে চীন। আসলে কি বলুন তো, ইসলামী বিপ্লবের পর ইরান আর মিশরের মধ্যেকার যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল, তার মূল কারণ মিশর ছিল সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র। তবে এখন শত্রুতা ভুলতে চলেছে দুই দেশ। তাই ইরানকে সাপোর্ট করতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেতে পারে মিশর। এমনটাও মনে করছে কিছু কিছু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version