Narayan Debnath: ইলাস্ট্রেটর হিসেবে জীবন শুরু করেছিলেন, প্রয়াণ দিবসে স্মরণে নারায়ণ দেবনাথ

।। প্রথম কলকাতা ।।

Narayan Debnath: ‘হাঁদা ভোঁদা’, ‘নন্টে ফন্টে’ এগুলো একটা জেনারেশনের ছোটবেলায় নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। এখনকার মতো সে সময় মোবাইল ফোন গুরুত্ব পায়নি। ছোটবেলাকে মধুর স্মৃতিতে ভুলিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে এগুলোই। আর সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নারায়ণ দেবনাথ। বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ও কমিকসের স্রষ্ঠা নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫-এর ২৫ নভেম্বর।

তাঁর আদি বাসস্থান ছিল বাংলাদেশের বিক্রমপুরে। কিন্তু তিনি জন্মেছেন হাওড়ার শিবপুরে। পিতা হেমচন্দ্র দেবনাথ ও মা রমণসোনা দেবী। পরিবারের স্বর্ণের ব্যবসা ছিল, কিন্তু সেদিকে কোনও ঝোঁক ছিল না নারায়ণ বাবুর। ছেলেবেলা থেকেই আঁকার প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করেছেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করেন। যদিও ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কিছু বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য কাজ করেছিলেন এবং সিনেমার স্লাইড তৈরির কাজ করেন। আর এসবের মাঝেই শুরু করেন অনুবাদমূলক লেখা। কালিদাসের লেখা ত্রিবেণীর বাংলা অলংকরণ করেন। এরপর হাতে আসে ‘শুকতারা’ পত্রিকা। জানতে পারেন, এই পত্রিকার প্রকাশনার সংস্থা ‘দেব সাহিত্য কুটির’। এর পর ১৯৫০ থেকে ‘শুকতারা’য় কাজ শুরু করেন।

১৯৫০-এর মাঝামাঝিতে কাজ শুরু করেন ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র আনন্দমেলাতে। ১৯৬২-তে ‘হাঁদা ভোঁদা’র কমিকস করেন। সেই সময় বাংলা কমিকস বলতে ছিল প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী বা কাফি খাঁ’র আঁকা ‘শেয়াল পণ্ডিত’। যা প্রকাশিত হত যুগান্তরে। এরপর ‘হাঁদা ভোঁদা’ প্রকাশিত হতেই পাঠকদের নজর যায় সেদিকে‌। নারায়ণ দেবনাথের প্রথম রঙিন কমিক স্ট্রিপ ছিল ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। ১৯৬৫-তে তাঁর এই গ্রেটার সৃষ্টি। কলকাতার কলেজস্ট্রিট থেকে ফেরার পথে তিনি বাঁটুলের চরিত্রটির কল্পনা করেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর প্রতিকৃত এঁকে ফেলেন। ১৯৬৯ সালে তৈরি করেন ‘নন্টে ফন্টে’। এদিকে ‘কিশোর ভারতী’তে তৈরি করেন ‘ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ’ কমিকস। এছাড়া ‘বাহাদুর বেড়াল’, ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়’, ‘পেটুক মাস্টার বটুকলাল’, ‘ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু’র মতো একাধিক কমিক তৈরি করেছেন তিনি। সিরিয়াস গল্পের পাশাপাশি মজার ছবি আঁকতেন খুবই ভালো। ৩০-৪০-এর দশকে আঁকার খুব বেশি বইপত্র না থাকলেও, পড়াশুনা করেছিলেন পেন্টিং নিয়ে।

এক কথায় বাংলা চিত্রকাহিনী বা কমিকসের প্রাণপুরুষ তিনি। গেল বছরের আজকের দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। দক্ষিণ কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বেশ কয়েকদিন। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন কয়েক বছর ধরে। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল শিল্পীকে। তিনি ভারতের প্রথম এবং একমাত্র কমিকস শিল্পী যিনি ডি.লট পেয়েছেন। ২০২১-এ পদ্মশ্রী প্রদান করা হয় তাঁকে। ২০২২-এর ১৮ জানুয়ারি রঙিন শৈশবের ফেরিওয়ালার গাড়ি থেমে যায়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version