Bangladesh-Myanmar Army: বাংলাদেশ নাকি মায়ানমার, সামরিক শক্তিতে এগিয়ে কে?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Bangladesh-Myanmar Army: বাংলাদেশের সীমান্তে মায়ানমার সেনা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে! বাংলাদেশ না মায়ানমার যুদ্ধ বাঁধলে কে জিতবে? জানেন কি বাংলাদেশ-মায়ানমারের যুদ্ধ লাগতে লাগতেও লাগেনি। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু গায়ে এসে পড়লে ছেড়ে দেব না। আমরা সব সময় তৈরি আছি। সত্যিই কতটা তৈরি বাংলাদেশ? মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ বাংলাদেশের উদ্বেগ যেমন বাড়াচ্ছে, রোহিঙ্গা নিয়ে তেমনই। কখন বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ লেগে যায় এমনও একটা আশঙ্কা। মনে বয়ে বেড়াচ্ছেন সীমান্তের মানুষেরা কারণ তারা যতটা উদ্বেগ ফিল করছে, ততটা খুব বাংলাদেশের বাকী অংশের মানুষ হয়ত বুঝতে পারছেন না। মায়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে যখন তখন গুলি-বোমার আওয়াজ শোনা। যখন তখন সেখান থেকে রীতিমত বাংলাদেশে ঢুকে যাচ্ছে জান্তা সেনার অফিসাররা। এখন প্রশ্ন হল সত্যিই যদি এই যুদ্ধ বাধে তাহলে বাংলাদেশের কতটা ক্ষমতা রয়েছে মায়ানমারের সঙ্গে লড়াই করার? সত্যি যদি যুদ্ধ বাঁধে চীন কার পক্ষে নেবে? কারণ শুধু ক্ষমতা থাকলেই যে কেউ যুদ্ধে জিতে যাবে। তেমনটাও সবসময় হয় না সবথেকে বড় উদাহরণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

বিশ্বের কোন দেশের সামরিক শক্তি কতটুকু? সে বিষয়ে প্রতিবছর একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। ২০২৪ সালেও প্রতিষ্ঠানটি ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এখানেই পরিস্কার হয়ে যায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সামরিক শক্তি ঠিক কতটা? ওই রিপোর্টেই বলা হচ্ছে , জনসংখ্যার দিক থেকে মিয়ানমারের তুলনায় বেশ এগিয়ে থাকলেও সামরিক দিক থেকে তালিকায় সামান্য পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ সেটা কেরকম?

প্রথমেই কথা বলব বাংলাদেশের সৈন্যসংখ্যা নিয়ে। সৈন্যসংখ্যায় এগিয়ে কে? গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের সৈন্য সংখ্যা বেশ বেশি রয়েছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে। নিয়মিত সৈন্যের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার। সেখানে মিয়ানমারের বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্য রয়েছে প্রায় ১.৫ লাখের মতো। এছাড়া আধা-সামরিক বাহিনীতেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬৮ লাখের বিশাল এক আধা-সামরিক বাহিনী রয়েছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারের আধা-সামরিক বাহিনীতে সদস্য রয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার, তবে মিয়ানমারের ২০ হাজার রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে। বাংলাদেশের এ ধরনের কোনো ফোর্স নেই।

প্রতিরক্ষা বাজেট কার কত? মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণেরও বেশি
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে বছরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় হয় ৬৯৯ কোটি মার্কিন ডলার
অন্যদিকে, মিয়ানমারের বাৎসরিক প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার। দিনটি ছিল ২০০৮ সালের নভেম্বরের ১ তারিখ শনিবার। বাংলাদেশের জলসীমায় মিয়ানমারের জাহাজের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ করতে অবস্থান নিয়েছিল বাংলাদেশের মোট ৪ টি জাহাজ। এই ঘটনাটি পর পরই বাংলাদেশের নৌবাহিনী বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায় এবং কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।
ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে দুই দফায় তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়। কিন্তু তখন যা সম্ভব হয়েছে এখনও কি এতটাই শান্তভাবে সম্ভব হবে?

বাংলাদেশ মায়ানমার কার যুদ্ধট্যাঙ্ক কতটা ভয়ঙ্কর? এখান থেকেই বোধহয় বাংলাদেশের পতন শুরু
বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক ট্যাঙ্ক রয়েছে মিয়ানমারের। দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে বর্তমানে ৭০৫টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রতিবেদন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে ৩২০টি ট্যাঙ্ক। তবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংক উদ্ধার করে এনে মেরামত করে আবার তা যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর জন্য জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আর্মার্ড রিকভারি ভেহিক্যাল ফর ট্যাঙ্ক।

কথা বলব যুদ্ধবিমান নিয়ে। যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ এগিয়ে না মায়ানমার? প্রতিরক্ষা বাজেটে এগিয়ে থাকলেও মিয়ানমারের তুলনায় বাংলাদেশে কম যুদ্ধবিমান রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে ২১৬টি বিমান রয়েছে যেখানে যুদ্ধ বিমান রয়েছে মাত্র ৪৪টি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর কাছে মোট বিমান রয়েছে ২৯৩টি। যার এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫৮টি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে বিশেষ যুদ্ধবিমান রয়েছে চারটি। অন্যদিকে, মিয়ানমারের কাছে এ ধরনের যুদ্ধবিমান রয়েছে পাঁচটি। এছাড়া মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর কাছে ৮০টি হেলিকপ্টার রয়েছে সেখানে বাংলাদেশের কাছে হেলিকপ্টার রয়েছে ৭৩টি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার না থাকলেও মিয়ানমারের রয়েছে ৯টি। তবে বিমান বাহিনীর জন্য যুক্তরাজ্য থেকে আনা হয়েছে এমকে৫ এয়ারক্রাফট, ফ্রান্স থেকে এয়ার রাডার, ইটালি থেকে মানববিহীন ড্রোন এবং জার্মানি থেকে প্রশিক্ষণ বিমান।

