বাবা রুদ্রদেবের মন্দিরে মড়ার খুলির নাচ! কোথায় রয়েছে এই প্রাচীন বিশ্বাস?

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাবা রুদ্র দেবের মন্দিরে মড়ার খুলির নাচ। প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো রীতি। গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে এখনও রয়েছে প্রাচীন বিশ্বাস। মহাদেবের আরাধনায় জীবিত – মৃত এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। মৃতদেহের সঙ্গে পালন করা হয় নানা নিয়ম। মড়ার খুলি নিয়ে চলছে নাচ, হাজার হাজার হাজার মানুষ সেই নাচ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন। এই দৃশ্য গ্রামবাংলার। কেন মানা হয় এরকম অদ্ভুত নিয়ম? মহাদেবের আরাধনা সবজ নয়। মড়ার খুলি নিয়ে নাচ। মৃতদেহের সাথে উৎসব পালন করাই রীতি। আপনি ভাবছেন এমনটা আবার হয় নাকি? প্রতিবছর মুর্শিদাবাদের কান্দির রুদ্রদেবের মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তরা জড়ো হন শুধুমাত্র নরকরোটি গলায়‌ গাজনের নাচ দেখতে। গোটা বছর নয়, আপনাকে এই ভয়ঙ্কর নাচ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে গাজন উৎসব পর্যন্ত।

প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন উৎসব। শিব ভক্তরা মড়ার মাথার খুলি নিয়ে নাচ শুরু করে দেন মুর্শিদাবাদের কান্দির বাবা রুদ্র দেবের মন্দিরে। এই উৎসব প্রধান আকর্ষণ মন্দির থেকে রুদ্র দেবকে পালকিতে করে একদিনের জন্য কান্দি শহর পরিক্রমা করে রেখে আসা হয় হোমতলা। শুধু স্থানীয়রা নন, বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান শুধুমাত্র বাবা রুদ্র দেবের গাজন উৎসব দেখবেন বলে। এই গাজন উৎসবে সন্ন্যাসীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ তারাই মূল দায়িত্ব পালন করেন। গাজনে সন্ন্যাসীরা চৈত্র মাসে তাদের শরীরকে বিভিন্নভাবে যন্ত্রণা দিয়ে তাদের ইষ্ট দেবতার আরাধনা করেন। গাজনের সময় গেলে দেখতে পাবেন মন্দির চত্বরে গা গলানোর জায়গা নেই। ভিড়ে থিকথিক করছে প্রাঙ্গণ। কম বেশি প্রত্যেকেই মুখে সিঁদুর মেখেছেন। শরীরের বিভিন্ন অংশে রয়েছে কালো কালো ছোপ। সাজ যেন ভয়ানক বাজনার তালে তালে চলে, শিব নৃত্য। একে অনেকে বলেন কড়ি বোলান বা পড়ি বোলান। শুধু মরার খুলি নিয়ে নাচ নয় পাশাপাশি নানা ধরনের নাচের আয়োজন হয়।

সারা বছর কান্দির বাসিন্দারা একটা একটা করে দিন গোনেন এই প্রাচীন গাজন উৎসবের জন্য। মহাদেবের আর্শীবাদে মনোস্কামনা পূরণের আশায় ছুটে আসেন বহু মানুষ। এই উৎসব উপলক্ষে বহু শিব ভক্ত সন্ন্যাসী হন। কেউ বা ব্রহ্মচারী হিসেবে সন্ন্যাস ব্রত পালন করেন এক সপ্তাহ, কেউ ১৫ দিন, আবার কেউ টানা এক মাস। গাজনের ১৯ দিন আগে থেকে মন্দির প্রাঙ্গণ উৎসবে মেতে ওঠে। মৃতদেহের খুলি নিয়ে নাচের পাশাপাশি ভক্তরা সঙ সেজে নাচ করেন বাবা রুদ্রদেবের সামনে। এছাড়াও শিবের নানা লৌকিক ছড়া আবৃত্তি ও গান করা হয় যারা নাচ করেন তাদের দল এক একটি ভাগে বিভক্ত তাদের সব অদ্ভুত নাম যেমন ধুপসেন, লাউসেন, কলকেপাতা, মায়ের পাতা, চামুণ্ডে পাতা। এখানে জৈষ্ঠ মাসেও মনসার গাজন আয়োজন করা হয়। যেখানে বহু মহিলা সন্ন্যাসী হিসেবে অংশ নেন। উৎসবের দিন মন্দিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য মোতায়েন থাকে পুলিশবাহিনী। কান্দি শহরের বিভিন্ন সাধারন মানুষ ও ভক্তরাই এই রুদ্রদেবের গাজন উৎসব উদযাপন করার মূল কান্ডারীর দায়িত্ব পালন করেন। গাজন উৎসবকে কেন্দ্র করে কান্দি শহরে সাজ সাজ রব উঠে প্রতি বছরই।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version