America -Houthi Conflict: চীন-রাশিয়ার ফাঁদ, ঘরে-বাইরে চাপে যুক্তরাষ্ট্র! ইরানের বিরুদ্ধে গিয়ে ভুল করল?

।। প্রথম কলকাতা ।।

America -Houthi Conflict: হুথিদের হাতে পরাজিত মার্কিন ড্রোন। ইউরোপে চীন রাশিয়ার ফাঁদে আটকা পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। ঘরে বাইরে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন জো বাইডেন। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। এবার কী হবে? কোন দিকটা সামলাবে ওয়াশিংটন? ইউক্রেনে বাড়ছে রাশিয়ার চাপ, ওদিকে ইরানের পাশে সশস্ত্র গোষ্ঠী। একের পর এক সমস্যায় জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল- হামাস যুদ্ধের মোড় ঘুরছে কোন দিকে? গাজায় হামলা থামবে কবে? নড়ে যেতে পারে জো বাইডেনের গদি। কারণগুলো জানলে হতবাক হয়ে যাবেন। পশ্চিমি দুনিয়ায় দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। অ্যাক্টিভ পুতিন আর শি জিনপিংয়ের গুপ্তচর।

একটু একটু করে ফাঁদে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। গোটা ইউরোপ যেন কব্জা করে নিচ্ছে চীন আর রাশিয়া। তাহলে কি জো বাইডেনের আধিপত্য এবার শেষ? ভাবছেন কেন বলছি এমনটা? আসলে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো একবার শুধু দেখুন। একটার সাথে একটা জুড়ে দিলে উত্তরটা পেয়ে যাবেন। প্রথম থেকেই তো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে, ইরান আর ইসরায়েলের সংঘাতেও বার বার উঠে আসছে সেই যুক্তরাষ্ট্রের নাম। শুধু তাই নয়, হামাস ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্ষেত্রেও একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম চলে আসছে। বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক এবং উন্নত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম আসাটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু এসব সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে। অন্যান্য দেশ কিংবা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিতে শিখে গিয়েছে, আর দিচ্ছেও। ঘরে আর বাইরে ফেঁসে যাচ্ছে দেশটা। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরের আন্দোলন বলে দিচ্ছে, সামনে নির্বাচনে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারেন জো বাইডেনকে। গাজা ইস্যু শুধুমাত্র আর মধ্যপ্রাচ্যেই আটকে নেই, ব্যাপারটা হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক ইস্যু। ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্টটাই যেন বদলে যাচ্ছে।

চীন রাশিয়া তো যুক্তরাষ্ট্রের চেনা প্রতিদ্বন্দ্বী। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরব রাষ্ট্রগুলো। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট ক্রমশ পড়ছে হুমকির মুখে। চলমান বৈশ্বিক একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে বেজিং আর মস্কো। পশ্চিমা জোটকে কোণঠাসা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আরো জোরদার করেছে ইউরোপে গুপ্তচর বৃত্তি। যা ব্যাপক টেনশনে ফেলে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, আগামী ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনের ক্ষেত্রে চীন আর রাশিয়ার গুপ্তচরদের প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে। খোলা পাতার মতো ফাঁস হয়ে যেতে পারে ইউরোপের সমস্ত সিক্রেট। শি জিনপিং আর ভ্লাদিমির পুতিন জেনে যেতে পারেন ইউরোপের রাজনীতির পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য। যা ইউরোপ তথা গোটা পশ্চিমা বিশ্বকে চাপে ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শুধু চীন আর রাশিয়াই বা কেন, সঙ্গে জুড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশের গুপ্ত গোয়েন্দারা। যারা ইউরোপীয় সংসদের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য নাকি টাকা নিয়েছে কাতার, মরক্কো এবং মৌরিতানিয়ার কাছ থেকে। বেলজিয়ামের দাবি, রাশিয়া নাকি ইতিমধ্যেই প্রোপাগান্ডা প্রচার করতে ইউরোপীয় সাংসদদের অর্থ দিয়েছে। ওদিকে আবার জার্মানি আর যুক্তরাজ্যে চীনা গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুড়ে চলছে যেন রাশিয়ার গুপ্তচর বৃত্তির খেলা। এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা। সুইডিশ ডিফেন্স রিসার্চ এজেন্সির তথ্য বলছে, ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যতজন ইউরোপীয় নাগরিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে, তাদের বেশিরভাগের সঙ্গে নাকি মস্কোর যোগাযোগ রয়েছে। বুঝতে পারছেন, এমন পরিস্থিতিতে যদি রাশিয়ার কার্যক্রমের লাগাম না টানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকে, তাহলে কিন্তু পশ্চিমা দুনিয়ার সামনে বড়সড় বিপদ আসতে পারে। তবে হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রেরও গোয়েন্দা ফাঁদ দুর্বল নয়। সারা পৃথিবীতে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। ইউরোপ জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোর প্রভাব যথেষ্ট।

