।। প্রথম কলকাতা ।।
২০ বছর আগে জায়গাটা ছিল এক্কেবারে জলাভূমি। অন্ধকার নামলে গ্রাস করত নিস্তব্ধতা। এখন সেখানে শুধুই ব্যস্ততা। সুস্থ হওয়ার আশায় আসছেন বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ। হাল ফিরেছে অর্থনীতির। গত দুই দশকে গজিয়ে উঠেছে বহু বেসরকারি হাসপাতাল। রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। বলছি ইএম বাইপাসের কাছে মুকুন্দপুরের কথা। সার্বিক পরিকল্পনা ও উন্নত পরিকাঠামোয় কলকাতার মুকুন্দপুর এখন পরিপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্র।
পূর্ব ভারত কিংবা বাংলাদেশের মানুষের কাছে চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতের পাশাপাশি সুনাম অর্জন করছে কলকাতার মুকুন্দপুর। তকমা পেয়েছে হাসপাতাল পাড়ার। যেখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর লজ আর হোটেল। রয়েছে যোগাযোগ ও পরিবহনের সুব্যবস্থা।। হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে হয়েছে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান। মুকুন্দপুর বাজারে এলাকায় রয়েছে প্রায় ৪৪০টার বেশি দোকান। যার মধ্যে খাবারের দোকান প্রায় ২০ থেকে ২২টা। এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চোখে পড়বে মানুষের ভিড়। মাত্র ২০ টাকার পরিবর্তে পাবেন রুটি তরকারি।
হিসাব অনুযায়ী, হাসপাতাল পাড়ায় চিকিৎসা করতে আসা ৯০ শতাংশ রুগী বাংলাদেশের। যাদের অধিকাংশ কিডনি, হার্ট, ব্রেন এবং অর্থপেডিক সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু মুকুন্দপুরের হাসপাতাল পাড়ায় বাংলাদেশের মানুষ বেশি কেন? এটা কিন্তু বড় প্রশ্ন। আসলে কলকাতা থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। দুই দেশের ভাষা, খাবার, সংস্কৃতির মধ্যে বিস্তর মিল। পার্থক্য শুধু সীমানার।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন ভারতের টাটা ক্যান্সার, অ্যাপেলো, ফর্টিস, মেডিকা, আরএন টেগোর, পিয়ারলেস হাসপাতালগুলোতে। ভারতে আসা প্রতি ৫ জন বিদেশীদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। প্রতিবছর প্রায় চার লক্ষ বাংলাদেশি ভারতে আসেন শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য। উন্নত মানের ল্যাবরেটরি, চিকিৎসা পদ্ধতি বা রোগীদের সেবা দেওয়ার সুব্যবস্থাপনা কারণেই মুকুন্দপুর হয়ে উঠেছে ভরসার জায়গা।
তাহলে কি বাংলাদেশে আধুনিক চিকিৎসা হয় না? এটা ভুল ধারণা। আগের তুলনায় বাংলাদেশের চিকিৎসা পরিকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে। ঢাকাতেও ভালো চিকিৎসা হয়। ‘প্রথম কলকাতা’র তরফ থেকে কলকাতায় আসা বাংলাদেশী কয়েকজন পর্যটককে জিজ্ঞাসা করা হলে জানান, এখন মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘আরো ভালো কিছু’র জন্য আগ্রহ বাড়ছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার। নিজের দেশেও চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। আবার অনেকের মতে, বাংলাদেশের বহু চিকিৎসক সময় ধরে রোগী দেখেন না। অথচ তার সুব্যবস্থা রয়েছে কলকাতায়। বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসার খুব একটা ঝক্কিও নেই। কলকাতা-ঢাকা বাস রুট, টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে পছন্দের খাবারের দোকান, থাকার জায়গার জন্য রয়েছে প্রচুর সহযোগী পরিষেবা। গড়িয়া-বারাসাত কিংবা বারুইপুর-বারাসাত বাস সহ প্রচুর ট্যাক্সি রয়েছে।
একটা কথা মানতেই হবে, কলকাতার মুকুন্দপুরের চিকিৎসা কেন্দ্রের অধিকাংশই বাংলাদেশের রোগীদের উপর নির্ভরশীল। শুধু তাই নয়, এখানে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক জোন বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের পর্যটক। মুকুন্দপুর এলাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে মেডিকেল ট্যুরিজমে ব্যবসা হয় শত শত কোটি টাকা, যার সিংহভাগটাই আসে বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম