Iran-Taliban relations: যুক্তরাষ্ট্রকে জব্দ করতে ঘনিষ্ঠ ইরান তালেবান ! আফগানিস্তানের তেল অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাবে তেহরান ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

Iran-Taliban relations: একসময়ের সাপে নেউলে সম্পর্ক ছিল ইরান আর তালেবানের। কিন্তু হঠাৎ আজকাল এত ঘনিষ্ঠতা কেন? আফগানিস্তানের অর্থনীতি মজবুত করতে, উন্নতি করতে যেন মরিয়া ইরান। আফগানিস্তানে তেল অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাবে তেহরান? কোনও বড় স্বার্থ নয় তো? যুক্তরাষ্ট্রকে জব্দ করতে ইরানের অন্য প্ল্যান। বিশ্বে নিজের আধিপত্য বাড়াতে আফগানিস্তান যেন ইরানের কাছে একটা বড় ঘুঁটি। যে ঘুঁটি দিয়ে ইরান বাজিমাত করবে পরাশক্তিগুলোকে। বিশেষ করে টার্গেটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই তো কখনো নরমে, কখনো গরমে, ইরান যেন সু কৌশলে হাতে রাখতে চাইছে আফগানিস্তানকে। ইসলামী বিপ্লবের পর ধীরে ধীরে আফগানিস্তান হয়ে উঠেছে ইরানের কাছে একটা পছন্দের জায়গা। তাইতো আর শত্রুতা নয়, ইরান আর আফগানিস্তান চাইছে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আখেরে লাভ বুঝে নিতে চাইছে এই দুই দেশই। শিয়া সুন্নির দ্বন্দ্ব ভুলে আদৌ একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারবে তো? ইরান কি জিনিস হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে পশ্চিমারা।

 

শত্রু থেকে বন্ধু, ইরান-আফগানিস্তানের জোট শুধুই কি স্বার্থের?

এই তো বছর দুয়েক আগেই, ইরান আর তালেবানের সম্পর্ক নিয়ে উঠেছিল হাজারো প্রশ্ন। আফগানিস্তানের তালেবান বাহিনী আর ইরানের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল তালেবান সেনা। তখন কিন্তু তালেবান আঙুল তুলেছিল ইরানের দিকে। আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সীমান্তে এই দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তখনও ইরান আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায়নি। বারংবার বলে এসেছে, ঘটনাটা শুধুমাত্র একটা ভুল বোঝাবুঝি। তারপর বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের পর দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তাহলে কি আবার এই দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটবে? যদি ইরান আর আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়, তাহলে কিন্তু বিশ্ব অবাক হবে না।

 

কারণ এই ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। একটা সময় শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সুন্নি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক সংগঠন তালেবানের মধ্যে চরম শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। যদিও যত দিন গিয়েছে তারা সেই ধর্মীয় বিরোধকে একপাশে সরিয়ে রেখে নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। যেখানে মূল কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র।। কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে এই দুই পক্ষই তাদের অভিন্ন শত্রু বলে মনে করত। ইরান আর আফগানিস্তানে খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে, নিজেদের মধ্যে শত্রুতা পুষে রেখে আখেরে লাভ কারোরই নেই। কারণ তাদের সম্পর্ক প্রায় কয়েক হাজার বছরের। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে তারা যেমন পাশাপাশি বসবাস করছে, তেমনি ভাষা আর সংস্কৃতির মধ্যেও ব্যাপক মিল রয়েছে। ইসলামী বিপ্লবের আগেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। তালেবানের উত্থান ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সংঘাত যেন অনিবার্য করে তুলেছিল।

 

আফগানিস্তানে ইরানের বড় স্বার্থ, হাতে রাখলেই দ্বিগুণ ক্ষমতা বাড়বে তেহরানের

এই আফগানিস্তানেই রয়েছে ইরানের বেশ কয়েকটা বড় স্বার্থ। তাই তো ইরান কখনোই আফগানিস্তানের জন্য মনে হিংসা পুষে রাখেনি। বরং বারংবার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ভূ রাজনৈতিক স্ট্যাটিজিটা বেশ ভালোভাবেই খেলতে জানে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ। নিজের শক্তি বাড়াতে আফগানিস্তানে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ইরান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। পাশাপাশি ভারসাম্য রক্ষা করতে চায় পাকিস্তান, পশ্চিমা আর তালেবান প্রভাবের মধ্যে। আর সব থেকে বড় কথা হল, এই আফগানিস্তানের কারণে কিন্তু ইরানকে প্রচুর শরণার্থী চাপে থাকতে হয়। যদি আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরানের ভালো সম্পর্ক থাকে, তাহলে খুব সহজেই তেহেরান শরণার্থী আর মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে যে নদীগুলো রয়েছে সেখানেও ইরান তাদের জলের ন্যায্য দাবি নিশ্চিত করতে পারবে। বড় পয়েন্টটা হল, আফগানিস্তানকে শিয়া বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠা থেকে আটকাতে পারবে। তাই হয়তো ইরান নিজের স্বার্থ আর লক্ষ্য অর্জনের জন্য নানান কৌশলে আফগানিস্তানকে হাতে রাখার চেষ্টা করেছে।

 

অনুদান, বাণিজ্যিক সুবিধার মাধ্যমে আফগানিস্তানের সুশীল সমাজে ইরান ইতিমধ্যেই পোক্ত জায়গা করে নিয়েছে। বর্তমানে ইরান আর আফগানিস্তানের সম্পর্ক দেখলে কে বলবে? ১৯৯০ দশকে এই দুই দেশের সম্পর্ক ছিল একদম সাপে নেউলে! ইরান তখন তালেবানকে নয়, বরং তালেবানের শত্রু উত্তরাঞ্চলীয় সামরিক জোটকে সমর্থন করত। প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসতেই তালেবান ইরানের উপর প্রতিশোধ নিতে ১৯৯৮ সালে প্রায় ৯ জন ইরানি কূটনীতিককে হত্যা করে। তারপর দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের এতটাই অবনতি ঘটে যে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল ইরান আর আফগানিস্তান। সেই সময় যদি পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ কূটনৈতিক তৎপরতা না দেখাত তাহলে ফলাফল হত ভয়ংকর। আফগানিস্তানের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে ২০০১ সাল নাগাদ। মার্কিন আগ্রাসনে তালিবান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আরো বড় বিপদ খাঁড়া হয় ইরানের সামনে।

 

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটি গড়তেই, ইরান বুঝতে পেরে গিয়েছিল ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের মাটি তারা হারিয়ে ফেলছে। আর তার মানেই তো, ইরানের ঘরের দরজার কাছেই রয়েছে মার্কিন উপস্থিতি। তা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না তেহেরান। সেই পরিস্থিতি বুঝে শুনে ইরান বাধ্য হয় তার আগের অবস্থানে ফিরে আসতে। অত্যন্ত সূক্ষ্ম কৌশলে দূরে সরিয়ে দেয় শিয়া সুন্নি বিরোধকে। বিশেষ করে গুরুত্ব দেয় তালেবানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে। ইরান ভালো করেই বুঝে গিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য থেকে বাঁচতে গেলে তালেবান এর হাত ধরতে হবে। আর সেই সময় তালেবানও কিন্তু ইরানের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। যার ফলাফল হল, বর্তমানে আফগানিস্তান আর ইরানের বন্ধুত্ব। এই বন্ধু জোটের ফলেই কিন্তু আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী হটতে বাধ্য হয়েছে।

 

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীকে সরাতে ইরান কি না করেনি। সার্বিকভাবে তালেবানকে সাহায্য করে গিয়েছে। আফগানিস্তানের জাতীয় ঐক্যমতের কথাও বলেছে ইরান। শুধু তাই নয়, ইরান আর আফগানিস্তান যে ভাই এবং প্রতিবেশী জাতি, তা বারংবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে তেহেরান। তালেবানকে সমর্থনের পাশাপাশি আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে অংশ নিয়েছে। সোজা কথায়, বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে তালেবান আর ইরান উভয় পক্ষই কিন্তু তাদের ইমেজ বাড়ানোর জন্য একটু বিশেষভাবে খেয়াল দিচ্ছেন। বিশ্বে তাদের কোন দৃষ্টিতে পরিমাপ করছে, সেদিকে খুব সূক্ষ্ম নজর রেখেছে দুই পক্ষই।

 

ইরানের হাতে মজবুত আফগানিস্তানের অর্থনীতি, তেল দিয়েই বাজিমাত

আবারো নতুন করে সম্প্রতি খবরে শিরোনামে চলে এসেছে আফগানিস্তান আর ইরানের খবর। আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়াতে আবারো জোরালো পদক্ষেপ নিল ইরান। ইরানের তেল শোধনকারী ভিরা এনার্জি অ্যান্ড কেমিস্ট্রি কোম্পানি আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে মুহূর্তে বলতে দিতে পারে। ভাবছেন কীভাবে? আফগানিস্তানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে শোধন করা হবে অপরিশোধিত তেল। ইতিমধ্যে ই তার রোড ম্যাপ উপস্থাপন করেছে ভিরা এনার্জি। এই একটা পদক্ষেপে, বহু গুনে বেড়ে যাবে কাবুলের তেলের মান। আফগানিস্তানের যে অবস্থা সেক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে ছোট বড় শোধনাগার স্থাপন ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। আর হয়তো এই জায়গাটা ইরান বুঝতে পেরেছিল। বিনিয়োগ হবে তুলনামূলকভাবে অল্প, অথচ ইরানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তার অনেক দ্বিগুণ ফল পাবে আফগানিস্তান। এর ফলে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে খনির দামও কমবে। একইসঙ্গে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে রপ্তানি থেকে। প্রতিবছর গড়ে কাবুল তেল উৎপাদন করে প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যারেল। আর যদি ইরানের যদি প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করে, তাহলে তা বেড়ে যেতে পারে কয়েক গুণ পর্যন্ত। সম্প্রতি ইরান চাবাহার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে ভারতের হাতে। প্রসঙ্গত এই বন্দরের সুবিধা একই ভাবে পাবে আফগানিস্তান। এই বন্দর থেকে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে ভারত প্রবেশ করতে পারবে আফগানিস্তান সহ পশ্চিম এশিয়ায়। ভারতের পাশাপাশি উপকার পাবে আফগানিস্তানও। এদিকটাও বহুদিন আগেই ভেবে দেখেছিল ইরান।

 

যুক্তরাষ্ট্রের কবল থেকে অনেকদিন আগেই তো আফগানিস্তানকে বার করে নিয়েছিল ইরান। এবার দেশটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব ঠিক কতটা গাঢ়। সেই জায়গায় পুনরায় ফাটল ধরার আর কোন সম্ভাবনাই নেই। আফগানিস্তানের উন্নতি হলে পক্ষান্তরে যে ইরানই নিরাপদে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। যুক্তরাষ্ট্রের ঘেরাটোপ ইরান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। আর তাইতো এত বড় পরিকল্পনা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version