পায়ে বারোটা আঙুল, তীব্র যন্ত্রণা! স্বপ্নার জেদের কাছে হার মানলো সবকিছু, জিতল মেডেল

।। প্রথম কলকাতা ।।

পায়ে বারোটা আঙুল, পিঠে তীব্র যন্ত্রণা। নেই কোন মানানসই জুতো। বেশি হাঁটলে বা দৌড়ালে কষ্টের শেষ থাকে না। আর সেই মেয়েই দৌড়ে ভারতের জন্য আনল মেডেল। দুর্ধর্ষ গতিতে পার করল হার্ডল। বাংলার এই মেয়ের অদম্য জেদ আর মনোবল যেন সবকিছুর উর্ধ্বে। এই মেয়ের কাছে ‘ না ‘ শব্দটা বড্ড কঠিন। এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে হেপটাথলনে রুপো জিতলেন স্বপ্না বর্মন। গর্বিত গোটা দেশ।

পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির ছোট্ট একটা গ্রামে থাকেন স্বপ্না। কিন্তু স্বপ্ন অনেক বড়। তার স্বপ্ন পূরণের গল্পটা ভীষণ মর্মস্পর্শী। প্রতিভা রয়েছে,কিন্তু সামনে এক পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতা। সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে সোনার মেয়ে আজ দেশের জন্য মেডেল আনছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তিনি হারিয়ে দিয়েছেন। পায়ে বারোটা আঙুল। রিকশাচালক বাবা তার জন্য মানানসই জুতো যোগাড় করতে পারেননি ঠিকই, তবে মেয়েকে মন ভরে আশীর্বাদ করেছেন। মনে সাহস জুগিয়েছেন। সাধারণ জুতো পড়েই স্বপ্না দৌড় প্র্যাকটিস করেতেন। পরে ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা তার জন্য বিশেষ জুতো বানিয়ে দেয়। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন স্বপ্নার দৌড় শুরু। স্বপ্নের জাল বোনা শুরু করেছিলেন টিনের ছাদ দেওয়া মাটির ঘরে। ফুটবল কাবাডি থেকে নেমে পড়েন ট্র্যাকে। তারপর স্কুল, জেলা, রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের দরবারে দেখাচ্ছেন নিজের কামাল। ২৬ বছরের স্বপ্না বর্মনের পিঠের অবস্থা বেশ খারাপ। প্রচণ্ড ব্যথা। একপায়ে ভর করে সিঁড়িবে উঠতে পারতেন না, তা বলে প্রায় হাল ছাড়েননি। লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিলেন, যাই হয়ে যাক এশিয়ান গেমসে নিজের সেরাটা দেবেন।

চোটের কারণে বহুদিন ট্র্যাকের বাইরে ছিলেন। এবার ফিরলেন নতুন রূপে। একেবারে রুপোর মেডেল নিয়ে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে আয়োজিত এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে মহিলাদের হেপটাথলনে ৫৮৪০ পয়েন্ট পেয়ে তিনি রূপো জিতেছেন। টানা তিনবার এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার নজির গড়লেন। পাঁচ বছর আগে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে তিনি সোনা জিতে ছিলেন। ২০১৭ এশিয়া মিটে জিতে সোনা আর ২০১৯ এ রুপো জিতেছিলেন। অথচ এই মেয়েই এক বছর আগে ভাবছিলেন যে অবসর নেবেন। একের পর এক শারীরিক বাধা যেন তার সঙ্গ দিচ্ছিল না। তার পায়ে যে ছটা আঙুলের সমস্যাটাকে তিনি সমস্যা বলে মনেই করেন না।

স্বপ্না বর্মন প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। দেখিয়ে দিয়েছেন, এখনো অনেক কিছু করতে পারেন। একেই বলে প্রত্যাবর্তন। এভাবেও ফিরে আসা যায়। স্বপ্নই মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। জীবনের সাথে লড়াই করে এই উঠে আসা এক স্বপ্নের নাম স্বপ্না বর্মন।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version