।। প্রথম কলকাতা ।।
African Tribal Traditions: গরুর মূত্র থেকে গোবর, এদের কাছে প্রিয় খাবার। গরুর মূত্রে করে স্নান। ঘুমায় গোবরের বিছানায়। এদের গরু প্রেম দেখলে চোখ কপালে উঠবে। গরুর জন্য জীবন দিতে দুবার ভাবে না। সারা রাত জেগে বন্দুক হাতে পাহারা দেয় গরুর পাল। যার কাছে যত বেশি গরু, সে তত বেশি বিয়ে করে। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এমনটা কি করে সম্ভব? যেখানে বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিতে দৌড়াচ্ছে সেখানে অবন্তর মনে হতে পারে। কিন্তু না, বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলছি না। এমনটা আজও ঘটে চলেছে আফ্রিকায়। বলছি দক্ষিণ সুদানের মুন্ডারী উপজাতির কথা।
ছোট্ট একটা দেশ। যুদ্ধ আর দেশভাগের যন্ত্রণায় ক্ষত বিক্ষত। আধুনিকতা কি, এই দেশের বহু উপজাতি জানেইনা। মুন্ডারী জনগোষ্ঠীর কাছে গরুই সব। মা নয়, গুরুকে তারা লালন পালন করে সন্তানস্নেহে। এদের কাছে গেলে দেখতে পাবেন বিস্তীর্ণ মাঠ, গিজগিজ করছে লম্বা সিংওয়ালা পেল্লাই সাইজের গরু। আর তাদের পাহারা দিচ্ছে বন্দুক হাতে অর্ধনগ্ন কিছু মানুষ। গরুর মূত্র থেকে দুধ, গোবর সবকিছু নির্দ্বিধায় খায়। অত্যন্ত ভালোবেসে। এই মাটিতে ঝরেছে প্রচুর রক্ত। দক্ষিণ সুদানে স্বাধীনতা এলেও আধুনিকতা আসেনি। নীলনদ ঘিরেই এদের বসবাস। গরুর খাবার খুঁজতে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে দুবার ভাবে না। যাযাবর জীবনেই অভ্যস্ত।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি হচ্ছে, কি হচ্ছে না তাতে খুব একটা মাথা ঘামায় না। তাদের সব ভাবনা গবাদি পশু নিয়ে। জানলে আশ্চর্য হবেন, যখন গৃহযুদ্ধ বা দাঙ্গা হয় তখনও তাদের তর্কের সীমাবদ্ধতা ছিল সেই প্রিয় পশুদের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছিল, কারা তাদের পশুদের জন্য ভালো হবে? গোটা বিশ্ব মুন্ডারীদের চেনে রাখাল সম্প্রদায় হিসেবে। তাদের মূল সম্পদ গরু। যার কাছে যত গরু, সে তত ধনী। তবে এরা ভীষণ পরিশ্রমী।
মুন্ডারীরা যে ধরনের গরুর লালন পালন করে সেগুলো একটু অন্যরকম। এদের বলা হয় গবাদি পশুর রাজা। লম্বায় প্রায় ৮ ফুট। এক একটি দাম ৫০০ মার্কিন ডলারের কাছে। মুন্ডারীদের কাছে গরু সোনার চেয়েও দামি। গরুকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবনে যত ঝুঁকি। কারণ সম্পদের মূল্য যত বেশি হয়, মালিকও তত ঝুঁকিতে থাকে।
এরা নির্দ্বিধায় পান করে গরুর প্রস্রাব। তাই দিয়ে স্নান করে। মাথা ধোয়। বিশ্বাস, এতেই নাকি বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে কমলা রঙের। আশ্চর্য হওয়ার এখন অনেক বাকি। রান্নায় ব্যবহার করে গোবর। শুকনো গোবরের ছাইকে মনে করে জীবাণুনাশক। পরম যত্নে মালিশ করে দেয় গরুর শরীর। ছাই দিয়ে বানায় বিশেষ পাউডার। তাই মাখিয়ে দেয় গরুর গায়ে। নিজেরাও মাখে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাত্রে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত, সব কাজ জড়িয়ে গরুর সঙ্গে। মুন্ডারীদের বিবাহের ক্ষেত্রে প্রচলিত রয়েছে যৌতুক প্রথা। যার কাছে যত বেশি গবাদি পশু, সে তত বেশি বিয়ে করে। বিশ্বজুড়ে এদেরকে নিয়ে অবাকের যেন শেষ নেই। চলছে প্রচুর রিসার্চ ওয়ার্ক।
মুন্ডারীদের বিশ্বাস, গরু স্বয়ং ঈশ্বরের দান। বর্তমানে এমন পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধন আদৌ কি চোখে পড়ে? আসলে মুন্ডারী রাখালদের সঙ্গে গবাদি পশুর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, ভীষণ আত্মিক। গবাদি পশু এদের কাছে মর্যাদার প্রতীক। মুন্ডারীরা জড়িয়ে রয়েছে স্নেহের বন্ধনে। লালনের বন্ধনে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম