।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh Earthquake: ওয়ার্ন করা হয়েছিল। রিস্কে ছিলই বাংলাদেশ, অবশেষে সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়ে গেলো। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো ঢাকা। গত কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকায় একের পর এক ভূমিকম্প। ভাবছেন টা কি, এবার বিপদ কাটলো? ভুল করছেন, বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন তাতে ঘুম উড়ে যাবে। কোন সম্ভাবনার ভয়ে কাঁটা বাংলাদেশ? কেন গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে? জানেন, বাঁচতে হলে কি করতে হবে? কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব? আর কোন কোন দেশের উপর ভূমিকম্পের খাঁড়া ঝুলছে?
ঢাকা শহর ও তার আশেপাশের এলাকা যে বড় ধরণের ভূমিকম্পের রিস্কে রয়েছে তা জানিয়ে ভূতত্ববিদরা কিন্তু আগেই ওয়ার্ন করেছিলেন, শুক্রবার ঢাকা ও তার আশপাশের অঞ্চলে যে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, তার মাত্রা ছিল ৪.৩। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে আর এখানেই তো চিন্তা। তবে, এবার বিশেষ কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু, বিপদ যে কেটে গেছে সেটা বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী,
ঢাকায় ৭ মাত্রা বা তার চেয়ে বড় ধরণের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেরকম ভূমিকম্প হলে বিরাট বিপদ হবে। ঢাকা শহরের ৭২,০০০ ভবন ভেঙে পড়বে, ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ। প্রাণহানি হবে অন্তত ৩ লাখ মানুষের। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুরের ঘনবসতিপূর্ন এলাকাগুলোতে আরো লাখ খানেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন? ৮ মাত্রা বা তার অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার চান্স কতটা?
উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং দক্ষিণে বার্মা সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশ অবস্থান করছে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে দীর্ঘসময় ধরে কোনো ভূমিকম্পের শক্তি বের হয়নি। ফলে সেখানে ৪০০ থেকে হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নীচে তলিয়ে যাচ্ছে। বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে, তাতে ৮ মাত্রার চেয়ে বেশি ভূমিকম্পের তীব্রতা হতে পারে। বিষয়টাকে একেবারেই হালকা ভাবে নেওয়ার মতো যে নয় সেটা পরিষ্কার। এটা একবারে হতে পারে, আবার কয়েকবারেও হতে পারে। তবে যে কোনো সময় এই বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু কবে বা কখন হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে জানা যাচ্ছে না।
এটা জানলে আরও অবাক হবেন, বাংলাদেশে বড় ধরণের ভূমিকম্প হলে এখানকার ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি তুরস্কের মত বা তার চেয়ে বেশি হতে পারে। কিন্তু কেন? ভূতত্ত্ববিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা কি মনে করছেন? তাঁদের মতে এই ক্ষয়ক্ষতির নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হবে। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা ভবন তুরস্কের মতোই বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে। ভবন তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা, ভবনের নকশা অনুমোদন, অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নেওয়ার মত নানান অনিয়মের তথ্য উঠে আসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ২০২০ সালের এক গবেষণায়। না এখানে কিন্তু শেষ নয়।
যে কারণগুলো বললাম তার পাশাপাশি ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরিতে উদাসীনতা, ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা ও প্রস্তুতির অভাবের কারণেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এমনকি, অপরিকল্পিতভাবে তৈরি শহরে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও সেবার কাজ পরিচালনা করা মোটেই সহজ হবে না। তাতে আরো অনেক মানুষের জীবনের রিস্ক বাড়বে। আর আগে থেকে যদি পরিকল্পনা না থাকে তাহলে দেখতেই হচ্ছে না। ওই সময় জরুরি চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, জল সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো কাজগুলো সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। মানবিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে।
যদি বলা হয় আগে থেকে কি করণীয়? না, ভূমিকম্প থামানোর কোন উপায় না থাকলেও এই দুর্ঘটনার আগে পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেওয়া সহজ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা তার জন্য, ঝূঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সেগুলোকে ভূমিকম্প সহনশীল করার কাজ করতে হবে। ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে মহড়া ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সব এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের আগে থেকে প্রস্তুত রাখা যেতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কারণ, নিয়মিত মহড়া হলে দুর্যোগের পর মানুষের মধ্যে একটা ধারণা থাকে যে কী করতে হবে। ফলে দুর্যোগ পরবর্তী সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হয়। এছাড়াও ভূমিকম্প হলে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জরুরি খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করা, ভূমিকম্প বিষয়ক গেমের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব বলে মনে করেন ভূতত্ত্ববিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদরা। তবে, ঢাকায় এবার ভূমিকম্প হওয়ার পর, খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসছে যে প্রসঙ্গটা।
ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পের মত ঢাকার আশেপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যেই হতে দেখা গেছে।২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময় অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প হতে দেখা গেছে তথ্য বলছে, ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ এই অবস্থানেই দোহার থেকে ১৪.২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল।
ঢাকার কাছে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত ২০ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। গত ১৫ বছরে নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে অন্তত ৪ বার ভূমিকম্প হয়েছে। তবে গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে ঢাকার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পকে। কিন্তু, এরপর অন্তত আর প্রকৃতির রোষানলে না পড়ুক কোনো দেশ। কারণ শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, নেপাল, তুরস্ক, চীন, ইরান, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা সহ চিলি মোটেই সেফ জোনে নেই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম