।। প্রথম কলকাতা ।।
লোকে বলছে কারার ওই লৌহকপাট এক্কেবারে বদল করে দিয়েছেন রহমান, আরেকদল প্রশ্ন তুলে বলছে আপত্তি কিসের! তাঁরা কি জানেন কেন এই গানটি লিখেছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম ? কবির বিদ্রোহের ভাষা মেনে নিতে পারেনি ব্রিটিশরা। জেলবন্দি নজরুলকে চরম অত্যাচার করা হত। সেই বিদ্রোহী কবির আত্মত্যাগ নিয়ে কটা মানুষ জানে বলুন তো! রাগে অপমানে অনশন শুরু করেছিলেন মুখে খাবার তোলো! কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এক জেল থেকে আরেক জেল চোর, ডাকাত পকেটমারদের মতো একই ব্যবহার করা হত তাঁর সাথেও। তবুও কবিকে থামানো যায়নি। অন্ধকার কুঠুরিতে দুই হাতে হাতকড়া কবি সেলের লোহার গরাদের সঙ্গে ঘা দিয়ে দিয়ে বাজিয়ে গান গাইতেন কারার ঐ লৌহ কপাট। এই গানের জন্য কাজি নজরুলকে আর কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে? সেই গান নিয়ে যখন এত হইচই তাহলে শুনুন কারার ঐ লৌহ কপাটের মধ্যে বন্দি কাজি নজরুলের বিদ্রোহের গল্প।
১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাস, গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের জন্য বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী তখন ইংরেজদের হাতে বন্দি। ওই বছরই জেলে যেতে হয় চিত্তরঞ্জনকেও। কবি নজরুল ভাঙার গান লিখেছিলেন চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে। ১৯২২ সালের ২০ জানুয়ারি কবিতা হিসাবে প্রকাশিত হয় ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। পরে নাকি হুগলির জেলে দেশবন্ধু ও অন্যান্য বন্দিরা একসঙ্গে এই গান গাইতেনও। গানের কথা, জেল বন্দিদের মধ্যে তার প্রভাব দেখে সুবিধের লাগেনি ব্রিটিশদের। সরকার বিরোধী প্রচারের জন্য কবিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তড়িঘড়ি ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করে এই গানটি। এরপর কারাদণ্ডের মেয়াদ আরও বাড়ে। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে গেলেও সেখান থেকে পাঠানো হয়েছিল আলিপুর জেলে। এরপর সেখান থেকে কবিকে পাঠানো হয়েছিল হুগলির জেলে।
অমানবিক অত্যাচার চলত। বন্ধ করা হয়েছিল ভাত পরিবর্তে ফ্যান খেতে দেওয়া হত। তরকারির জায়গায় তরকারির খোসা পেতেন। একদিন মাছ ও একদিন মাংসের ব্যবস্থা থাকলেও কয়েদীরা কাঁটা ও হাড় ছাড়া কিছুই পেতেন না। হুগলির জেল তখন কুখ্যাত চোর, ডাকাতদের জায়গা ছিল। তাদের সাথেই থাকতেন কবি। হুগলী জেলের সাধারণ কয়েদীরা তাঁর ভক্ত হয়ে উঠলেন। জেলের মধ্যে মধ্যে নজরুল ইসলাম ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটা গাইতেন। তখন যোগ দিতেন সাধারণ কয়েদীরাও। ছয় ফুট বাই চার ফুট ঘরের মধ্যে কবিকে দীর্ঘদিন ধরে থাকতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে মৃত্যু যন্ত্রণা। তবুও কারার ঐ লৌহ কপাট গান গেয়ে শক্তি জুগিয়েছেন নিজেকে।
১০০ বছরের বেশি আগে এই গান রচনা করেছিলেন বাঙালি কবি নজরুল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ভাঙার গান। বন্দীদের সাহস জোগাতো। সেই গানেরই আচমকাই সুর বদল। অনেকেই বলছেন নজরুল গীতিতে তো কখনওই তেমন বিধি নিষেধ ছিল না। তা বলে যা খুশি তাই! আপনার কী মত।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম