Donald Lu visit to Dhaka: ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরে স্বপ্ন দেখছে বিএনপি! বাংলাদেশে পাশা বদলে যাবে

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Donald Lu visit to Dhaka: ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে আসতেই কি নতুন করে স্বপ্ন দেখছে বিএনপি? আওয়ামী লীগ সরকার পড়ে যাবে না তো? কতটা আশঙ্কা রয়েছে? হঠাৎ কী করতে বাংলাদেশে গেলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু? বাংলাদেশের মাটিতেই যুক্তরাষ্ট্রের বড় ছক। চীনের প্রভাব রুখতে বাইডেনের বড় ঘুঁটি এখন ঢাকা। কিন্তু ডোনাল্ড লু ঢাকায় যেতেই আবার কেন এত সমালোচনা? ষড়যন্ত্রের গন্ধ। পাল্টাপাল্টি কথার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে প্রথম সারির রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। লু’য়ের একটা চিঠিকে নিয়ে একসময় কাল ঘাম ছুটেছিল আওয়ামী লীগের। ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখেছিল বিএনপি। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়, যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের ঠোকাঠুকি কে না জানে। সেই সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছিল, এই বুঝি নিষেধাজ্ঞা এল। সেই ডোনাল্ড লু যখন বাংলাদেশে ফের এলেন, তখন প্রশ্ন একটাই, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা তো অবশ্যই হবে, পাশাপাশি তিনি সম্পর্কের মেরামতিটাও কি করে ফেলতে চাইছেন? লু’য়ের বাংলদেশ সফর নিয়ে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র মধ্যে এত বিতর্কই বা কেন আসছে? নতুন করে আবার বাংলদেশের রাজনীতিতে ঝড় উঠবে না তো?

 

দুইদিনের সফরে বাংলাদেশ গিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ জুড়ে লু’কে নিয়ে যে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। এটা কিন্তু হত না, যদি না নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামীলীগের বাক-বিতণ্ডা হত। যদিও সেটা কূটনৈতিকভাবে হয়েছিল। কিন্তু গোটা বিশ্বের সামনে ছুঁড়ে দিয়েছিল একটাই প্রশ্ন, তাহলে কি ভাঙনের মুখে যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশের সম্পর্ক? তারপর নির্বাচন মিটলে, সেই উত্তেজনায় লেগেছে শীতল হাওয়া। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে যেভাবে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল, তা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্র স্পেশাল চিঠি পাঠিয়েছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর জাতীয় পার্টিকে। তখন সেই চিঠিট লিখেছিলেন ডোনাল্ড লু। চিঠিতে ছিল মূলত তিনটি বিষয়। প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র অবাধ সুষ্ঠু আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। দ্বিতীয়ত শর্তহীন ভাবে বিএনপি আর আওয়ামী লীগকে সংলাপে বসার আহ্বান জানায়। আর তৃতীয়ত,সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে, সেটাই আরো একবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই তখন প্রশ্ন উঠেছিল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভিসা নীতি মনে করালো, নাকি সাবধান করল? সেই সময় কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট কম ছিল না। যদিও লু এর সেই চিঠি কোন কাজেই লাগেনি। কারণ আওয়ামী লীগ আর বিএনপি কোন ধরনের সংলাপে বসেনি। নির্বাচন হয়েছে প্রায় একতরফাভাবে। পুনরায় আবার ক্ষমতায় এসেছেন শেখ হাসিনা।

 

ডোনাল্ড লুয়ের আগমনে চাঙ্গা বিএনপি! সত্যি কতটা?

যদিও সম্প্রতি ঢাকায় যে ডোনাল্ড লু গিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের সাথে নাকি তার বৈঠকের কোনো কর্মসূচি নেই। যদিও তার সফরকে কেন্দ্র করে পিছু ছাড়ছে না রাজনৈতিক আলোচনা। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। শুধু তাই নয়, একে অপরকে ঠুকে কথা বলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায়, লু আসছে তাই আরো চাঙ্গা হয়ে উঠছে বিএনপি নেতারা। আবার ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাচ্ছে। তারই পাল্টা জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ডোনাল্ড লু যে বাংলাদেশে আসছে তার আগমন নিয়ে বিএনপি’র কেউ ইন্টারেস্টেড নয়। কারণ বিএনপি ভরসা করে জনগণের উপর। এই যে বিএনপি জোর গলায় বলছে, লুয়ের সফর নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই, সেটা কিন্তু আবার আওয়ামী লীগের কাছে কিছুটা ধোঁয়াশার মতো।

 

বিবিসি রিপোর্ট বলছে, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মকর্তার দাবি বিএনপির অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হয়, বিদেশি কোন শক্তিধর রাষ্ট্র হয়তো এসে বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেবে। আর ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে বিএনপিকে। এর ভিতরে ষড়যন্ত্র থাকলেও থাকতে পারে। যেটা এখনো দৃশ্যমান নয়। অপরদিকে বিএনপি’র দাবি, এর আগেও বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন লু। তখনও বিএনপির সঙ্গে কোনো মিটিং করেননি। এবারেও বিএনপির সাথে কোন অ্যাজেন্ডা রাখেননি। যদি অ্যাজেন্ডা রাখত, তাহলে আওয়ামী লীগ এত বিচলিত হতো না। কারণ ষড়যন্ত্র কোনদিনও প্রকাশ্যে হয় না। যদিও এই সফরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোন বৈঠক নেই। উপরন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং ভিসা নীতি তুলে নেওয়ার বিষয়ে সরকার লু এর সঙ্গে আলোচনা করবে। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের এই দুই রাজনৈতিক দলের কেউই লু এর সফরকে খাটো করে দেখছে না। কারণ যতই নির্বাচন মিটে যাক না কেন, নানা দিক থেকে বিবেচনায় লু এর সফরের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কূটনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচনের সময় দুই দেশের সম্পর্ক তিক্ততায় পৌঁছেছিল, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে দুই দেশ। সেক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ পেতে পারে রাজনৈতিক বিষয়গুলো।

 

ডোনাল্ড লু রাজনীতিতে এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দায়িত্ব পালন করছেন ডোনাল্ড লু। তার ঢাকা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার মূলে রয়েছে কাজ করছে একটা বিশাল বড় কারণ। এই লু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন যখন পাকিস্তানে ইমরান খানের পতন ঘটে। ২০২২ সাল নাগাদ লু ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজীদকে সতর্ক করেছিলেন,ইমরান খান ক্ষমতা হারাতে পারে। লুয়ের সেই অঙ্কটা মিলে গিয়েছিল একদম অক্ষরে অক্ষরে। তবে সেই সময় এই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কারন আসাদ মজীদ ইসলামাবাদে ইমরান খানের সরকারকে লু এর কথাটা জানালে, পরবর্তীকালে ইমরান খান দাবি করেছিলেন, ২০২২ সালে তার সরকারের পতন হয়েছে, পিছনে নাকি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাত। শুধু তাই নয়, এই বিষয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে রয়েছে একটি মামলাও। তবে ডোনাল্ড লু ইমরান খানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে যে অভিযোগ ওঠে, তা অস্বীকার করেছেন। এসব ডামাডোলের মাঝে, যখন তিনি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখনো তিনি একইভাবে চর্চায় চলে আসেন। সমালোচক মহলের কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন, হয়তো বা, পাকিস্তানের মতো একই পরিণতি হতে পারে বাংলাদেশের। এখানেও আওয়ামী লীগের সরকারের পতন ঘটতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে এমনটা হয়নি।

 

চীনকে রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ঘুঁটি বাংলদেশ

আপাতত শোনা যাচ্ছে, ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা করতে ঢাকা গিয়েছেন। যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি। শেখ হাসিনা যখন পুনরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পান, তখন এক চিঠিতে বাইডেন পরিষ্কার বার্তার মাধ্যমে বলেছিলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি অবাধ ও মুক্ত ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঢাকার সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়তে ওয়াশিংটন তার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র আরও জানায়, আঞ্চলিক আর বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি বৈশ্বিক ইস্যু গুলো নিয়েও বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চায়। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে, কাজ করছে একটা বড় ভূ রাজনৈতিক কৌশল। কূটনৈতিক মহলের মতে, ভূরাজনৈতিক খেলায় যে কোনোভাবে চীনকে ঠেকাতে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। কারণ বিশ্ব জুড়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব হুমকির মুখে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে। বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে, বহু ছোট ছোট দেশেও যুক্তরাষ্ট্রকে পাত্তা দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মাধ্যমে সমুদ্রে চীনের আধিপত্যের রাশ না টানতে পারলে, বিপদে পড়তে পারে ওয়াশিংটন। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে জো বাইডেনের দেশ। আপাতত বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের যে চিত্রটা ছিল, এখন তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুই দেশই সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। একটা সুষ্ঠু পররাষ্ট্রনীতির খাতিরে পুরনো তিক্ততার কথা মনে রাখতে চাইছে না দুই রাষ্ট্রই।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version