Aindrila sharma death: লড়াই শেষ, ঐন্দ্রিলার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ টলিউড

।। প্রথম কলকাতা ।‌।

লড়াই চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতা হল না। চলে গেলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। দু-দু’বার মারণ রোগ ক্যনসার থাবা বসিয়েছিল তাঁর শরীরে। দু’বারই ক্যানসারকে নকআউট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকের কাছে হার মানতে হল। অস্ত্রপচার হয়েছিল মস্তিষ্কে। সবাই আশা করেছিলেন, এবারও ফিরে আসবেন ঐন্দ্রিলা।  কিন্তু হল না।

বার বার হার্ট অ্যাটাকের ছোবলে চির নিন্দ্রার দেশে চলে গেলেন বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে বাংলা টেলিভিশনের জগতে নিজের অভিনয় সফর শুরু করেন ঐন্দ্রিলা। ‘জীবন জ্যোতি’ ধারাবাহিকেও মুখ্য চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ‘জিয়ন কাঠি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তুলির ভূমিকায়। বহুদিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। একবার নয় দু-দু’বার মারণ রোগ থাবা বসিয়েছে তাঁর শরীরে। দু’বারই ক্যানসারকে হার মানিয়েছেন অভিনেত্রী। শেষ পর্যন্ত কোমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন না তিনি।

অথচ সুস্থ হয়ে ফের কাজ শুরু করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। সব্যসাচী ও তাঁর বেশ সুন্দর সময় কাটছিল। কিন্তু ফের ব্রেন স্ট্রোক সব থামিয়ে দিল। পয়লা নভেম্বরের রাতে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। রাতেই হয় অস্ত্রপচার। তারপর থেকে ভেন্টিলেশনে ছিলেন অভিনেত্রী। শনিবার রাতে বার বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। শরীরে লড়াইয়ের আর কোনও শক্তিই যেন অবশিষ্ট ছিল না। মৃত্যুর সঙ্গে তীব্র পাঞ্জা লড়ে চিরবিদায় নিলেন তিনি।

গোটা এই সময়টায় ঐন্দ্রিলার ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী। ‘মেয়েটা লড়ে যাচ্ছে, সাথে লড়ছে একটা গোটা হাসপাতাল। নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। এর অন্যথা কিছু হবে না’, ফেসবুকে লিখেছিলেন তিনি। তা আর হল না। তরুণ অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ টলিউড। অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পুজো করতে বললেই ওর মুখ ভেসে উঠতাম। দু দুবার ক্যান্সারকে হারিয়ে ফিরে এসেছে। এবারও জিতবে আশা ছিল। কিন্তু তা আর হল না।

জিয়নকাঠিতে তাঁর বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভরত কল৷ আজ পর্দার মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন অভিনেতা৷ সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন,ভেবেছিলাম ফিরে আসবে ঐন্দ্রিলা৷ ওর থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল৷ মা-বাবাকে খুব ভালবাসত৷ বাবা মেয়ের অমন সুন্দর সম্পর্ক খুব কম হয়৷ রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতা ছিল৷ এত অসুখ, তাকে দেখে বোঝাই যায়নি৷ আর সব্যসাচীর কথা না বললে তো সবটাই অসম্পূর্ণ৷ সবাই, গোটা ইন্ডাস্ট্রি প্রার্থনা করেছে মেয়েটার জন্য৷ ঐন্দ্রিলার মা, বাবা, সব্যসাচী যেন শক্তিটা পায়৷ যারা ক্যানসার পেশেন্ট তাঁরা বোঝেন এর কষ্টটা৷

নিজের ফেসবুক পেজ থেকে শোক প্রকাশ করেলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শোক প্রকাশ করে অভিনেতা লিখেছেন, ‘ভাল থেকো ঐন্দ্রিলা…তোমার ইচ্ছেশক্তি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক…।’

অভিনেতা কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘ঐন্দ্রিলা মানেই সব্যসাচী। আমি একবারই জীবনে দেখা করেছি। আমি যখন আমার লড়াই লড়তে যাচ্ছিলাম, তখন ওকে একবার জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম.. ও কোথাও সাহস জুগিয়েছিল আমার লড়াইটা লড়ার জন্য। সব্যসাচীকে অসম্ভব ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম, এইভাবে আঁকড়ে ধরা যায় বলে। আমি আসলে এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। ওই বিশ্বাস করে নিতে হবে, তবে ওই হাসিটা থেকে যাবে কোথাও মনের মধ্যে, লড়তে হবে ওই মনোবলটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি এখনও অবধি ধাতস্ত নই এই খবরটা নিয়ে। ভেবেছিলাম এই লড়াইটাও জিতে যাবে। প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করতাম। ‘

অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একটা বাচ্চা মেয়ে, বছর ২৪-এর মেয়েটা, দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, খুব খারাপ লাগছে। কিছুদিন একটা দোলাচলে ছিলাম। কালকেও সব্যসাচীর সঙ্গে, জিতুর সঙ্গে কথা হয়েছে। বাঁচার খুব ইচ্ছে ছিল, তার জন্য তো বারবার ফিরে আসছিল। এত মানুষের চাওয়া, প্রার্থনা, ইচ্ছে পূরণ হতে দিল না। ‘

অভিনেতা জয় মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ঐন্দ্রিলা শর্মার সঙ্গে। জিয়ন কাঠি সিরিয়ালের মুখ্য চরিত্র ছিলেন ঐন্দ্রিলা-জয়। সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন জয়। তাঁর কথায়,’ তিনি জন্ম থেকেই স্টার ছিলেন। একশো দিনের বেশি একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। এর আগেও তো শরীর খারাপ হয়েছিল, ফিরে এসেছিলেন তিনি। এইবার আর আমাদের মধ্যে নেই, ভাবতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে।’

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version