এই তো গেল একটা দিক। অপরদিকে আবার মধ্যপ্রাচ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যেন হামলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উপর। লোহিত সাগরের হুথিদের দৌরাত্ম্য কেমন, তা তো শুনেছেনই। সেই হুথিরা এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩২৯ কোটি টাকার ড্রোন ভূপতিত করল। দেখুন, টাকার অঙ্কে ব্যাপারটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সামান্য একটা ব্যাপার। কিন্তু গাজা যুদ্ধ শুরুর পর হুথিদের হাতে ভূপতিত হওয়া এটি তৃতীয় মার্কিন ড্রোন। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েল আক্রমণ করলে ইসরায়েলও তার পাল্টা জবাব দিচ্ছে। গাজা তোলপাড় করে ফেলছে হামাস নির্মূল করতে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন গাজার কিছু সাধারণ মানুষ। যা মেনে নিতে পারছে না বহু রাষ্ট্র। আর এই হামাসের বন্ধু হল ইয়েমেন লেবাননের বহু সশস্ত্র গোষ্ঠী। যেহেতু ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র, তাই যুক্তরাষ্ট্রের উপর ক্ষেপেছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। হুথিরা তো জানিয়েই দিয়েছে, যতদিন না পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামবে ততদিন পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরে অভিযান চালিয়ে যাবে। এই তো কয়েকদিন আগেই, তারা একটা তেলের ট্যাঙ্কারে হামলা করেছে। হামলার যার জেরে বড় রিস্কে রয়েছে লোহিত সাগর। গোটা বিশ্ব বাণিজ্যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। গত বছরের নভেম্বরে প্রথম মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপতিত করে হুথি গোষ্ঠী। তারপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একই ঘটনা ঘটে। আবার সেই ঘটনার রিপিট হল। গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে লোহিত সাগর আর আশেপাশের এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজে এভাবেই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। আর হুথিদের জব্দ করতে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য। এই জায়গাটাতেও এখন যুক্তরাষ্ট্র বেশ চাপে রয়েছে। অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যালেন্সের পাশাপাশি নজর রাখতে হচ্ছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দিকেও।

এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যদি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কেন চাপে আছে? তাহলে তার অন্যতম কারণ রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ। প্রায় তিন বছর হতে চলল, যুদ্ধ তো থামছেই না বরং রাশিয়া আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ইউক্রেন আক্রমণ করছে। ইউক্রেনের মত ছোট্ট একটা দেশ, রাশিয়ার সামনের টিকে আছে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাপোর্ট পেয়ে। ওয়াশিংটন খুব ভালোভাবেই জানে, এই যুদ্ধ রাশিয়া ভার্সেস ইউক্রেন নয়, বরং রাশিয়া ভার্সেস যুক্তরাষ্ট্র। হাল ছেড়ে দিলে একটা প্রেস্টিজের ব্যাপার রয়েছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্র হাল ছেড়ে দিয়েছে, এটা বলা ভুল হবে। অস্ত্র আর গোলা বারুদের সংকটে যুদ্ধে প্রতিনিয়ত যখন ইউক্রেন দুর্বল হচ্ছে, অপরদিকে সৈন্য আর সামরিক দিক থেকে কিয়েভের থেকে আরো শক্তিশালী হচ্ছে রুশ বাহিনী। আর এটা ভালোভাবে বুঝতে পেরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই তো বেশি অর্থ এবং অস্ত্রের সহায়তা দিচ্ছে। প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলারের একটা বিল অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন আইনপ্রণেতারা অর্থাৎ খুব দ্রুত ওয়াশিংটন নতুন করে অস্ত্র পাঠাবে কিয়েভে। আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে চিন্তার বিষয় হল, ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল সাইরশকি বলে দিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি কিন্তু অবনতির দিকে। বহু জায়গা থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এটাও কিন্তু একটা বড় চাপের কারণ।

আর ওদিকেই তো ইরানের ইসরায়েলের যুদ্ধ রয়েইছে। এই তো কয়েকদিন আগে পর্যন্ত, সমস্ত খবরের বিষয়বস্তু ছিল ইরান আর ইসরায়েলের মধ্যে হওয়ার নজির বিহীন ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন হামলা। খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল দুই দেশের সম্পর্ক। এই প্রথম দুই দেশ সরাসরি একে অপরের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। যেখানে সরাসরি ইসরায়েলকে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছে জো বাইডেন। তার মানে তিনি সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে গেলেন। মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এখন পরিণত হয়েছে শত্রু দেশ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কাই করছে না ইরান রাশিয়া চীনসহ একাধিক দেশ। ইরানের হামলা যেন প্রমাণ করে দিল, ইসরায়েল নিজের প্রতিরক্ষার জন্য ঠিক তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর উপর কতটা নির্ভরশীল। ১৯৯১ সালে সাদ্দাম হোসেন ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু করে স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, তারপর ইরানের হামলাই হল ইসরায়েলে হওয়া বহিঃশত্রুর সবচেয়ে বড় হামলা। এমত পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় উপসাগরীয় অঞ্চলের বহু দেশকে এগিয়ে আসতে রাজি করাতে পেরেছে মার্কিন সরকার। যে তালিকায় ছিল সৌদি আরব আর জর্ডান। কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ফ্রান্স জর্ডান আর সৌদি আরবের সম্মিলিত সামরিক বাহিনী বুঝিয়ে দিয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষায় তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এটা প্রযুক্তিগত একটা সফলতা, যদি কোন গোয়েন্দাদের জন্য কোন ক্লু না রেখেই, দ্বিতীয় দফায় ইরান যদি লেবানন বা ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ইসরায়েলে বড় হামলার বড় নির্দেশ দিয়ে দেয়? তখন নতুন করে একটা বড় যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।

https://youtu.be/FRO5rr9bekg?si=AORKPkkUK4e-GANn

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরে চাপে ফেলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আন্দোলন। গাজায় ইসরায়েল হামলা বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক হারে ধরপাকড় চালাচ্ছে। গ্রেফতার হয়েছে বহু পড়ুয়া। শোনা যাচ্ছে, আন্দোলনের জেরে একটি অনুষ্ঠানের পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ঘরে-বাইরে দুই দিক থেকেই চাপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে হ্যাঁ যুক্তরাষ্ট্র বলে কথা। দেশটার হাতে অপার ক্ষমতা। সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি, গোয়েন্দা বিভাগ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট শক্তিশালী। সম্প্রতি সময় ঘটে যাওয়া এতগুলো বিষয়কে এবার কীভাবে সামলাবে ওয়াশিংটন, এটাই দেখার।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version