বাংলাদেশে উপচে পড়ছে এতো দামী সম্পদ। হাওর- সোনাদিয়ায় কীসের মোহ ? ছেয়ে যাচ্ছে হুহু করে

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্রে উপচে পড়ছে শীতের সম্পদ।
মঙ্গোলিয়া, চীন, তিব্বত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে কী ঢুকছে ওপার বাংলায়? কী আছে বাংলাদেশে? হাওর-সোনাদিয়ার মাটিতেই লুকিয়ে আসল রহস্য? না দেখলে নিজের চোখকে বিশ্বাস হবেনা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে ছেয়ে যায় গোটা দেশে। লক্ষ লক্ষ এই সম্পদকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। তেল, গ্যাস, সোনা, হীরের থেকেও মূল্যবান। বাংলাদেশের মাটিতে এভাবেই বেড়ে চলেছে প্রাকৃতিক সম্পদ। যেমন শীতের শুরুতে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র অঢেল সম্পদে ভরিয়ে দেয় ওপার বাংলা কে। ব্রহ্মপুত্র নদের বুকেই তো চকোয়া পাখির মেলা বসে। সেখানে গেলেই দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে চকোয়া পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। শুধু কি তাই? এটাই তো মোক্ষম সময়। এই সময়েই বাংলাদেশ ছেয়ে যায় রং বেরঙের নানান রকম পরিযায়ী পাখিতে। পাখিগুলোর জন্য জলাশয়গুলোতে অন্য রকমের এক সৌন্দর্য তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও পাখিরা পৌঁছে যায় বাংলাদেশে। কীসের টানে? কীসের মোহয় সেই কতদূর থেকে এতো পথ পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখি আসে ভারত-বাংলাদেশে?

বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, পাখিগুলো যেখান থেকে ভারত বাংলাদেশে আসে সেখানে শীতে বরফে সব ঢেকে যায়, খাদ্য সংকট তৈরি হয়। তাই বেঁচে থাকার একটি উপযোগী এলাকা খুঁজতে খুঁজতেই কিছু পাখি অঞ্চলে আসে। মার্চের শেষে যখন ভারত বাংলাদেশে গরম পড়তে শুরু করে, শীতপ্রধান এলাকায় বরফ গলা শুরু হয় তখন আবার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পাখিগুলো নিজ এলাকায় ফেরত যায়। এক সময় ধারণা ছিলো রাশিয়া ও সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখিগুলো ভারত বাংলাদেশের দিকে চলে আসে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন উত্তর মঙ্গোলিয়া, তিব্বতের একটি অংশ, চীনের কিছু অঞ্চল, রাশিয়া ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে পৌঁছায় পাখিরা। অর্থাৎ উত্তর মেরু, ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু এলাকা, হিমালয় পর্বতমালার আশে পাশের এলাকা থেকেই পাখিগুলো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভারত বাংলাদেশে পৌঁছায়। যেখানে তুলনামূলক কম ঠাণ্ডা পড়ে অথচ পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যায়।

কারণটা বুঝতে হবে বাংলাদেশে শীতের সময়ে জলাশয়গুলোতে জল কমে যায়। পাখিদের প্রিয় খাবার কচি পাতা, শামুক, ঝিনুক এসব সহজেই পাওয়া যায়। এতে পরিযায়ী পাখিদের জীবনধারণে সুবিধা হয়। তবে শুধু খাবার নয়। অতিথি পাখি যেন নিরাপদে বাংলাদেশে থাকতে পারে সেইজন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে শেখ হাসিনার দেশে। পাখি শিকার বা হত্যাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ধীরে ধীরে পাখিদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে ওপার বাংলা।মোদ্দা কথা, অতিথি পাখিগুলোর জন্য বাংলাদেশ বিরাট বড় সেফজোন। সেটাও কিন্তু একদিনে নয়। জানিয়ে রাখি ১৯৯৪ সালে ৮ লাখের বেশি অতিথি পাখি পৌঁছে গেছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা নেমে আসে ২ লাখের নীচে। অর্থাৎ গত ২০ বছরে প্রায় ছয় লাখ পাখি আসা কমে গেছে। যদিও এখন সেই সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখের আশেপাশে বলে মত গবেষকদের

কারা ছেয়ে যায় গোটা বাংলাদেশে? হাঁস প্রজাতির প্রায় ৩ লাখের মতো আর সৈকত প্রজাতির ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পাখি বাংলাদেশে পৌঁছায়। এর মধ্যে হাঁস প্রজাতির পাখিগুলো হাওর অঞ্চলে, উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে সোনাদিয়া দ্বীপ, ঢালচর; আর কিছু চরে সৈকত প্রজাতির পাখি দেখা যায়! আবার ইউরোপীয় এলাকা থেকে আসা কিছু লালবুকের ক্লাইক্যাসার পাখিও দেখা যায় কখনো কখনো। আর এই শীতের শুরুতেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চকোয়া পাখিগুলো উড়ে যায়। সেখানে অভয়ারণ্য তৈরি করে। এতো এতো চকোয়া পাখি ওই অঞ্চলের ঐতিহ্য বাড়িয়েছে, বিশ্বাস করেন স্থানীয় মানুষ না বাংলাদেশে পাখিদের গায়ে কেউ হাত দেয়না। কয়েকবছর আগেও কিছু শিকারি চরে গিয়ে চকোয়া পাখি শিকার করতেন।স্থানীয়দের বাঁধার কারণে তারা এখন পাখি শিকার করে না। এটাই বাংলাদেশ। যেখানে পাখিদের সঙ্গে মিশে যায় মানুষের ভালবাসা। শীতের মরসুমে এইসব পাখি মায়ায় বাঁধে দেশটাকে। তাই, শীত শেষে যাবার বেলায় মন খারাপ করে বাংলাদেশ।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version