বাংলাদেশ তো বলছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক শক্তি কি সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে? কোন কোন দেশ থেকে মূলত অস্ত্র কেনে বাংলাদেশ? ২০১৮-২০২২ চীনই ছিল বাংলাদেশের সবথেকে বড় অস্ত্র আমদানি করার সোর্স। এই কবছরে প্রায় ৭৪ শতাংশ অস্ত্র বাংলাদেশ বেজিং থেকে কিনেছিল। এছাড়াও ভারত, সৌদি আরব, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন। তবে মেইড ইন চায়না অস্ত্র কিনে বেজায় বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। ২০২২ সালের রিপোর্ট বলছে চীনের থেকে কেনা অস্ত্রে নিত্য নতুন সমস্যা দেখা দেওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণে জলের মতো টাকা খরচ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের। বিরক্ত বাংলাদেশের নৌসেনা এই নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠায় ঢাকায়। অবিলম্বে ওই সব অস্ত্রের বড় অংশই বাতিল করার অনুমতিও চান নৌসেনা কর্তারা। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে অস্ত্র কেনার ব্যাপারে
ভারতের উপর নির্ভরশীল হওয়ার জন্য পরামর্শও দেন তারা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি অস্ত্র বিক্রি করে না বাংলাদেশকে? সেটা বলার আগে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের কামানের সংখ্যাটা জেনে নিন।

যেমন কামানের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সামরিক বাহিনীর কাছে দুই হাজারেরও বেশি কামান আছে। যার মধ্যে ২১৫টি স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে ৪৬৪টি কামান রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে মাত্র ২৭টি। এছাড়া মোবাইল রকেট প্রজেক্টরের সংখ্যাতেও মিয়ানমারের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

মোবাইল রকেট প্রজেক্টর কি? মোবাইল রকেট প্রজেক্টর হচ্ছে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সামরিক অস্ত্র।
যেটি দিয়ে এক সাথে কয়েকটি রকেট বোমা নিক্ষেপ করা যায়। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে ৫৮০টিরও বেশি রকেট প্রজেক্টর রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে মাত্র ৭১টি। তবে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে
গত পাঁচ বছরে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম ও মানববিহীন ড্রোনসহ অন্তত ২৩ ধরনের নতুন আধুনিক প্রযুক্তির যুদ্ধ সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। চীন, তুরস্ক সহ ১২টা দেশ থেকে এই অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

গত কয়েকবছরে শোনা গিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অস্ত্র কেনার জন্য উত্সাহিত করছে, তবে
এতে বাংলাদেশের দিক থেকে ডিল করাটা খুব সহজ নয়। কারণ দাম বেশি হলেও ভালো মানের সমরাস্ত্র বিক্রি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের সমরাস্ত্র কিনতে গেলে অনেক শর্ত মেনে চলতে হয়। এ ছাড়া জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্টে (জিসোমিয়া) সই করতে হয়। আবার তুলনামূলক সস্তায় রাশিয়া থেকেও ভালো সমারস্ত্র কেনা সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা বরাবর থেকেই যায়। এক্ষেত্রে জানা গিয়েছিল, অস্ত্র বিক্রি করলেও টেকনোলজি ট্রান্সফার করা যাবে না। এমন শর্ত বাংলাদেশকে দেয় অস্ত্র বিক্রেতা দেশগুলো। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বেশি কড়াকড়ি করে।

এ তো গেল স্থল আকাশের কথা মানে মিলিটারি ও এয়ারফোর্সের সঙ্গে
বাংলাদেশের নৌসেনা, তাদের শক্তি আসলে কি কথা বলছে। নৌ-শক্তিতেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে মিয়ানমার। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের হিসেবে, দেশটির নৌ-বাহিনীর কাছে
বিভিন্ন ধরনের মোট ৩৬২টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে যুদ্ধজাহাজ রয়েছ ১৯০টি। এক্ষেত্রে ফ্রিগেট ও কর্ভেটের মতো যুদ্ধজাহাজের সংখ্যায় মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ছয়টি ফ্রিগেট থাকলেও বাংলাদেশের রয়েছে সাতটি। ইটালি থেকে ইউটিলিটি হেলিকপ্টার এনেছে নৌবাহিনী এবং কানাডা থেকে এসেছে অবকাঠামোসহ স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সিস্টেম।

জানা যাচ্ছে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর জন্য এসব যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়েছে। মূলত ফোর্সেস গোল-২০৩০ কর্মসূচি গ্রহণের পর। তবে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ত এখনই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে এমন কোনো আশঙ্কা দেখছেন না বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বাকি কোন দিকে পরিস্থিতি এগোয় সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে প্রথম কলকাতার।

https://fb.watch/qlFt-lllCk/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version