ভয়ানক চক্রব্যূহে আটকে গেল চীন! ইজরায়েল যুদ্ধের স্ট্যান্ড পয়েন্টেই ঘুণ ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে চীন। আগে নাকি পরে, যেদিকেই যাক, ইজরায়েল যুদ্ধে বড় বিপদে জিং পিং? একবার প্যালেস্টাইন, একবার ইজরায়েল। কেন ঘনঘন দল বদলাচ্ছে বেজিং? আসল রহস্যটা জানেন? কীভাবে নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেল চীন? একেই বলে উভয়সঙ্কট। চাপের মুখে পড়ে ডিগবাজি খেল চীন। হামাস ইসরায়েল যুদ্ধে প্যালেস্টাইনের হাত ছেড়ে ইজরায়েলের হয়ে কথা বলা শুরু করলো বেজিং। কিন্তু কেন? এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। বুঝতে হবে, বিরাট স্বার্থ আছে বেইজিংয়ের। ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে পশ্চিম এশিয়া বরাবরই আন্তর্জাতিক মহলের আলোচনার কেন্দ্রে থাকে। যে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে চীনের ঢুকে পড়ার চেষ্টা সাম্প্রতিক অতীতে গোটা বিশ্বের নিশ্চয়ই নজর এড়ায়নি।

একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে বেইজিংকে সক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছে। চীন বরাবরই পশ্চিম এশিয়ায় শান্তির কথা বলে এসেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের মাধ্যমে শান্তিস্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু কতটা সফল হয়েছে? উত্তর নেই। তাহলে কি নিজেদের জায়গা পোক্ত করতেই ঘনঘন দলবদল বেইজিংয়ের? পশ্চিম এশিয়ায় চীনের প্রাথমিক লক্ষ্য, আরবীয় দেশগুলির পাশাপাশি ইজ়রায়েলের স্বার্থও লালন করা। এই দুইয়ের মধ্যে ব্যালেন্স করতে পারলেই চীনের স্বার্থও সুরক্ষিত হবে, টিকে যাবে। নাহলে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের কী দশা হয়েছে সেটা মনে করা দরকার। সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। ওই যুদ্ধে চীন রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছিল। তাতেই বিপুল অর্থক্ষয়ের আঁচ লেগেছে চিনা অর্থনীতিতেও। তাই হামাস ইসরাইল যুদ্ধে ব্যালেন্স করার চেষ্টা চালাচ্ছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিং পিং?

পশ্চিম এশিয়ায় শি এর ড্রিম প্রজেক্ট বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী চীন। ফলে আরব দেশগুলির বিরাগভাজন হওয়া জিনপিংয়ের কাম্য নয়। ইতিমধ্যে পশ্চিম এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই অর্থনৈতিক ডিল ফাইনাল করে ফেলেছে চীন। অলরেডি বিশাল ইনভেস্ট করে ফেলেছে। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ কোটি কোটি ডলার। গত এক দশক ধরে ইরানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পার্টনারও এই চীন। আগামী ২৫ বছরে ইরানে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্ল্যানিং রয়েছে তাদের। তাহলে, সেই হিসেবে ইরানের সঙ্গে নিজেদের ঘনিষ্ঠতাকে ব্যবহার করে যুদ্ধ থামাতে চীন চাইলে হস্তক্ষেপ করতেই পারত। কিন্তু যুদ্ধে হামাসের পক্ষ নিয়েছে ইরান। তাই ইরানের পক্ষ নিলে ইজ়রায়েলের মন জুগিয়ে চলা আবার সম্ভব নয় চীনের পক্ষে। আর ইসরাইলকেও হাতছাড়া করতে নারাজ চীন অন্তত কেউ কেউ তেমনটাই মনে করছেন। তারজন্যেই কী প্যালেস্টাইনের হাত ছেড়ে ইসরাইলকে সাপোর্ট করতে শুরু করল বেইজিং? আমেরিকার বন্ধুর হয়ে সুর চড়াতে শুরু করল চীন? কেন পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে এত নড়বড়ে অবস্থান চীনের?

কেউ কেউ মনে করাচ্ছেন অতীতের কথা। ষাটের দশকে চীন প্যালেস্টাইনকে সমর্থন করত এবং সেখানকার যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ করত। পরে নব্বইয়ের দশকে ইজ়রায়েলের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার পর থেকে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিবাদে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই নিয়েছিল চীন। কোনও বিবাদে হস্তক্ষেপ করলেও তা চলত শান্তিরক্ষার আবরণের আড়ালে। তাহলে কি এবারেও শান্তি রক্ষার দোহাই দিয়ে দুনৌকায় পা দিয়ে চলার স্ট্যাটেজি নিয়েছে চীন? তাতে ফল কতটা হবে, আদৌ পশ্চিম এশিয়ার উত্তাপ কমবে কি না, সেটা বলা কঠিন। কিন্তু এতে চীনের যে বিশেষ প্রফিট হবে না সেটা আঁচ করতে পারছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, তত চিনের সমস্যা বাড়বে। কারণ ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে যে বিপুল পরিমাণ ইনভেস্ট আছে বেজিংয়ের, তা অলরেডি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে যুদ্ধের কারণে।

যদিও এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি সমালোচনার মুখে পড়েই আগের অবস্থান থেকে সরে আসার এই পদক্ষেপ চীনের। আগামী দিনে চিন কোন স্ট্যান্ড পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকে আবারো স্ট্রাটেজি বদলায় কিনা এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা। কারণ এগোলেও বিপদ, পিছোলেও বিপদ। ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধে উভয়সঙ্কটে পড়ে গেছে চীন। এটাই ফ্যাক্ট।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version